জিও ব্যারেন্টস উদ্ধারকারী জাহাজ, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) দ্বারা পরিচালিত৷  ছবি: আনসা/এমএসএফ
জিও ব্যারেন্টস উদ্ধারকারী জাহাজ, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) দ্বারা পরিচালিত৷ ছবি: আনসা/এমএসএফ

ইটালি সরকারের একটি নতুন ডিক্রি লঙ্ঘন করে ২ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) জাহাজ জিও ব্যারেন্টস৷

ইটালির সরকারের নয়া ডিক্রিতে উল্লেখ রয়েছে, উদ্ধার কাজ অবশ্যই ইটালির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে করতে হবে৷ উদ্ধারের পর সঙ্গে সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আশ্রয়প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে৷  

এমএসএফ টুইটারে লিখেছে, ‘‘বেশ কয়েকজন অভিবাসীর সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় ছিল৷ আমরা সবাইকে উদ্ধার করতে পেরেছি। কিন্তু জিও ব্যারেন্টস না থাকলে কী হতো?’’ 

যা ঘটেছে 

এমএসএফ জানিয়েছে, লিবিয়া উপকূলের কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে জিও ব্যারেন্টস ৪১ জনকে উদ্ধার করে৷ ইটালি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে পরে জিও ব্যারেন্টস আরো ৪৪ জনকে সেই জাহাজে জায়গা দেয়৷ প্রথমে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ এই ৪৪ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করে৷ এরপর জিও ব্যারেন্টস ইটালির নির্দেশে টারান্টো বন্দরে যাত্রা করে৷ 

সোমবার (২ জানুয়ারি) সকালে ৪১ জনকে উদ্ধার করে একটি উদ্ধার অভিযান চালায় জিও ব্যারেন্টস৷ কয়েক ঘণ্টা পরে ইটালির উপকূলরক্ষীদের কাছে সাহায্যের জন্য বারবার আবেদন করার পরে অভিবাসীদের আরেকটি ডুবে যাওয়া নৌকাকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে আসে বাহিনী৷ 

ইটালির উপকূলরক্ষী পরে এমএসএফ-এর কাছে সাহায্যের অনুরোধ করেছিল৷ জিও ব্যারেন্টস তখন কর্তৃপক্ষের অনুরোধে এই যাত্রীদের জাহাজে তোলে৷ 


নতুন ডিক্রিটি সোমবার রাষ্ট্রপতি সের্জিও মাতারেল্লা স্বাক্ষর করেন৷ এখন সংসদে এটি আইনে পরিণত হবে৷ এতে ৫০ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা এবং জাহাজ জব্দও করা যেতে পারে। 

অভিবাসীদের সহায়তা করা বেসরকারি সংস্থাগুলো তাদের জাহাজের উপর সরকারের আরোপিত নতুন ডিক্রির সমালোচনা করেছে৷ তাদের মতে, এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যা অনিবার্যভাবে বাড়বে৷ তাদের অভিযান চালানোর ক্ষমতাও কমে যেতে পারে৷ 

সমন্বয়হীন উদ্ধার অভিযান ব্যর্থ 

এনজিওগুলি এখন আগের তুলনায় অভিযান পিছু কম উদ্ধার অভিযান চালাতে পারে। সোমবার এমএসএফ ঘোষণা করেছিল, তারা শুধু ইটালির কর্তৃপক্ষের অনুরোধে দুর্দশাগ্রস্ত নৌকাগুলিকে সহায়তা দেবে৷ তবে একই দিনে দুইটি সমন্বিত উদ্ধার অভিযান চলাকালীন আরো একটি সাহায্যের অনুরোধ এসে পৌঁছায় জিও ব্যারেন্টসের কাছে৷ ইটালি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে জাহাজটি বিপদগ্রস্ত অভিবাসীদের পৌঁছানোর জন্য যাত্রা শুরু করে৷  

এনজিওর একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমরা সাহায্য করতে যাচ্ছি। তাৎক্ষণিকভাবে ইটালি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তক্ষেপের অনুমতি চেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা কোনো সাড়া পাইনি৷ আন্তর্জাতিক আইন ও সামুদ্রিক কনভেনশনের অধীনে, আমরা বিপদে পড়া ব্যক্তিদের সাহায্য করতে বাধ্য৷’’ 

তবে পরবর্তীতে নৌকাটি তারা খুঁজে পায়নি৷ পরে ইটালির উপকূলরক্ষীরা ৫০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করে৷ 

নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় জিও ব্যারেন্টস 

উদ্ধার অভিযান ব্যর্থ হলেও নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য জিও ব্যারেন্টসের ক্রুদের শাস্তি দেয়া যেতে পারে৷ কারণ, সফল অভিযানে উদ্ধার করা ব্যক্তিদের জাহাজে থাকাকালীন আশ্রয়ের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করার কথা বলা হয়নি। এখন তারা নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

জর্জিয়া মেলোনির উগ্র ডানপন্থি সরকার অক্টোবরে ক্ষমতায় এসে ইটালিতে অনিয়মিত অভিবাসীদের আগমন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ 

তার প্রেক্ষিতেই ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে মেলোনির সরকার৷ জার্মান এনজিও এসওএস হিউম্যানিটির অ্যাডভোকেসি অফিসার মির্কা শেফার ইনফোমাইগ্র্যান্টসকে বলেছেন নতুন ডিক্রিটি ‘'বেসরকারি উদ্ধারকারী জাহাজকে জীবনরক্ষার কাজ থেকে বিরত রাখার আরেকটি প্রচেষ্টা। সমুদ্রে বেসরকারি জাহাজের মাধ্যমে উদ্ধারকাজে যে কোনও বিধিনিষেধ দেয়ার মানে হলো ইউরোপে আসার সময় আরও বেশি লোক ডুবে যাবে৷’’ 

আশঙ্কাটা ঠিক কী 

এমএসএফ সোমবার কয়েকটি টুইট প্রকাশ করে এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা ইটালির কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পরে নৌকাগুলিকে সহায়তা করছে৷ 

টুইটারে তারা জানায়, রোম জিও ব্যারেন্টসকে একটি ক্ষেত্রে সহায়তা না করতে বলেছিল, কারণ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছিল লিবিয়া৷ সেখানে এমএসএফ দলের কোন সহায়তার প্রয়োজন নেই৷ 


এর আগে বেসরকারি সংস্থা ‘অ্যালার্ম ফোন’ লিবিয়ার উপকূলে দুর্দশাগ্রস্ত একটি নৌকা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল৷ নৌকাটিকে জোর করে লিবিয়ায় ফেরত পাঠানোর আশঙ্কা করেছিল তারা৷ 

এমএসএফের মাউরিজিও দেবানে জানান, ‘‘এনজিওগুলি যদি অনুমতি ছাড়াই উদ্ধার কাজ করে, তবে ইটালি নিয়ম বলতে পারে যে আমরা নতুন আইন ভঙ্গ করেছি।’’ তবে তিনি এটাও উল্লেখ করেছেন যে, ‘‘আন্তর্জাতিক আইন এবং সামুদ্রিক কনভেনশনের অধীনে যারা বিপদে পড়ে তাদের সহায়তা করতে আমরা বাধ্য৷’’ 


 আরকেসি/এফএস (এপি, এএফপি, ডিপিএ, ইউরোনিউজ) 

 

অন্যান্য প্রতিবেদন