শ্রীলঙ্কার ১৪ অভিবাসীকে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন ফ্রান্সের বুভে ফৌজদারি আদালত৷ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের ইইউর বিভিন্ন দেশে পাচারে সহযোগিতার দায়ে তাদেরকে এ সাজা দেওয়া হয়৷
ফ্রান্সের ওয়াজ ডিপার্টমেন্টেরর অন্তর্গত বুভে শহরের এক আদালতে মানবপাচারের অপরাধে ১৪ শ্রীলঙ্কান নাগরিকের বিচার চলছিল৷
চলতি সপ্তাহের ১৭ জানুয়ারি বুভে অঞ্চলের প্রসিকিউটির জঁ-পাসকেল আরলো আদালতের কাছে তাদের বিরুদ্ধে ছয় মাস থেকে ছয় বছর পর্যন্ত সাজার সুপারিশ করেছিলেন৷
আরও পড়ুন>> ফ্রান্সে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আশ্রয় আবেদন বাংলাদেশিদের
অবশেষে ১৯ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় ঘোষণা করেছে বুভে শহরের আদালত৷ রায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ মানবপাচারের দায়ে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদাণ্ড দেয়া হয়েছে৷
অভিযুক্তরা ৩২ থেকে ৫৮ বছর বয়সি পুরুষ৷ ১৪ আসামির মধ্যে ছয় জন বিচারপূর্ব কারাগারে এবং সাত জন বিচারবিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন৷ আরেকজন বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন৷
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে রোমানিয়া, ইউক্রেন, সার্বিয়া ও হাঙ্গেরিসহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীদের পাচার করেছেন৷
পড়ুন>>রেওনিওঁ দ্বীপ থেকে ‘ডিপোর্ট’ ৪৬ শ্রীলঙ্কান অভিবাসী
তারা ইউরোপের কয়েকটি দেশে থাকা তাদের গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কান ও বাংলাদেশি নাগরিকদের পূর্ব ইউরোপ থেকে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে নিয়ে আসতে মূল ভূমিকা পালন করেছেন৷
মুদি দোকানদার থেকে পাচারচক্রের হোতা
মামলার প্রধান আসামী ফ্রান্সের ওয়াজ ডিপার্টমেন্টের সেরিফন্তেন এলাকায় একটি ছোট মুদি দোকান পরিচালনা করতেন৷ প্রিয়তর্ষণ নামে শ্রীলঙ্কার এই অভিবাসীকে চার বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে৷
দোকানে ব্যবসার পাশাপাশি তিনি একটি আন্তর্জাতিক অবৈধ অভিবাসন নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন বলে পুলিশি তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে৷
রায়ে বলা হয়েছে, অভিবাসীদের সাথে যাতায়াতের শর্ত, রুট, পরিবহণের জন্য অভিবাসীদের সংখ্যা, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির কিছু দুর্নীতিবাজ শুল্ক কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ এবং সেইসাথে পাচারের অর্থ নিয়ে সমঝোতা করতেন তিনি৷
আরও পড়ুন>> ইটালি-ফ্রান্স সীমান্তে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক অভিবাসীর মৃত্যু
তার তিন সহযোগী যারা প্যারিস অঞ্চলে বাস করেন, তাদেরকে ১২ মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং এক থেকে তিন হাজার ইউরো জরিমানা করা হয়েছে৷
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের সীমান্তবর্তী দেশগুলি সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে তারা পর্যায়ক্রমে মানবপাচারকারী হয়ে ওঠেন৷
মামলার আরেক আসামী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন৷ তাকে যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানোর কথা থাকলেও তিনি তার প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন৷
এই অভিযুক্তকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং সাজা ভোগের পর ভবিষ্যতে ফরাসি ভূখণ্ডে প্রবেশে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত৷
পড়ুন>> ফ্রান্সে ‘ডিপোর্ট’ আতঙ্কে ২৪ ভারতীয় অনিয়মিত অভিবাসী
মামলার অন্য নয়জন সহযোগীর ভূমিকা এই পাচারের ক্ষেত্রে গৌণ বলে বিবেচনা করেছে আদালত৷ তাদের ছয় থেকে ৩০ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে দেওয়া হয়েছে৷ এসব ব্যক্তিদের বেশিরভাগই ইতিমধ্যে প্রাক-বিচার আটকে তাদের সাজা ভোগ করেছে৷
অনিয়মিত অভিবাসীদের পাচার বিষয়ক কেন্দ্রীয় ফরাসি দপ্তর (অক্রিয়েস্ট) এই মামলার সার্বিক তদন্তের দায়িত্বে ছিল৷
এমএইউ/আরআর (এএফপি, লো ফিগারো)