চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জমা হওয়া আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা প্রায় এক লাখে পৌঁছেছে। সিরীয় ও আফগান নাগরিকরা ছাড়াও রেকর্ড সংখ্যক ভারতীয়, বাংলাদেশি ও টিউনিশীয় ইইউতে আশ্রয় আবেদন করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এজেন্সি ফর অ্যাজাইলামের (ইইউএএ) তথ্য অনুসারে, ইউরোপের বাইরে থেকে আসা তৃতীয় দেশের নাগরিকরা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে মোট ৯৮,০০০ আশ্রয় আবেদন জমা করেছেন।
ইইউ’র এই আশ্রয় কর্তৃপক্ষের মতে, “ইইউতে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা এখনও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের পরিসংখ্যানের সাথে ২০০৬ সালের প্রথম দিকের পরিস্থিতির সাদৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সেসময় প্রায় দশ লাখ শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশ করেছিল।”
আরও পড়ুন>>ফ্যাক্টচেক: মানবপাচারকারীরা ইউরোপ নিয়ে যে তিনটি ভুল তথ্য দেন
২০০৫ সালে প্রতি মাসে ১ লাখ ৭৩ হাজার ব্যক্তি ইইউতে আশ্রয় আবেদন করেছিল। বর্তমান পরিস্থিতি এতটা তীব্র না হলেও ইউক্রেনে অব্যাহত যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ইইউতে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের মাসের আশ্রয় আবেদনের পরিসংখ্যানে ১৫,৫০০ আশ্রয়প্রার্থী নিয়ে প্রথমবারের মতো শীর্ষ দেশের তালিকায় এসেছে সিরিয়া। এই সংখ্যা চলতি বছরের আগস্ট মাসের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। ২০১৬ সালের পর এই প্রথম সর্বোচ্চ সংখ্যক সিরীয় আশ্রয়প্রার্থীর নথিভুক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটল।
পড়ুন>>রাষ্ট্র একে অপরকে দোষ দেয়, মারা যায় অভিবাসীরা: জাতিসংঘ
দীর্ঘদিন ধরে তালিকায় প্রথম থাকা আফগানরা ১৩,৭০০ আবেদন নিয়ে আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। ২০২১ সালের শুরু থেকে আফগানিস্তান টানা শীর্ষ আশ্রয়প্রার্থী দেশ হিসেবে অবস্থান করছিল।
আশ্রয় আবেদনকারীদের মধ্যে তৃতীয় সর্বাধিক ৫,৮০০টি আবেদন করেছে তুরস্কের নাগরিকেরা।
অপরদিকে, সেপ্টেম্বর মাসে নথিভুক্ত হওয়া আবেদনকারীদের মধ্যে চার হাজার ছয়শ জন ভারতীয়, তিন হাজার আটশত বাংলাদেশি, তিন হাজার একশত টিউনিশীয়, দুই হাজার ছয়শ জর্জিয়ান, দুই হাজার দুইশ মরোক্কান এবং এক হাজার পাচঁশত মিশরীয় রয়েছে।
আরও পড়ুন>>ইইউ আদালতকে উপেক্ষা করে বাড়ছে সীমান্ত তল্লাশি
এই দেশগুলোর ক্ষেত্রে আবেদনের সংখ্যা রেকর্ড সংখ্যক বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এজেন্সি ফর অ্যাজাইলাম। তবে তালিকায় থাকা কোনো দেশের ক্ষেত্রেই আবেদনের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা যায়নি।
সংস্থাটির ২০২২ সালের আশ্রয় প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ সালে আশ্রয় আবেদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু দেশের ভূরাজনৈতিক ঘটনাও অনেকাংশে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়।
উপরোক্ত দেশগুলোর পরিসংখ্যান ছাড়াও রাশিয়ার নাগরিকদের আশ্রয় আবেদন বৃদ্ধির সংখ্যাও লক্ষ্য করেছে ইইউ কর্তৃপক্ষ। মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের ঘটনা প্রবাহের কারণেই এটি ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত রাশিয়ান নাগরিকেরা ইইউতে এক হাজার ছয়শটি আশ্রয় আবেদন জমা করেছে।
পড়ুন>>বলকান রুটে অভিবাসীদের বিশ্রামের বেলগ্রেড
অপরদিকে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের অভিবাসীদের দাখিল করা আশ্রয়ের আবেদনের হারও সেপ্টেম্বর মাসে বেড়েছে। এটি পাঁচ শতাংশ বেড়ে মোট পাঁচ হাজার তিনশত আবেদনে পৌঁছেছে। যা ২০১৫ সালের পর সর্বোচ্চ সংখ্যক।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসটি আশ্রয়প্রার্থী এবং ইইউ কর্তৃপক্ষ উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাস। কারণ এই মাসে ২০১৬ সালের পর এই প্রথম আশ্রয় আবেদন এবং সিদ্ধান্তের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবধান লক্ষ্য করা গেছে।
ইইউ আশ্রয় কর্তৃপক্ষ সেপ্টেম্বর মাসে ৫৬,৩০০টি আশ্রয় আবেদনের প্রথম সিদ্ধান্ত জারি করার তথ্য দিয়েছে।
অন্যদিকে ইইউ দেশগুলোতে আশ্রয় আবেদনের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বা স্বীকৃতির হার সেপ্টেম্বরে ৩৭ শতাংশে পৌঁছেছে। বিশেষ করে সিরিয়া, ইউক্রেন, ইয়েমেন, বেলারুশ, ইরিত্রিয়ান এবং মালি থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা অধিক সংখ্যায় শরণার্থী মর্যাদা ও অস্থায়ী সুরক্ষা পেয়েছেন।
পড়ুন>>ইউএনএইচসিআরে তহবিল ঘাটতি, বিপর্যয়ের মুখে লাখো মানুষ
তবে রিফিউজি স্ট্যাটাস বা শরণার্থী মর্যাদার চেয়ে সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন বা অস্থায়ী সুরক্ষা পাওয়ার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
এমএইউ/আরআর (ইইউএএ)/(শেঙ্গেন ভিসা ইনফো)