(ফাইল ছবি) গ্রিসের লেসবোসে পৌঁছিানো অভিবাসী৷ ছবি: ইমাগো
(ফাইল ছবি) গ্রিসের লেসবোসে পৌঁছিানো অভিবাসী৷ ছবি: ইমাগো

মানবপাচারের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া সোমালি অভিবাসীকে মুক্তির আদেশ দিয়েছে গ্রিসের একটি আদালত৷ অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রিসের নেয়া কঠোর আইনের অধীনে তাকে সাজা দেয়া হয়েছিল৷

এক/দুই বছর নয়, মোহাম্মদ হানাদ আব্দিকে ২০২১ সালে ১৪২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল গ্রিসের একটি আদালত৷ তার মাত্র এক বছর আগেই তুরস্ক থেকে একটি ডিঙ্গিতে করে তিনি গ্রিসের লেসবোস দ্বীপে পৌঁছান৷

সোমবার (৯ জানুয়ারি) আপিলের শুনানি শেষে তার সাজা কমিয়ে আট বছর করা হয়৷ তবে এরইমধ্যে জেলে কাটানো সময় এবং সেই সঙ্গে তার ভালো আচরণকে বিবেচনায় নিয়ে ওই সাজাও মওকুফ করে তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে আপিল আদালত৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বেশ কয়েক সদস্যের উপস্থিতিতে এই বিচার চলে৷ ২৯ বছর বয়সি আব্দিকে ভুলবশত দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে- এমন দাবি করেছিলেন তারা৷ 

তার মুক্তির দাবিতে প্রচারে নেতৃত্ব দেয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনপ্রণেতাদের একজন স্টেলিওস কৌলোগলৌ বলেন, ‘‘এই স্বস্তিতে আমাদের সবার চোখে জল চলে এসেছে৷ এটা কঠিন এক দিন ছিল৷ রাষ্ট্রের পক্ষের প্রসিকিউটর কঠোর অবস্থান নিয়ে সাজা বহাল রাখতে চেয়েছিলেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রায়, কেননা, অনেক সাধারণ অভিবাসীকেও মানবপাচারকারী সাব্যস্ত করা হয়৷ কিছুদিনের মধ্যেই মোহাম্মদকে মুক্তি দেয়া হবে৷ এর মধ্যে তার সমস্ত কাগজ প্রক্রিয়া করা হবে৷ এরপর এই আইন পরিবর্তনের জন্য আমরা প্রচার চালাবো৷’’


২০২০ সালের ডিসেম্বরে চার সন্তানের জনক আব্দি ৩৪ জনের সঙ্গে একটি নৌকায় তুরস্ক থেকে লেসবোসে আসেন৷ আদালতকে তিনি জানান একজন তুর্কি পাচারকারী নৌকাটি ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি সেটি চালান৷ 

পরে দুর্ঘনায় নৌকার দুই যাত্রী ডুবে যান৷ ৩৩ জনকে উদ্ধার করা হয়৷ আব্দির আইনজীবীরা জানিয়েছেন বেঁচে যাওয়াদের অনেকে আব্দির পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন৷ 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের বাম ধারার রাজনৈতিক দলের সদস্য কৌলগলৌ বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, আরো কয়েক হাজার অভিবাসী এমন ভুলবশত দোষী সাব্যস্ত হয়ে গ্রিসে জেল খাটছেন৷ এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এপিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া দেয়নি গ্রিসের মধ্য-ডানপন্থি সরকার৷ তবে, নিজেদের অভিবাসন নীতিকে কঠোর হলেও ন্যয়সঙ্গত বলে দাবি করে আসছে এথেন্স৷ 

গ্রিক মন্ত্রী টাকিস থিওডোরিকাকোস আরো জানিয়েছেন, দেশটির সীমান্ত কর্তৃপক্ষ গত বছর এভ্রোস নদী থেকে মোট ১৩০০ জন সন্দেহভাজন মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে৷ এছাড়া ২০২২ সালে তারা দুই লাখ ৫৬ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নদী পারাপারে বাধা দিয়েছেন৷

গ্রিসে বন্দি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য আইনি লড়াই চালানোর প্রচারে সহায়তা দিচ্ছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো৷ দেশটির অভিনয় শিল্পীরাও এজন্য অর্থ সহায়তা করছেন বলে জানিয়েছে এপি৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ১৫ জন সদস্য এই প্রচারে সমর্থন জানিয়ে গ্রিক কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন৷ 

গত মাসে সাজাপ্রাপ্ত দুই আফগানও আপিলের জেরে জেল থেকে মুক্ত হয়েছেন৷ তাদের দুইজনকে ৫০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ 

এফএস/এসিবি (এপি)

 

অন্যান্য প্রতিবেদন