ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের উদ্ধারে নিয়োজিত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার জাহাজগুলোর জন্য অবশ্যপালনীয় বিধিমালা তৈরি করছে ইটালি৷ মানবিক উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলো বলছে এর ফলে সমুদ্র থেকে অভিবাসীদের উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হবে৷
লিবিয়া, টিউনিশিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়া ইউরোপ অভিমুখী অভিবাসী, শরণার্থীদের প্রধান গন্তব্য ইটালির উপকূলগুলো৷ চলতি বছরে ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ বিপজ্জনক এই পথে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশটিতে পৌঁছান৷ অনুপযুক্ত নৌকায় আসতে গিয়ে যাত্রাপথে প্রায়ই তারা বিপদে পড়েন৷ অনেক সময় তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ বন্দরে পৌঁছে দেয় বেসরকারি বিভিন্ন মানবিক সংস্থার জাহাজগুলো৷
তবে ইটালি অভিমুখী অভিবাসীদের এই স্রোত বন্ধ করতে চায় দেশটির নতুন ডানপন্থি সরকার, যা তাদের নির্বাচনেরও অন্যতম এজেন্ডা ছিল৷ সম্প্রতি মানবিক সংস্থাগুলোর উদ্ধার কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনা করেছে তারা৷ এজন একটি নতুন আইন আনা হচ্ছে বলে গত সপ্তাহে নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ানতেদোসি৷ এর ফলে সমুদ্র থেকে অভিবাসীদের উদ্ধারের পরপরই তাদেরকে বন্দরে নামাতে হবে৷ অর্থাৎ, এখনকার মতো সমুদ্রে ঘুরে অভিবাসী, শরণার্থীদের উদ্ধার বা বড় জাহাজে স্থানান্তর করার সময় পাবেন না তারা৷ এতে উদ্ধারকাজে বেশি সময় লাগার পাশাপাশি খরচ অনেক বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছে এনজিওগুলো৷
এই মাসের মধ্যেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষের কথা জানান পিয়ানতেদোসি৷ বর্তমানে বেসরকারি উদ্ধার জাহাজগুলো পরিচালনার জন্য ২০১৭ সালের একটি বিধি রয়েছে৷ তবে সেটি পালনে সংস্থাগুলোর কোন আইনী বাধ্যবাধকতা নেই, যা নতুন বিধামালার ক্ষেত্রে থাকবে৷

‘আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ’
পিয়ানতেদোসি জানান, নতুন বিধিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো উদ্ধারকারী জাহাজ আর ‘পাচারকারীদের সহযোগী হিসেবে যারা অভিবাসীদের অনুসন্ধান করে’ এই দুইয়ের পার্থক্য স্পষ্ট করা৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময় কিছু বেসরকারি সংস্থার আচরণে মনে হয় প্রকৃত উদ্ধারকাজের বদলে তারা লিবিয়া বা অন্য দেশ থেকে যাত্রা করা অভিবাসীদের ইটালিতে নিয়ে আসতে সংগঠিতভাবে প্রচারকাজ চালাচ্ছে৷’’
পিয়ানতেদোসি দাবি করেন অভিবাসীদের উদ্ধারের পরপরই নিরাপদ বন্দরে নামিয়ে দেয়ার বিধিটি আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ৷ তিনি বলেন এতে অভিবাসীরা প্রয়োজনীয় সেবা পেতেও দেরি হবে না৷
নতুন আইন অনুযায়ী, যেসব এনজিওর অভিবাসীদের উদ্ধারের পরও সমুদ্রে অপেক্ষায় থাকবে তারা ইটালির বন্দরগুলোতে প্রবেশ করতে পারবে না৷ এরপরও যদি তারা ইটালির জলসীমানায় প্রবেশ অব্যাহত রাখে তাহলে জরিমানা, এমনকি জাহাজ জব্দও করা হতে পারে৷
পড়ুন: অভিবাসন নিয়ে নতুন পরিকল্পনা ইটালির
উদ্ধারকারী এনজিওগুলো সতর্কবার্তা
ইটালির এই ঘোষণার পরপরই প্রতিক্রিয়া জানায় জার্মান এনজিও ‘মিশন লাইফলাইন’৷ তাদের উদ্ধারকারী নৌকা রাইজ এবাভ বর্তমানে ভূমধ্যসাগরে রয়েছে৷
গত ১৬ ডিসেম্বর তারা ৬৩ জনকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সি-আই-ফোর নামের একটি বড় জাহাজে স্থানান্তর করে৷ পরের দিন তারা একটি রাবারের ডিঙি থেকে আরো ২৭ জনকে উদ্ধার করে৷ অনুমতি পাওয়ায় তাদেরকে বড় জাহাজে স্থানান্তর না করে দ্রুতই ক্যালাব্রিয়ান বন্দর জইয়া তাউরোতে নামিয়ে দেয় রাইজ এবাভ৷
কিন্তু সাধারণত অভিবাসীদের নামানোর অনুমোদন পেতে দিনের পর দিন জাহাজগুলোকে সমুদ্রে অপেক্ষা করতে হয়৷ নতুন আইনের ফলে কী হতে যাচ্ছে এটি তার একটি ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে৷
এক্ষেত্রে রাইজ অ্যাবাভ উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের সি-আই জাহাজে স্থানান্তর করতে গেলে এনজিওটি নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে পড়বে৷ প্রতিটি উদ্ধারের পর তাদেরকে বন্দরে ফেরত আসতে হবে, যা খরচ অনেক বাড়িয়ে দিবে৷ মিশন লাইফলাইনের হারমাইন পোশমান বলেন, ‘‘প্রতিটি ছোট-খাটো উদ্ধার অভিযানের পর এই বাধা এবং তাৎক্ষণিকভাবে বন্দরে ফেরত আসার কারণে অনিবার্যভাবেই জ্বালানির খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাবে এবং অনেক সময়ও নষ্ট হবে৷’’
এনজিওটি বলছে, খসড়া ডিক্রিটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ৷ মূলত বেসামরিক লোকজনকে উদ্ধারকাজ থেকে বিরত রাখতে এই পরিকল্পনা বলে যাতে দাবি করা হয়েছে৷
লাইফলাইনের একজন কর্মী আক্সেল স্টাইয়ের মতে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতার ঝুঁকিটিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়েছে৷
মারিওন ম্যাকগ্রেগার/এফএস