ফ্রান্সের একটি আদালত। ছবি:  উইকিমিড়িয়া সিসি
ফ্রান্সের একটি আদালত। ছবি: উইকিমিড়িয়া সিসি

স্পেন থেকে ফ্রান্সে পাঁচ বাংলাদেশি অনিয়মিত অভিবাসীকে পরিবহনের দায়ে এক ব্যক্তিকে ১৪ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ফ্রান্সের একটি আদালত৷ অভিবাসীরা তাকে পরিবহনের খরচ বাবদ মাংস প্রদান করেছিল বলে আদালতে স্বীকার করেন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি৷

ফরাসি সংবাদ মাধ্যম ফ্রান্সব্লু জানিয়েছে, চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর স্পেন সীমান্তের কাছে অবস্থিত ফরাসি ডিপার্টমেন্ট পিরেনে আটলান্টিক অঞ্চলের লারুন শহর থেকে পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিককে স্পেন থেকে বেআইনিভাবে পরিবহনের দায়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়৷

অনিয়মিত অভিবাসীদের মধ্যে চারজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ছিলেন৷ 

আরও পড়ুন>>স্কর্পিয়ান: ইউরোপের মোস্ট ওয়ান্টেড মানব পাচারকারী

এই ঘটনায় গাড়িচালক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়৷  

বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, স্থানীয় ফরাসি পউ শহরের আদালত উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছে৷ রায়ে অবৈধভাবে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের স্পেন থেকে ফ্রান্সে পরিবহণের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ১৪ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেছে আদালত৷ 

পড়ুন>>ফ্রান্সে অভিবাসী শিবির সফর করায় শিক্ষিকাকে হুমকি

সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্পেনে বসবাস করছিলেন৷ অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে ছিলেন বলে আদালতকে জানান তিনি৷ তার পরিবারকে সাহায্য করার তাগিদ থেকে তিনি মাংসের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিবহনের ঝুকিঁ নিয়েছিলেন৷ 

ঘটনার সূত্রপাত্র কীভাবে হয় সেটি তিনি আদালতের শুনানিতে স্প্যানিশ ভাষায় ব্যাখ্যা করেন৷  

আরও পড়ুন>>চ্যানেলে অভিবাসী ঠেকাতে ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য নতুন চুক্তি

তিনি জানান, তিনি মাদ্রিদে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন৷ একদি তিনি মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ সে সময় একজন গ্রাহক তাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যেতে ডাকেন৷ 

এটি শুনতে পেয়ে মাংসের দোকানের ব্যক্তি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমার কাছে কী গাড়ি আছে? উত্তরে জানাই, হ্যাঁ আমার কাছে একটি সাত আসনের পুজো ৫০৮ মডেলের গাড়ি আছে৷ 

তারপর অন্য একজন ব্যক্তি আমার সাথে আবারও যোগাযোগ করে, এবং ফ্রান্সে কিছু ব্যক্তিকে পরিবহনের প্রস্তাব দেয়৷ প্রস্তাবে তারা আমাকে পরিবহন বাবদ উক্ত মাংসের দোকান থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাংস দেয়ার কথা জানায়৷

পড়ুন>>বাংলাদেশিসহ ২৩০ অভিবাসী নিয়ে ফ্রান্সে ওশান ভাইকিং

শুনানিতে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করে, ‘‘আপনি যখন সকাল ৬টায় পাঁচ জনকে ফ্রান্সে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন কি আপনার মনে কোন প্রশ্নের উদ্রেক করেনি? আপনি একটি বেআইনি কাজ করছেন এমন কিছু কি মনে হয়নি?’’

উত্তর অভিযুক্ত আদালতকে বলেন,

হ্যাঁ, এই প্রশ্ন আমার মাথার এসেছিল৷ কিন্তু আমি আমার পরিবার, অর্থনৈতিক ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন্তা করে রাজি হয়েছিলাম৷

অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবী আদালতকে বলেন, তার মক্কেল একটি নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থায় আছে৷ তিনি বাসাবাড়ি পরিষ্কার এমনকি আবর্জনা তোলার মতো কাজ করতে বাধ্য ছিলেন৷ কারণ তাকে তার বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য প্যারাগুয়েতে অর্থ পাঠাতে হচ্ছিল৷

আইনজীবীর ব্যাখ্যার পরে আদালত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন,

মানবপাচারকারীদের অবশ্যই থামাতে হবে৷ কারণ তারা এমন একটি নেটওয়ার্কের অংশ যা অবৈধ অভিবাসন ব্যবস্থাকে জিইয়ে রাখে৷ অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন দালাল৷



এমএইউ/আরআর (ফ্রান্সব্লু)





 

অন্যান্য প্রতিবেদন