ফরাসি উপকূলরক্ষীদের দাবি, যুক্তরাজ্যের জলসীমায় প্রবেশ করতে যাওয়া একটি অভিবাসী নৌকাকে উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েও সেটি রক্ষা করেনি ব্রিটিশ রেসকিউ সার্ভিস৷ নৌকাটিতে ৩৮ জন অভিবাসী ছিলেন যাদেরকে পরবর্তীতে ফরাসি উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়৷
ব্রিটিশ রেসকিউ সার্ভিসের বিরুদ্ধে এবার ৩৮ অভিবাসী নিয়ে ঝুঁকিতে পড়া একটি অভিবাসী নৌকাকে উদ্ধার না করার অভিযোগ এনেছে ফরাসি উদ্ধার পরিষেবার একটি দল৷
উত্তর ফ্রান্সের ইউনিয়ন সলিদের দুয়ান কোস্টগার্ড জানায়, ‘‘ব্রিটিশ জলসীমায় প্রবেশ করার সময় নৌকাটিতে থাকা অভিবাসীদের উদ্ধার করা হবে বলে আমাদের নিশ্চিত করা হয়৷ কিন্তু তারা সেটি করতে সম্পূর্ন ব্যর্থ হয়েছে৷ পরবর্তীতে নৌকাটিকে ফরাসি উপকূলের ফিরে আসতে হয়েছে৷’’
আরও পড়ুন>>অভিবাসীদের সাগর পাড়ি দেয়ার ভিডিও অনলাইনে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা
অভিবাসীদের বরাত দিয়ে ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানায়, অভিবাসীরা ক্লান্ত, ভীত এবং প্রচণ্ড শীতে কাঁপছিল৷ তাদের নৌকার ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে ফরাসি কর্তৃপক্ষ তাদের উদ্ধার করে ফ্রান্সে ফিরিয়ে আসে৷
জানা গেছে, ২ জানুয়ারি নৌকাটি ফ্রান্সের স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চ্যানেলের ব্রিটিশ অংশে পৌঁছেছিল৷ পরবর্তীতে তাদেরকে রাত নয়টায় ফরাসি জলসীমা থেকে উদ্ধার করা হয়৷
পড়ুন>>আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর ব্রিটিশ পরিকল্পনা আবারো চ্যালেঞ্জে
তবে, ব্রিটিশ সূত্র থেকে এই অভিযোগকে অস্বীকার করেছে৷ তাদের দাবি, নৌকাটি যুক্তরাজ্যের জলসীমায় প্রবেশ করেনি এবং সমুদ্রে অভিবাসীরা ঝুঁকিতে ছিল না৷ কারণ ফরাসি কোস্টগার্ড বোট ‘কেমোরভান’ অভিবাসী নৌকার আশেপাশে ছিল৷
সূত্রটি আরও জানায়, ব্রিটিশ উদ্ধার পরিষেবাগুলি পুরো ঘটনার সময় ফরাসি কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করেছিল৷ এছাড়া পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রয়োজনে ব্রিটিশ উদ্ধার জাহাজগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল৷
ব্রিটিশ সূত্রটি বলছে, এই অভিযোগটি সরাসরি ফ্রান্স সরকার বা কর্তৃপক্ষ করেনি৷ এটি মূলত উদ্ধার পরিষেবা কর্মীদের একটি ফরাসি ট্রেড ইউনিয়নের দাবি৷
আরও পড়ুন>>বেলজিয়াম থেকে যুক্তরাজ্যে সমুদ্রপাড়ি কমেছে ৭৫ শতাংশ
উদ্ধার অভিযানে জড়িত ফরাসি উপকূলরক্ষী রেমি ভ্যানডেপ্লাঙ্ক বলেন, নৌকাটি যখন ফরাসি জলসীমায় ছিল তখন থেকে তারা এটিকে ঘিরে রেখেছিল৷ পরে যুক্তরাজ্যের জলসীমায় প্রবেশ করলে ব্রিটিশ কোস্টগার্ড এটিকে অনুসরণ করেছিল৷
এই অভিবাসী নৌকাটি উত্তর ফ্রান্সের কালে উপকুলের উত্তরে অবস্থিত গ্রেভলাইন থেকে রওনা হয়েছিল৷ নৌকাটিতে ছিলেন একজন নারী, আর বাকীরা পুরুষ৷ অভিবাসীরা ইরান, ইয়েমেন এবং পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ভ্যানডেপ্লাঙ্ক বলেন, তারা ভিএইচএফ রেডিওতে ইউকে বর্ডার ফোর্সের জাহাজ টাইফুনের সাথে কথা বলেছিল৷ তারা দাবি করেছিল, নৌকাটিকে তারা উদ্ধারের দায়িত্ব নেবে৷
পড়ুন>>যুক্তরাজ্যে বেআইনিভাবে আশ্রয়প্রার্থীদের আটক রাখা হয়েছিল: বিবিসি
ফরাসি দিক থেকে অবশ্য শুরুতেই পূর্বে নৌকায় থাকা অভিবাসীদের উদ্ধারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু তারা প্রথমে সাহায্য প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করতে থাকেন৷
পরবর্তীতে ইউকে বর্ডার ফোর্স তাদের উদ্ধার না করলে অবশেষে তারা যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা ছেড়ে দেয় এবং ফরাসি অঞ্চলে ফিরে আসতে সম্মত হয়৷
ভ্যান্ডারপ্ল্যাঙ্ক বলেন, ‘‘আমরা ফিরে এসেছি এবং তাদের জিজ্ঞাসা করেছি যে তাদের সাহায্যের প্রয়োজন আছে কি না৷ তারা বলল না৷ এরপর আমরা আরো দুই ঘণ্টা তাদের অনুসরণ করলাম৷ এই মুহুর্তে (রাত ৯টা) আমরা তাদের আবার জিজ্ঞাসা করেছি যে, কোন সাহায্যের প্রয়োজন আছে কি না৷’’
ভ্যান্ডারপ্লাঙ্ক আরো জানান, ব্রিটিশ ও ফরাসি কর্তৃপক্ষ বিপজ্জনক যাত্রার ঝুঁকি কমাতে নৌকা ও হেলিকপ্টার টহলের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে৷ এটা একটা স্পষ্ট ভণ্ডামি৷
তিনি আরও বলেন, ‘‘একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া উচিৎ৷ মূলত আমাদের ভূমিকা হল অভিবাসীদের ব্রিটিশ জলসীমায় যাওয়া পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷ একটি চার্টার্ড ফেরিতে কী সরাসরি অভিবাসীদের নিয়ে যাওয়া যায় না? এক্ষেত্রে অন্তত তারা নিরাপদ থাকবে৷ সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সাংঘর্ষিক ও বিরোধপূর্ণ৷’’
এমএইউ/আরআর (টেলিগ্রাফ, নুভেল অবস)