গত সপ্তাহান্তে এবং সপ্তাহের শুরুতে ভূমধ্যসাগর থেকে ৮০০ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি ইটালির লাম্পেদুসা উপকূলে দুটি অভিবাসী নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে।
ইউরোপে শীত শুরু হওয়া সত্ত্বেও অভিবাসীদের ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করার প্রচেষ্টা কমছে না। গত সপ্তাহান্তে এবং চলতি সপ্তাহের শুরুতে মানবিক উদ্ধার জাহাজ এবং ইটালীয় কোস্টগার্ড এর সহায়তায় ৮০০ জনেরও বেশি আশ্রয়প্রত্যাশীকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এনজিও অ্যালার্ম ফোন ৬ ডিসেম্বর সকালে জানায়, পূর্ব লিবিয়ার টোব্রুক উপকূল থেকে যাত্রা করা ৪৫০ জন ব্যক্তিকে বহনকারী একটি নৌকাকে ইটালীয় উপকূলরক্ষীরা উদ্ধার করেছে।
সমুদ্রে ঝুঁকিতে থাকা অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা এই এনজিওটি এর আগে সোমবার টুইটারে নৌকাটি সম্পর্কে প্রথম সতর্ক বার্তা দিয়েছিল।
আরও পড়ুন>>অভিবাসন নিয়ে নতুন পরিকল্পনা ইটালির
লিবিয়া থেকে ইউরোপের দিকে যাত্রা করা বেশিরভাগ নৌকা পশ্চিম লিবিয়া থেকে ছেড়ে যায়। তবে এত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে পূর্ব লিবিয়া থাকা যাত্রা করা নৌকার সংখ্যাও নতুন নয়।
এর আগে ইটালীয় উপকূলরক্ষীরা রোববার সন্ধ্যায় ৩২ জনকে বহনকারী একটি ৬ মিটার দীর্ঘ নৌকায় থাকা ব্যক্তিদের উদ্ধারে হস্তক্ষেপ করেছিল এই নৌকাটি ইটালির লাম্পেদুসা পৌঁছানোর আগে ডুবে গিয়েছিল।
পড়ুন>>ইটালি থেকে দেশে ফিরল টিউনিশিয়ার সঙ্গীহীন শিশু
উদ্ধার অভিযানে ২৮ জনকে উদ্ধার করা হলেও চারজন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজদের মধ্যে ছয় বছর এবং ছয় মাস বয়সি দুটি শিশু রয়েছে।
গেল সপ্তাহের শুক্রবার লাম্পেদুসা দ্বীপের কাছে আরও একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। টিউনিশিয়ার স্ফ্যাক্স থেকে ৪০ জন আরোহী নিয়ে লাম্পেদুসার কাছে যাওয়ার সময় নৌকাটি ডুবে যায়। স্থানীয় দৈনিক লা রিপাব্লিকা শনিবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এই নৌকার অধিকাংশ যাত্রীকে উদ্ধার করা গেলেও এখনও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধারের পর একজন যুবক হৃদরোগে আক্রান্তে হয়ে মারাত্মক অসুস্থ হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল।
মধ্য ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার কার্যক্রম
ইটালি উপকূলরক্ষীদের পাশাপাশি সাগরে সক্রিয় দুটি মানবিক উদ্ধার জাহাজও গেল সপ্তাহান্তে মধ্য ভূমধ্যসাগরে উদ্ধারকাজ চালিয়েছে।
আরও পড়ুন>>ইটালির প্রোসিদায় অভিনব অর্কেস্ট্রা
ফরাসি এনজিও এমএসএফের উদ্ধার জাহাজ জিও ব্যারেন্টস ৪ ও ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৬৪ জনকে উদ্ধার করেছে৷
উদ্ধার হওয়া নৌকাগুলোর একটিতে ৯০ জন এবং অন্যটিতে ৭৪ জন অভিবাসন প্রত্যাশী ছিল। অভিবাসীদের মধ্যে মধ্যে নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীও রয়েছে।
অপরদিকে আরেক উদ্ধার জাহাজ লুইস মিশেল রোববার মধ্যাহ্নে একটি স্ফীত নৌকায় থাকা ১০৩ ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
লুইস মিশেলের উদ্ধার অভিযান শুরুর কয়েক ঘন্টা পরে আরেক উদ্ধার জাহাজ হিউম্যানিটি ১ অভিযানে সহায়তা করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল।
তবে সে সময় লিবিয়ার একটি কোস্টগার্ড নৌকা এই দুই মানবিক জাহাজের সদস্যদের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করে জাহাজ কর্তৃপক্ষ।
পড়ুন>>ভূমধ্যসাগরে অভিবাসী পারাপার নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা
তবে লিবিয়ার বাঁধা সত্ত্বেও বেঁচে থাকা ১০৩ জন অভিবাসী লুইস মিশেল জাহাজে উঠেছিল। পরবর্তীতে তাদেরকে হিউম্যানিটি ১ এ স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
লিবিয়ার কোস্ট গার্ড ভূমধ্যসাগরে কাজ করা এনজিওগুলোকে হুমকি দেয়ার ঘটনা এটি প্রথম নয়।
আন্তজার্তিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালের শুরু থেকে ভূমধ্যসাগরে ২,৩০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে।
একই সময়ের মধ্যে লিবিয়ার কোস্ট গার্ড সমুদ্র থেকে ২০,৮০০ জনেরও বেশি লোককে আটক করে উপকূলে ফিরিয়ে এনেছে। তাদের বেশিরভাগই নিয়মিত বিভিন্ন আটক কেন্দ্রে অপব্যবহার এবং সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন।
এমএইউ/এআই