লিবিয়া ও নাইজারের সীমান্তবর্তী মরুভূমিতে 
 অনিয়মিত অভিবাসীদের পরিবহনের দৃশ্য। ছবি: রেড়িও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএফআই)
লিবিয়া ও নাইজারের সীমান্তবর্তী মরুভূমিতে অনিয়মিত অভিবাসীদের পরিবহনের দৃশ্য। ছবি: রেড়িও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএফআই)

প্রায় ২২ হাজার অভিবাসীকে অনিয়মিত উপায়ে ইউরোপে পাঠিয়ে যৌন শোষণ বা আধুনিক দাসত্বে বাধ্য করার অভিযোগে লিবিয়ার এক ব্যক্তিকে আফ্রিকার দেশ নাইজার থেকে আটক করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত একটি যৌথ তদন্ত দল এই অভিযান পরিচালনা করেছে।

লিবিয়া সীমান্তবর্তী আফ্রিকার দেশ নাইজার হয়ে হাজারো অভিবাসীদের ইউরোপে পাচার করে পতিতাবৃত্তি এবং আধুনিক দাসত্বের মাধ্যমে নির্যাতনের অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্রের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে নাইজেরিয়া, ফ্রান্স এবং স্প্যানিশ পুলিশের একটি যৌথ তদন্ত দল। 

কয়েক মাস ধরে তিন দেশের পুলিশের যৌথ তদন্তে উঠে এসেছে ভুক্তভোগী প্রায় ২২ হাজার অভিবাসীদের বেশিরভাগই নাইজেরিয়া এবং ক্যামেরুনের নাগরিক। 

আরও পড়ুন>>জাহাজের রাডারে লুকিয়ে নাইজেরিয়া থেকে ক্যানারিতে, উদ্ধার ৩

বার্তা সংস্থা এএফপি একটি পুলিশ সূত্রে জানিয়েছে, অভিবাসীদের ইউরোপে পাঠিয়ে উন্নত জীবনের মিথ্যা আশা দিয়ে নির্যাতনে বাধ্য করা এই চক্রের প্রধান হিসেবে সন্দেহভাজন একজন লিবীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ তদন্ত দল। ২৯ বছর বয়সি এই ব্যক্তিকে ২০ ডিসেম্বর, নাইজারের আগাদেজ শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়ে। 

বর্তমানে তিনি নাইজারের রাজধানি নিয়ামির কারাগারে আছেন।

তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই সন্দেহভাজন বলেন, তিনি সাত বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে ৬০ জন অভিবাসী অর্থাত্ মোট ২২ হাজার ব্যক্তিকে অনিয়মিত উপায়ে ইউরোপে পাচার করেছেন। 

পড়ুন>>মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াই, নতুন চুক্তি স্বাক্ষর ইইউ- নাইজারের

ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহযোগিতা অধিদপ্তর (ডিসিআইএস) পরিচালক জ-ক্রিস্টোফ হিলেয়ারের মতে, নাইজার ও লিবিয়া হয়ে ইউরোপে আসতে গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার ইউরো পর্যন্ত দিতে হয়েছে অভিবাসীদের। পাচারকারীদের এই টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা৷

যৌথ তদন্ত দলের দায়িত্বে থাকা জ-ক্রিস্টফ হিলেয়ার আরও বলেন, “আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই ব্যক্তির অন্য সাগরেদদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে।”

ডিসিআইএস-এর উদ্ধৃতি দিয়ে ফরাসি গণমাধ্যম ফ্রান্স ইনফো জানিয়েছে, “সংশ্লিষ্ট চক্রটি মূলত ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে অভিবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যেখানে তাদের একটি উন্নত জীবন উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। নাইজেরিয়া বা ক্যামেরুন থেকে নিয়ে বড় শহরগুলি এড়িয়ে পিক-আপে নাইজার হয়ে লিবিয়া বা আলজেরিয়ায় নিয়ে আসা হত অভিবাসীদের।”

আরও পড়ুন>>নাইজারে মানবপাচারে জড়িত নেটওয়ার্কের সদস্যদের গ্রেফতার

সেখান থেকে অভিবাসীদের ফ্রান্স, ইটালি, স্পেন ও জার্মানিতে পাঠানো হয়। ইউরোপে আসার পর এসব অভিবাসীরা এই চক্রটির হাতে পতিতাবৃত্তি বা আধুনিক দাসত্বের কার্যকলাপে শোষিত হয়। 

উত্তর নাইজারে অবস্থিত মরুভূমির পাড়ি দেয়ার রুট বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক রুট৷ অভিবাসী পাচার, মাদক ও অস্ত্রপাচার করিডোর হিসেবে এটি পরিচিত। এছাড়া বহু শীর্ষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বসবাস এই অঞ্চলে। নাইজার ও লিবিয়ার সীমান্ত এলাকায় প্রায়ই অভিবাসীদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। 

পড়ুন>>প্রতিবারে গেমে ব্যর্থ হলে পাচারকারীরা আবার টাকা দাবি করতো’

ডিসিআইএস জানিয়েছে, মানবপাচার ও অপরাধ দমনে ২০১৭ সাল থেকে ইউরোপীয় পুলিশের একটি দল নাইজারে উপস্থিত রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এই রুটে ১৯৬ টি অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তাকারী চক্র এবং ৮২৪ জন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। 


এমএইউ/আরকেসি (এএফপি, ফ্রান্স ইনফো)




 

অন্যান্য প্রতিবেদন