ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি দেশটির হোম অফিসের অভ্যন্তরীণ দপ্তরের বেশ কিছু গোপন ইমেইল প্রকাশ করেছে। নভেম্বরের শুরুতে পাঠানো এসব মেইলে চলতি বছর যুক্তরাজ্যে আসা শত শত আশ্রয়প্রার্থীকে আইন বহির্ভূতভাবে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য হোম অফিস বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ইমেলের কপি প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। চাঞ্চল্যকর এই প্রতিবেদনের পর যুক্তরাজ্যে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে।
কয়েক মাস ধরে ইংল্যান্ডের বন্দর শহর কেন্টে অবস্থিত ম্যানস্টন আশ্রয় প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র নিয়ে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
সমালোচনার এক পর্যায়ে নভেম্বর মাসে প্রায় ৪৫০ জন আশ্রয়প্রার্থীকে ম্যানস্টন থেকে অন্য একটি আটককেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। মূলত দীর্ঘদিন ধরে এসব ব্যক্তিদের ম্যানস্টন ও অন্য আটককেন্দ্রে রাখার এই ব্যবস্থাটি বেআইনি বলে ফাঁস হওয়া ইমেইল বার্তায় বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন>>রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থী পাঠানো মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, জানাল যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট
এই বেআইনি অনুশীলন নিয়ে অভিবাসন সংস্থা ও এনজিওগুলো শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল।
বিবিসির হাতে আসা হোম অফিসের ৪ নভেম্বর তারিখের একটি ইমেল বার্তায় বলা হয়, “আশ্রয়প্রার্থীদের আটক রাখা আর বৈধ নয় কারণ তাদের শুধুমাত্র পরিচয় যাচাইয়ের সময়কালে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের জন্য আটক রাখা যেতে পারে। আশ্রয়প্রার্থীদের বেশিরভাগই বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আছে। তবে ম্যানস্টনের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি।”
ইমেলে আরও বলা হয়, “আশ্রয়প্রার্থীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোটেলে স্থানান্তরিত করা দরকার।”
পড়ুন>>চ্যানেলে অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে যুক্তরাজ্য-আলবেনিয়া চুক্তি স্বাক্ষর
এই বার্তার উত্তরে হোম অফিসের সংশ্লিষ্ট পরিষেবাগুলো জানায়, “তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোটেল এবং অন্যান্য বাসস্থানে লোকদের স্থানান্তর করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।”
ম্যানস্টনের কেন্দ্রে অভিবাসীদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে বিতর্কের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানের সফরের পরের দিন এই ইমেল বার্তাগুলো হোম অফিসের অভ্যন্তরে বিনিময় করা হয়েছিল বলে বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
‘হোম অফিস আশ্রয় ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে’
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের মতে, এই কেন্দ্রটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে আশ্রয়প্রার্থীদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে খোলা হয়। সেখানে চ্যানেল পেরিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত রাখার কথা থাকলেও অক্টোবর মাসে এই কেন্দ্রটিতে তিলধারণের জায়গা ছিল না।
আরও পড়ুন>>আশ্রয় আবেদন যাচাইয়ে সুপারমার্কেটের অদক্ষ কর্মী নিয়োগ যুক্তরাজ্যে!
সর্বাধিক ১৬০০ জনকে রাখার কথা থাকলেও এই অস্থায়ী কেন্দ্রে ৩১ অক্টোবর তারিখে চার হাজার লোক অবস্থান করে। যাদের মধ্যে একটি বড় অংশ ছিল নারী ও শিশু।
ব্রিটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা ইভেট কুপার এক প্রতিক্রিয়ায় কর্তৃপক্ষের এমন মনোভাবের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “এই ইমেল বার্তাগুলো প্রমাণ করে, [হোম অফিসের সদস্যরা] জানত যে তারা আইন ভঙ্গ করছে। এটির মাধ্যমে বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এই পরিস্থিতির দিকে পরিচালিত করেছে সেটিও প্রকাশ পেয়েছে।”
পড়ুন>>ইংলিশ চ্যানেলের ফরাসি উপকূল থেকে দেড় শতাধিক উদ্ধার, যুক্তরাজ্যে আটক ১
ইভেট কুপারের মতে, “(মিসেস ব্রেভারম্যানের) নেতৃত্বে হোম অফিস আশ্রয় ব্যস্থার পুরো নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে এবং নাগরিকদের করের অর্থ দিয়ে সম্ভাব্য অতিরিক্ত আইনি খরচ তৈরি করেছে।”
ম্যানস্টন কেন্দ্রের এই উপচে পড়া পরিস্থিতির জন্য শুরু থেকেই দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যানের আগ্রাসী নীতিকে দায়ী করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, তিনি অভিবাসীদের থাকার জন্য হোটেলের ব্যবহার সীমিত করার চেষ্টা করতে গিয়ে এই ধরনের বেআইনি অনুশীলন করেছেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বারবার এটির আইনি দিক নিয়ে তাকে সতর্ক করলেও তিনি সেটি উপেক্ষা করেন।
আরও পড়ুন>>অভিবাসী চাপে ‘নাকাল’ যুক্তরাজ্যের ম্যানস্টন আশ্রয় কেন্দ্র
সুয়েলা ব্রাভারম্যান অবশ্য সংবাদমাধ্যমগুলোর এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
২০২২ সালে ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে অভিবাসী আগমনের হার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দেশটি ইতিপূর্বে এত বেশি অভিবাসীকে চ্যানেল অতিক্রম করতে দেখেনি। চলতি বছরের শুরু থেকে প্রায় ৪৫ হাজার আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্য উপকূলে পৌঁছেছেন।
এমএইউ/এআই