সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরুর পর ২০১৫ সালে জার্মানিতে আট লাখ ৯০ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসী আশ্রয় নিয়েছিল৷  ফাইল ফটো৷ ইউলিয়ান স্ট্রাটেনশুল্ট/ডিপিএ/পিকচার অ্যালায়েন্স
সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরুর পর ২০১৫ সালে জার্মানিতে আট লাখ ৯০ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসী আশ্রয় নিয়েছিল৷ ফাইল ফটো৷ ইউলিয়ান স্ট্রাটেনশুল্ট/ডিপিএ/পিকচার অ্যালায়েন্স

জার্মানিতে ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের সংখ্যা এরইমধ্যে দশ লাখ ছাড়িয়েছে৷ আরো দুই লাখ আশ্রয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন৷ সব মিলিয়ে দেশটিতে শরণার্থী পরিস্থিতি ২০১৫ সালের সংকটকে ছাড়িয়ে গেছে৷

জার্মানির সংবাদপত্র ভেল্ট আম জনটাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর আরো অনেক শরণার্থী জার্মানিতে আশ্রয় চাইবে৷ সব মিলিয়ে জার্মানিতে নতুন শরণার্থীর সংখ্যা হবে ১২ লাখ৷ এই সংখ্যা ২০১৫ সালে আশ্রয় নেওয়া শরণাথীর চেয়ে শতকরা ৩৫ ভাগ বেশি৷ সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরুর পর ২০১৫ সালে জার্মানিতে আট লাখ ৯০ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসী আশ্রয় নিয়েছিল৷  

শুধু ইউক্রেনীয় নয় চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এক লাখ ৮১ হাজার ৬১২ জন সিরীয়, আফগান, তুর্কি এবং ইরাকি নাগরিক জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ 

রাজনীতিবিদদের উদ্বেগ

লাখ লাখ শরণার্থীর আগমনের ফলে তাদের আশ্রয় আবেদন যাচাই বাছাই করতে গিয়ে হিশশিম খাচ্ছে বিভিন্ন শহরের কর্তৃপক্ষ৷ 

পূর্ব জার্মানির রাজ্য স্যাক্সনির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর্মিন সুস্টার বলেন, ‘‘আমাদের এখানে শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে৷’’ তবে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ার কারণে চাপ তৈরি হলেও তিনি কোনো ধরনের 'যদি-কিন্তু' ছাড়াই ইউক্রেনের আশ্রয়প্রার্থীদের পাশে থাকবেন বলে জানান৷  

পড়ুন: আশ্রয় প্রক্রিয়া সহজ করতে জার্মান পার্লামেন্টে আইন পাস

এদিকে জার্মানির আরেক রাজনীতিবিদ ম্যানফ্রেড ভেবার বলেন, জার্মানি ধীরে ধীরে একটি নতুন সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ প্রতিবেশি রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম এবং অস্ট্রিয়াও একই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে৷ 

অর্থনৈতিক সাহায্য বাড়ানোর আহ্বান

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জার্মানির রাজ্য সরকারগুলো চাপ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকটি রাজ্যের কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে এখন শরণার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে৷ এই পরিস্থিতিতে জরুরিভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা দরকার৷    

তবে সরকারের দাবি, পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারগুলোকে সহযোগিতা করা হচ্ছে৷ চলতি বছর বিভিন্ন রাজ্যকে ৩৫০ কোটি ইউরো অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে৷ আসছে বছরে দেয়া হবে ২৭০ কোটি ইউরো৷ 

তবে স্যাক্সনির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুস্টার বলেন, অভিবাসন বিষয়ে জার্মানির নীতি শুধুমাত্র ‘আন্তরিক কথার’ মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না৷ বরং পূর্ব ভূমধ্যসাগর হয়ে শরর্ণাথীদের আসার পথটিতে নজরদারি বাড়াতে হবে৷ 

আরো দেশের সাথে তুরস্কের মতো চুক্তি? 

স্যাক্সনির রাজনীতিবিদ সুস্টার অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে তুরস্কের চুক্তিটিকে সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকটি দেশের সাথে বর্ধিত করার পরামর্শ দেন৷ উল্লেখ্য, চুক্তি অনুসারে তুরস্ককে এখন পর্যন্ত ছয়শ কোটি ইউরোর অর্থ সহযোগিতা প্রদান করেছে ইইউ৷ চুক্তি অনুযায়ী, এই পথ ধরে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে দেশটি৷ 

পড়ুন: ইউক্রেনীয়দের প্রতি আরো সংহতি দেখানোর আহ্বান

এদিকে বহিস্কারের নির্দেশের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বা ডুলডুং নিয়ে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের দীর্ঘমেয়াদে বসবাসের অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি সহজ করতে আইন পাস করেছে জার্মান পার্লামেন্ট৷

বসবাসের অনুমতি পাওয়ার অধিকার বা চান্সেনআউফেন্টহাল্টসরেশ্ট নামে গত শুক্রবার জার্মান পার্লামেন্টে বিলটি পাশ করেছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা৷ 

নিক মার্টিন/আরআর

 

অন্যান্য প্রতিবেদন