উদ্ধার করা ২৪৮ জন অভিবাসী ও শরণার্থী নিয়ে ইটালি পৌঁছায় জিও ব্যারেন্টস | ছবি: আনসা
উদ্ধার করা ২৪৮ জন অভিবাসী ও শরণার্থী নিয়ে ইটালি পৌঁছায় জিও ব্যারেন্টস | ছবি: আনসা

উদ্ধার জাহাজ জিও ব্যারেন্টস থেকে ১১ ডিসেম্বর ইটালির দক্ষিণাঞ্চলের সালার্নো বন্দরে নামা ২৪৮ অভিবাসীর কেউ কেউ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভ্রমণ করছেন৷ অনেকে যাত্রাপথে প্রিয়জন বা স্বজন হারিয়ে একা হয়ে গেছেন৷ এদের মধ্যে দশবছর বয়সি অভিভাবকহীন এক শিশু এবং ক্যামেরুনের এক তরুণী মা রয়েছেন, যিনি চোখের সামনে সন্তানকে মারা যেতে দেখেছেন৷

গিনি থেকে ইটালি, ভাইয়ের সঙ্গে যাত্রা করে পৌঁছালেন একা

জাহাজ থেকে নামার সময় কন্ড* (ছদ্মনাম)-এর পায়ে ছিল স্যান্ডেল আর মোজা৷ দশ বছর বয়সি এই আশ্রয়প্রত্যাশী গিনির নাগরিক৷ ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) পরিচালিত জিও ব্যারেন্টস জাহাজে থাকা অভিবাসীদের মধ্যে তার বয়স ছিল সবচেয়ে কম৷ একবছর আগে সতের বছর বয়সি বড় ভাইয়ের সঙ্গে যাত্রা শুরু করে সে৷ কারণ তাদের বাবা-মা সন্তানদের জন্য উন্নত ভবিষ্যৎ চাচ্ছিলেন৷

দীর্ঘ যাত্রায় প্রথমে তারা নাইজার ও আলজেরিয়া অতিক্রম করে৷ মরুভূমি পাড়ি দিয়ে দুই ভাই লিবিয়া হয়ে সাগর পথে ইউরোপে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল৷  

কিন্তু লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা তাদের পাকড়াও করে একটি ডিটেনশন সেন্টারে তিন সপ্তাহ আটকে রাখেন৷


তারা সেখান থেকে মুক্ত হওয়ার পর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার জন্য টাকার প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু তাদের বাবা-মা শুধু একজনের খরচ জোগাতে সক্ষম হন৷ তখন কন্ড* কে ফ্রান্সে থাকা আরেক ভাইয়ের কাছে পাঠাতে সম্মত হয় তার ১৭ বছর বয়সি ভাই৷ 

‘‘তাকে যখন আমরা খুঁজে পাই, তখন সে একটি ডিঙ্গি নৌকায় বসে কাঁদছিল, সে ভীত ছিল৷ তবে জাহাজে ওঠার পর সে আর কাঁদেনি৷ জাহাজে সে সবকিছু স্বাধীনভাবে করেছিল,’’ বলেন এক উদ্ধারকারী৷ জাহাজে সবাই তাকে আদর করতো৷ 

জিও ব্যারেন্টস জাহাজ থেকে রোববার নামার সময় কন্ড* এর হাতে এক ব্যাগ খাবারও ছিল৷ কেউ একজন তাকে ফরাসি ভাষায় ‘ইটালিতে স্বাগতম’ বলেন৷ তখন মৃদু হাসি দেয় সে৷ 

দাম্পত্য সহিংসতা থেকে বাঁচতে গিয়ে সন্তান হারালেন মা

স্বামীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে ক্যামেরুন থেকে পালিয়েছিলেন এক তরুণী মা৷ কিন্তু সেই যাত্রায় নিজের কন্যা সন্তানকে হারিয়েছেন তিনি৷ নাইজেরিয়া এবং নাইজার পাড়ি দিয়ে আলজেরিয়া পৌঁছান তিনি৷ সেখানে তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই শিশুটি মারা যায় বলে জানিয়েছে এমএসএফ৷ সন্তান হারানোর বেদনায় সেই নারী এতটা কাতর ছিলেন যে ইটালিতে পৌঁছানোর পরও তার মুখে হাসি ফোটেনি৷ 

জিও ব্যারেন্টসে করে ইটালি পৌঁছেছে একদল দক্ষিণ সুদানি শিশুও৷ তারা যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখেছে৷ একপর্যায়ে সেখানকার একটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে একটু উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে পাড়ি জমায় তারা৷ তাদের কেউ কেউ লিবিয়াতে কারোভোগও করেছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা৷ 

ভূমধ্যসাগরে বিপদে পড়া এসব অভিবাসী ও শরণার্থীদের উদ্ধার করেছে জিও ব্যারেন্টস৷ 

এআই/এফএস

 

অন্যান্য প্রতিবেদন