অভিবাসী উদ্ধারে নিয়োজিত ২৪ অধিকারকর্মীকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে গ্রিসের আদালত। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিবাসী পাচারের অভিযোগটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।
মানবপাচার, গুপ্তচরবৃত্তি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মঙ্গলবার ২৪ অভিবাসী উদ্ধারকর্মীর বিচার শুরু হয় গ্রিসের লেসবসে৷
শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, প্রথম রায়ে তাদেরকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে গ্রিক দ্বীপ লেসবোসের মাইটিলিনের আদালত। পাশাপাশি মানবপাচারের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত জারি করা হয়েছে।
শুরু থেকেই এই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো৷ বিশেষ করে জালিয়াতি এবং গুপ্তচরবৃত্তির জন্য অভিযুক্ত হলে চার বছর পর্যন্ত কারাবাস হয়ে থাকে।
এর ফলে শেষ পর্যন্ত একটি বিতর্কিত বিচার প্রক্রিয়ার অবসান ঘটল।
পড়ুন>> গ্রিসে ১৪২ বছরের সাজা পাওয়া অভিবাসীর কারামুক্তি
আদালতের মতে, অভিবাসী উদ্ধারে জড়িত সাবেক স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অনুবাদ করতে ব্যর্থতাসহ বেশ কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে মাইটিলিন আদালত গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

আদালতের সিদ্ধান্তের পরই প্রধান আসামিদের একজন নাসোস কারাকিতোসকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে এক প্রতিক্রিয়া বলেন, “আমরা সাড়ে চার বছর ধরে জিম্মি বোধ করছি।”
অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বার্লিনে বসবাসকারী বিখ্যাত সিরীয় উদ্বাস্তু সারাহ মার্ডিনি। তিনি ২০১৫ সালে নিজে এজিয়ান সাগরে হয়ে শরণার্থী হিসেবে গ্রিসে প্রবেশ করে জার্মানিতে স্থায়ী হয়েছিলেন। এই অভিবাসী পরবর্তীতে তার স্বেচ্ছাসেবী কাজের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেন। তিনি ২০১৬ সালে অভিবাসীদের সহায়তা করতে জার্মানি থেকে আবারও লেসবোস দ্বীপে ফিরে এসেছিলেন।
আরও পড়ুন>>সমুদ্রে ধাওয়া করে মানবপাচারকারী পাকড়াও গ্রিসের
২০১৮ সালের গ্রীষ্মে এনজিওর সাথে কার্যকলাপের জন্য তাকে গ্রেপ্তার এবং ১০৬ দিনের কারাবাসের সাজা দেয়া হয়েছিল।
পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন। জামিনের পর থেকে অন্য অধিকারকর্মীদের মতো তিনিও মামলার রায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
বিচার চলাকালে লেসবোসে ইনফোমাইগ্রেন্টসের সাথে দেখা হয়েছিল আরেক অভিযুক্ত অধিকারকর্মী শন বাইন্ডারের সাথে।

তিনি বিচার কার্যক্রম চলাকালে ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে তার ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। ১০ মাসের জন্য এনজিও ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার ইন্টারন্যাশনালের (ইআরসিআই)-এর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার পর তাকে ২০১৮ সালে সারাহ মার্ডিনির সাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন>> এজিয়ান সাগরে ‘মানবপাচারকারীর’ নৌকায় গ্রিক উপকূলরক্ষীদের গুলি
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর আগে গ্রিক আদালতকে অভিবাসীদের সাহায্যের কাজে যুক্ত থাকা কর্মীদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বলেছিল।
হাই কমিশনের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রোসেল শুক্রবার বলেছেন, “এই ধরনের বিচার সত্যিই উদ্বেগজনক। কারণ এর দ্বারা এমন কাজকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয় যা মানুষের জীবন বাঁচায়। এটি একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করে।
আরও পড়ুন>>মানবপাচার চক্র ভেঙ্গে দেয়াকে ‘জাতীয় অগ্রাধিকার’ বলছে গ্রিস
২০১৮ সাল থেকে গ্রিসের আগ্রাসী নীতির কারণে বেশিরভাগ অভিবাসী উদ্ধারকারী এনজিওগুলি গ্রিক উপকূলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
আন্তজার্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালএই বিচারকে একটি ‘প্রহসন’ হিসাবে বর্ণনা করেছিল।
এমএইউ/আরআর