২০২১ সালে স্পেনের মায়োর্কাতে জরুরি অবতরণ করা একটি বিমান থেকে পালিয়ে যাওয়া ২২ অভিবাসীকে শর্তাধীন মুক্তি দিয়েছে আদালত৷ এরই মধ্যে ১৪ মাস বিচারপূর্ব জেল খেটেছেন তারা৷
দলটির বেশিরভাগ ছিলেন মরক্কোর নাগরিক৷ ২০২১ সালের নভেম্বরে এয়ার অ্যারাবিয়া মারোক-এর একটি ফ্লাইটে তারা মরক্কো থেকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যাচ্ছিলেন৷ বিমানে একজন যাত্রী অসুস্থ হওয়ার দাবি করলে সেটি স্পেনিশ দ্বীপ মায়োর্কাতে জরুরি অবতরণ করে৷
তবে হাসপাতালে নেয়ার পর সেই রোগীকে চিকিৎসকরা সুস্থ হিসেবে চিহ্নিত করেন বলে জানিয়েছে স্পেনিশ মিডিয়া ও জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ৷ এদিকে বিমানবন্দরে অপেক্ষারত অবস্থায় একদল যাত্রী প্লেনটি থেকে বেরিয়ে পড়েন এবং রানওয়ে ঘেরা বেড়ার দিকে দৌড়াতে থাকেন৷ তাদের ২০ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে এবং দুইজনকে কয়েক সপ্তাহ পরে গ্রেপ্তার করে স্পেনিশ পুলিশ৷ তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের জন্য পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন বলে ধারণা করে পুলিশ৷ তাদের বিচারের জন্য আটক রাখা হয়৷ ১৭ জানুয়ারি একটি আঞ্চলিক আদালত তাদেরকে অস্থায়ীভাবে শর্তাধীন মুক্তির নির্দেশ দেয়৷
ফেরত পাঠানোর জন্যই মুক্তি?
তবে মুক্তির শর্ত হিসেবে অভিবাসীদেরকে তাদের পাসপোর্ট স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে৷ বার্তা সংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে৷ জার্মান ভাষার মায়োর্কা ম্যাগাজিনও জানিয়েছে মূলত প্রত্যাবর্তন বন্দিকেন্দ্রে পাঠাতেই তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়েছে৷
বিমান থেকে পালিয়া যাওয়ার এই ঘটনা একমাত্র নয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মরোক্কোর শহর ক্যাসাব্লাঙ্কা থেকে ইস্তাম্বুল যাওয়ার পথে পেগাসাস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট স্পেনের বার্সেলোনায় জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়৷ প্লেনে থাকা এক অন্তঃসত্ত্বার জল ভেঙে যাওয়ার দাবি করেন৷
এই ঘটনায় প্লেনটি থেকে ২৮ জন পালিয়ে যান৷ তাদের মধ্যে মাত্র ১৪ জনকে আটক করতে পেরেছে পুলিশি৷ আর পাঁচজন নিজেরাই পরে বিমানে ফিরে আসেন৷ এদিকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ঐ নারীর সন্তান জন্মদানের সময় হয়নি।
নতুন কৌশল?
এদিকে জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অন্তঃসত্ত্বাকে পরে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বার্তা সংস্থা এএফপি জানায় যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের ফেরত পাঠাবে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ৷
স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের ধারণা মানব পাচারকারীরা এটিকে নতুন এক কৌশল হিসেবে নিয়েছে৷ জার্মান ভাষার স্থানীয় সংবাদপত্র মায়োর্কা সাইটুং জানিয়েছে, ২০২১ সালের ঘটনার ২২ জনের দুইজনকে সরাসরি ফেরত পাঠানো হচ্ছে না৷ যেই ব্যক্তি অসুস্থতার দাবি করে বিমানটিকে জরুরি অবতরণে বাধ্য করেছেন তার বিরুদ্ধে অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ সে কারণে সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের আগে তাকে স্প্যানিশ আদালতের মুখোমুখি হতে হবে৷
সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিচারপূর্ব বন্দি অবস্থায় এক পুলিশ কর্মকর্তার উপর আক্রমনের অভিযোগও রয়েছে৷ এ নিয়েও আরো তদন্ত হবে৷ অন্যদিকে আরেকজন ব্যক্তি ফিলিস্তিনের নাগরিক হওয়ায় তাকে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না৷ কেননা ফিলিস্তিনের সঙ্গে স্পেনের এই ধরনের কোনো চুক্তি নেই৷
এফএস/আরকেসি (ডিপিএ, এপি)