ফ্রান্সের একটি আদালত। ছবি:  উইকিমিড়িয়া সিসি
ফ্রান্সের একটি আদালত। ছবি: উইকিমিড়িয়া সিসি

শ্রীলঙ্কার ১৪ নাগরিককে ছয় মাস থেকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয়ার সুপারিশ করেছেন ফ্রান্সের বুভে অঞ্চলের পাবলিক প্রসিকিউটর৷ দেশটিতে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের পাচারে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে৷

ফ্রান্সের ওয়াজ ডিপার্টমেন্টেরর অন্তর্গত বুভে শহরে মানবপাচারের অপরাধে ৯ জানুয়ারি থেকে ১৪ শ্রীলঙ্কান নাগরিকের বিচার চলছে৷ 

অভিযুক্তরা ৩২ থেকে ৫৮ বছর বয়সি৷ ১৪ আসামির মধ্যে ছয়জন বিচারপূর্ব কারাগারে এবং সাতজন বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন৷ আরেকজন বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেছেন৷ তিনি তার প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন৷

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে রোমানিয়া, ইউক্রেন, সার্বিয়া ও হাঙ্গেরিসহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীদের পাচার করেছেন৷ 

আরও পড়ুন>>বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ: স্বপ্নের হাতছানিতে মৃত্যুযাত্রা

তারা ইউরোপের কয়েকটি দেশে থাকা তাদের গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কান ও বাংলাদেশি নাগরিকদের পূর্ব ইউরোপ থেকে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে নিয়ে আসতে সহায়তা করেছেন৷  

বুভে অঞ্চলের প্রসিকিউটির জঁ-পাসকেল আরলো আদালতের কাছে তাদের ছয় মাস থেকে ছয় বছরের কারাদণ্ডের সুপারিশ করেছেন৷ এছাড়া এরমধ্যে সাতজনকে ফরাসি ভূখণ্ডে প্রবেশে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বলেছেন৷ 

পড়ুন>>>ফ্রান্সে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আশ্রয় আবেদন বাংলাদেশিদের

আগামী বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) এই মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে৷ 

তদন্তের দায়িত্বে থাকা অনিয়মিত অভিবাসীদের পাচার বিষয়ক কেন্দ্রীয় ফরাসি দপ্তর অক্রিয়েস্ট জানিয়েছে, মূলত ইল দ্য ফ্রন্সের উ দ্যো সেইন ডিপার্টমেন্টের মুদো এলাকায় বসবাসরত এক শ্রীলঙ্কান দম্পতির বিরুদ্ধে তদন্তের পরে এই নেটওয়ার্কটির খোঁজ পায় ফরাসি প্রশাসন৷ 

তদন্তে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ স্থানান্তরের কাগজপত্র, ভুয়া নথি ও ভিসা জব্দ করেছে ফরাসি প্রশাসন৷ 

আরও পড়ুন>>সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগর পাড়িতে বাংলাদেশিরা তৃতীয়

অভিযুক্ত নেটওয়ার্কটির প্রধান হিসেবে প্রিয়তর্ষণ নামে শ্রীলঙ্কার এক নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে৷ তিনি ওয়াজ ডিপার্টমেন্টের একটি ছোট্ট শহরে একটি মুদি দোকান চালাতেন৷ 

দোকানে ব্যবসার পাশাপাশি তিনি একটি আন্তর্জাতিক অবৈধ অভিবাসন নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে৷  

যাতায়াতের শর্ত, রুট, পরিবহণের জন্য অভিবাসীদের সংখ্যা, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ এবং সেইসাথে পাচারের অর্থ নিয়ে সমঝোতা করতেন তিনি৷ তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয়ার আবেদন করা হয়েছে৷

পড়ুন>>রেওনিওঁ দ্বীপ থেকে ‘ডিপোর্ট’ ৪৬ শ্রীলঙ্কান অভিবাসী

তার তিন সহযোগীর সবাই প্যারিস অঞ্চলে বসবাস করেন। তারা নিজেরাও অভিবাসী৷ ফ্রান্সের সীমান্তবর্তী দেশগুলি সম্পর্কে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে তারা পর্যায়ক্রমে মানবপাচারকারী হয়ে ওঠেন৷ 

ম্যাজিস্ট্রেটের মতে, ইউক্রেন, রোমানিয়া বা বেলারুশ থেকে অবৈধ পারাপারের ব্যবস্থা করতে অভিবাসীদের কাছ থেকে গড়ে ১০ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার ইউরো পর্যন্ত নেয়া হতো৷ 

অভিযুক্ত প্রিয়তর্ষণ স্বীকার করেছেন, তিনি এভাবে মোট ২০ থেকে ২৫ হাজার ইউরো আয় করেছেন৷

তার আইনজীবী ফ্রেদেরিক রিকাতো-লেলিউ চুড়ান্ত রায়ের আগে এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে কোন মন্তব্য করতে চাননি। 



 এমএইউ/এফএস (লো পারিজিয়া, লো ফিগারো)



 

অন্যান্য প্রতিবেদন