লেবানন-সিরিয়া সীমান্তের কারণে কতজন সিরিয়ান দেশে ফিরেছে তা জানা কঠিন৷ ছবি: বিলাল হোসেন/এপি/পিকচার অ্যালায়েন্স
লেবানন-সিরিয়া সীমান্তের কারণে কতজন সিরিয়ান দেশে ফিরেছে তা জানা কঠিন৷ ছবি: বিলাল হোসেন/এপি/পিকচার অ্যালায়েন্স

নতুন বছরের আগে ২৩০ জনের বেশি অভিবাসীকে নিয়ে একটি ছোট নৌকা ডুবে যাচ্ছিল৷ অভিবাসীদের বেশিরভাগই সিরীয়৷ লেবাননের উত্তর উপকূল থেকে পাল তোলার পর নৌকাটি ডুবতে শুরু করে৷ এদের মধ্যে ২২৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল, বলে বুধবার জানা গিয়েছে৷ এরপরই সিরিয়ায় তাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷

লেবাননের নৌবাহিনী ও ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্তে মোতায়েন থাকা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী সাহায্যে উদ্ধারকর্মীরা দুই জন বাদে সবাইকে বাঁচাতে পেরেছিলেন৷ একজন সিরীয় নারী এবং একজন শিশু জলে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন৷ এছাড়া ২২৮ জনকে উদ্ধার করা হয়৷

রাতভর উদ্ধারকাজ চলে৷ রাতেই তাদের ত্রিপোলি নিয়ে আসে লেবাননের সেনাবাহিনী৷ এরপর ট্রাকে করে তাদের সিরিয়ার দিকে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷ উত্তর পশ্চিম লেবাননের ওয়াদি খালেদ নামে একটি প্রত্যন্ত এলাকার অনানুষ্ঠানিক সীমান্তে তাদের নামিয়ে দেয়ার কথা জানিয়েছে হিউম্যান রাইস মনিটর৷

কারা ওই নির্বাসনের আদেশ দিয়েছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ ২০১৯ সাল থেকে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে লেবানন৷ এর চার বছর আগে ২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ার বহু নাগরিক লেবাননে এসেছিলেন৷ তবে সংকট আরো বেড়েছে৷ গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট থেকে এখন সিরীয়দের পাশাপাশি লেবাননের বহু নাগরিকও ইউরোপে পাড়ি দিচ্ছেন৷ বিপজ্জনক পথে ইউরোপে আসতে গিয়ে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে৷

সিরীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনাটিতে লেবাননের সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে৷ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এবং নিরাপত্তাকর্মীরা অভিবাসন ইস্যুটি দেখেন৷ তবে একাধিক অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷

অভিবাসীরা জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপারে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরা কিছু ব্যক্তি তাদের আটকায়৷ সেখানেই পাচারকারীর দল ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে৷ পরিবার এসে পাচারকারীদের হাতে অর্থ না দেয়া পর্যন্ত তাদের আটকে রাখা হয়েছিল৷ এরপর তাদের লেবাননে পাঠানো হয়৷ বছর বত্রিশের সিরীয় শরণার্থী ইয়াসিন আল-ইয়াসিন বলেন, সীমান্তে কেনাবেচা চালিয়েছিল ওই পাচারকারীরা৷

মাহমুদ আল-দাইউব নামে অপর এক সিরীয় বলেন, তিনি পাচারকারীদের কথা শুনেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি না তারা সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্য নাকি পাচারকারীরা৷ তবে তারা কেনাবেচার কথা বলেছিল৷’’ তিনি পাচারকারীদের থেকে পালিয়ে এসেছিলেন৷ কারণ তার পরিবার তার জন্য কোনো অর্থ দিতে পারেনি৷

ওয়াদি খালেদ এলাকাটি নর্দার্ন আক্কার জেলায় অবস্থিত৷ সেখানকার পার্লামেন্ট সদস্য জিমি জব্বর বলেন, ''সেনাবাহিনী আটকেছিল কারণ অনিয়মিত পথে লেবানন থেকে এসেছিল অভিবাসীরা৷ অভিবাসীরাই পাচারকারীদের অর্থ দেয় যাতে লেবাননে আবার ফিরে যেতে পারে, সিরিয়ায় ফেরত যেতে না হয়৷ পাচারকারীদের সাহায্য করা সেনাবাহিনীর কাজ নয়৷ সেনাবাহিনীর কাজ, ওই অভিবাসীদের নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়া৷’’

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ইদলিবের একজন সিরীয় নারী জানান, তাকে দুই রাত আটকে রাখা হয়েছিল৷ লেবাননে তাকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আত্মীয়রা ৩০০ ডলার দিতে বাধ্য হয়েছিল৷ তিনি জানান, ‘‘আমি (সিরিয়ায়) ফিরতে পারব না৷ আমি বরং সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে মরব৷’’

লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজের অধিকর্তা জেসমিন লিলিয়ান ডায়াব বলেন, অনেক সিরীয় নির্বাসন এড়াতে সমুদ্রে ঝাঁপ দেন৷ ২০২২ থেকে লেবানন থেকে অভিবাসীদের অন্যত্র পাড়ি দেয়ার হার বেড়েছে বলেও জানান তিনি৷

তার মত, ‘‘এই অভিবাসীদের মনে হয়েছিল এখান থেকে বেরোবার এটাই একমাত্র সুযোগ৷ তারা সিরিয়ায় নির্বাসন নিয়ে আতঙ্কিত ছিল৷’’

লেবাননের মানবাধিকার আইনজীবী মোহাম্মদ সাবলুহ বলেন, ''মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে এই ঘটনায়৷''

লেবাননে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র লিসা আবু খালেদ বলেন, ''ইউএনএইচসিআর বিষয়টি দেখছে৷ সমুদ্রে উদ্ধার হওয়া সকল ব্যক্তি এবং যাদের মূল দেশে (প্রত্যাবর্তনের) ভয় থাকতে পারে, তাদের সুরক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকা উচিত৷''


আরকেসি/এফএস (এপি)

 

অন্যান্য প্রতিবেদন