অক্টোবর মাসে টিউনিশিয়া থেকে নৌকায় করে বাবা-মা ছাড়া ইটালি পৌঁছেছিল চার বছর বয়সি এক শিশুকন্যা৷ তাকে বৃহস্পতিবার নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ইটালির সিসিলির এক বিচারক রায় দিয়েছেন, টিউনিশিয়া কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তাকে নিজের দেশে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত৷
টিউনিশিয়ার পরিবার মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সে দেশের একজন শিশু সুরক্ষা প্রতিনিধি বাড়ি ফেরার পথে শিশুকন্যাটির সঙ্গে ছিলেন৷ টিউনিশ-কার্থেজ বিমানবন্দরে পৌঁছে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷
এর আগে গত সোমবার সিসিলির বিচারক প্রত্যাবাসনের অনুমোদন দিয়েছিলেন৷
কর্তৃপক্ষ মেয়েটিকে লিন্ডা নামে উল্লেখ করেছে৷ এক মাস আগে বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল শিশুটি৷ বাবা-মা লিন্ডার সাত বছর বয়সি ভাইয়ের সঙ্গে সপরিবারে টিউনিশিয়া ছেড়ে ইউরোপে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন৷ ইটালির লাম্পেদুসায় পৌঁছানোর আশায় উপকূলীয় শহর সায়াদা থেকে অস্থায়ী নৌকায় উঠতে যাচ্ছিলেন, সেইসময় তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন৷
টিউনিশিয়ান ফোরাম ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রাইটসের (এফটিডিইএস) পর্যবেক্ষণ বলছে, মেয়েটির বাবা নিজের মেয়েকে নৌকায় চোরাকারবারীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন৷ তার স্ত্রী এবং ছেলে তখন আরো পিছনের সারিতে ছিলেন বলে জানায় টিউনিশিয়ার এই অভিবাসন পর্যবেক্ষণ সংস্থা৷ তারই মধ্যে, নৌকাটি শিশুকন্যাটিকে নিয়েই লাম্পেদুসার দিকে রওনা দেয়৷
লিন্ডা আরো ৭০ জন অভিবাসীর সঙ্গে কাঠের নৌকায় ২৬ ঘণ্টা পরে ১৭ অক্টোবর লাম্পেদুসা দ্বীপে নেমেছিল বলে জানা গিয়েছে৷ নৌকাটিতে মারাত্মক ভিড় ছিল৷ তাকে পালেরমোতে শিশুদের জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ দ্য গার্ডিয়ানের মতে, সেখানে লিন্ডাকে সেভ দ্য চিলড্রেন দ্বারা মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল৷
টিউনিশিয়ার ন্যাশনাল গার্ড সেই সময়ে বলেছিল, ‘‘ওই শিশুর বাবা-মা রাস্তার ধারে বিক্রেতা হিসাবে কাজ করেন৷ অবৈধভাবে সামুদ্রিক সীমানা অতিক্রম করতে একটি চক্রে যোগদান করার সন্দেহে প্রাথমিকভাবে তাদের আটক করা হয়৷’’
পরে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়, কিন্তু তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল৷ ফলে নিজের মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সমস্যায় পড়েন তারা৷
অপ্রাপ্তবয়স্করা একাই ইটালি পৌঁছেছে
এফটিডিইএস-এর মতে, জানুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে প্রায় দু হাজার ৬০০ জন টিউনিশিয়ান নাবালক ইটালিতে পৌঁছেছে৷ এদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি বাবা-মা ছাড়াই ভ্রমণ করছিল৷ তারা এই সময়ে ইটালিতে আসা প্রায় ১৩ হাজার টিউনিশীয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে৷
গভীর অর্থনৈতিক সংকটের কারণে টিউনিশিয়া থেকে অসংখ্য মানুষ ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন৷ সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে৷ এই উপকূল থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লাম্পেদুসার দিকে অনেকেই রওনা হন৷ অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে ইইউ-এর চাপের মুখে কর্তৃপক্ষ নৌকার যাতায়াত বন্ধ করতে হিমশিম খাচ্ছে৷
২৬ অক্টোবর প্রকাশিত এফটিডিইএসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, বছরের শুরু থেকে টিউনিশিয়া থেকে ইটালি যাওয়ার পথে ৫৪৪ জন মারা গিয়েছে বা নিখোঁজ হয়েছে৷
আরকেসি/জেডএইচ