ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের বিরুদ্ধে লিবিয়ায় অভিবাসীদের অপব্যবহারে সহায়তার অভিযোগ তুলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)৷ আকাশপথে নজরদারি ব্যবস্থার কারণে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা অভিবাসীদের ধরে সেদেশে আবার ফেরত নিয়ে যেতে পারছে বলে জানিয়েছে এইচআরডাব্লিউ৷
‘‘তারা একটি হোস পাইপ ব্যবহার করেছিল৷ তারা আমার সারা শরীরে পিটিয়েছে৷ খাবারের সময় তারা পেটাতো,’’ এইচআরডাব্লিউকে বলেন ইরিত্রিয়ার নাগরিক টেসফে৷ এইচআরডাব্লিউ এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্ল্যাটফর্ম বর্ডার ফরেনসিক্সকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করা প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের একজন তিনি৷ দুই সংস্থার তৈরি করা যৌথ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে গত ১২ ডিসেম্বর৷
টেসফে এবং তার সঙ্গে থাকা আরো কয়েকজন ইরিত্রিয়ান নাগরিককে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকালে আটক করে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা৷ তাদেরকে একেক জনকে তিন সপ্তাহ থেকে কয়েকমাস পর্যন্ত লিবিয়ার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আটকে রাখা হয়৷ সেই কেন্দ্রে তাদেরকে পেটানোসহ নানা নিপীড়ন করা হতো৷
টেসফেরা যখন সমুদ্রে ছিলেন তখন তাদের নৌকার উপর একটি বিমান বা ড্রোনের মতো কিছু একটা বেশ কিছুক্ষণ উড়তে দেখেছিলেন৷ তারপরই লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা সেখানে পৌঁছান৷ অন্যান্য যেসব ভুক্তভোগীর সঙ্গে এইচআরডাব্লিউ কথা বলেছে, তারাও একইরকম পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন৷
ফ্রন্টেক্সের স্বচ্ছতায় ঘাটতি থাকায় এ ধরনের দাবি প্রমাণ করা অবশ্য কঠিন বলে স্বীকার করেছে এইচআরডাব্লিউ এবং বর্ডার ফরেনসিক্স৷ সংস্থা দুইটি ফ্রন্টেক্সের কাছে এই বিষয়ে জানতে চেয়ে যে সীমিত তথ্য পেয়েছে তা থেকে আসলে বিমান বা ড্রোন কখন কোথায় ছিল এবং কী রেকর্ড করেছে তা পরিষ্কারভাবে বোঝা সম্ভব নয়৷
তবে সংস্থা দুইটি বিভিন্ন তথ্য ও বক্তব্যের পর্যালোচনা, ঘটনার বিশ্লেষণ এবং ড্রোন ও বিমান উড়ানের ধরন পরীক্ষা থেকে এই সিদ্ধান্ত পৌঁছেছে যে, আকাশপথে নজরদারির মাধ্যমে অভিবাসীদের ধরতে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের সহায়তা করছে ইইউর সীমান্ত সংস্থা৷
এসব বিমান বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলেও সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ ওয়ারশতে অবস্থিত ফ্রন্টেক্সের প্রধান সদরদপ্তরে পৌঁছায় বলে জানিয়েছে সংস্থা দুইটি৷ আর সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কখন এবং কাকে এই বিষয়ে জানানো হবে৷
ফ্রন্টেক্স অবশ্য বারবার বলেছে যে, আকাশ পথে নজরদারি করা হচ্ছে জীবন বাঁচাতে৷ কিন্তু এইচআরডাব্লিউ ও বর্ডার ফরেনসিক্স অবশ্য তাদের তদন্তের ভিত্তিতে জানাচ্ছে যে ফ্রন্টেক্সের পাওয়া তথ্য লিবিয়ার বাহিনীকে সহায়তা করছে, ঘটনাস্থলে থাকা বেসরকারি উদ্ধার জাহাজ বা বাণিজ্যিক জাহাজ কোনো তথ্য পাচ্ছে না৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়া বিভাগের সহযোগী পরিচালক জুডিথ সান্ডারল্যান্ড বলেন, ‘‘অভিবাসীদের ফেরত নিয়ে নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হবে এবং বিকল্প উপায়ে তাদের উদ্ধার সম্ভব জানা সত্ত্বেও তাদের বহনকারী নৌকার কথা লিবীয় কর্তৃপক্ষকে জানানোর মাধ্যমে অভিবাসীদের অপব্যবহারে সহায়তা করছে ফ্রন্টেক্স৷’’
এআই/এফএস