২৪ অক্টোবর, ২০২২ তারিখে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে প্লাবিত রাস্তায় হাঁটছেন এক ব্যক্তি। সিত্রাং এর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লক্ষ লোককে নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: পিকচার এলায়েন্স
২৪ অক্টোবর, ২০২২ তারিখে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে প্লাবিত রাস্তায় হাঁটছেন এক ব্যক্তি। সিত্রাং এর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লক্ষ লোককে নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: পিকচার এলায়েন্স

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় মানবপাচারের অন্যতম প্রধান কারণ। রিপোর্টে জলবায়ুগত বিপর্যয়ের কারণে জনসংখ্যার স্থানচ্যুতির উদাহরণ হিসেবে ফিলিপাইন্স এবং বাংলাদেশে আঘাতকারী বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ও দূর্যোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

মানবপাচার ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ২৩ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিসি)। 

জাতিসংঘের এই সংস্থাটি ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১৪১টি দেশের তথ্য সংগ্রহ এবং ৮০০টি মামলার বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন>> ফ্রান্সে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আশ্রয় আবেদন বাংলাদেশিদের

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে যুক্ত পরিবেশগত বিপর্যয় লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘরবাড়ি, স্বাস্থ্য এবং কাজকে বিপন্ন করে তোলে। পাশাপাশি এটি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার লোকেদের অপরাধী গোষ্ঠীর হাতে শোষণের বৃহত্তর ঝুঁকিও তৈরি করে।

বিশ্বব্যাপী মানবপাচারের ঘটনাগুলো ছাড়াও প্রতিবেদনে ইউক্রেন যুদ্ধের সাথে যুক্ত বিপর্যয়ের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে আগামী বছরগুলিতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে যা অনুপাতিকভাবে দরিদ্র সম্প্রদায়, প্রধানত কৃষি বা মাছ ধরার কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করবে। 

পড়ুন>>মানবপাচার রোধে বাংলাদেশের আরও সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জাতিসংঘের

প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ফ্যাব্রিজিও সারিকা গণমাধ্যমকে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থরা জীবিকা নির্বাহের উপায় থেকে বঞ্চিত হয়ে নিজেদের সম্প্রদায় থেকে পালাতে বাধ্য করে যা তাদেরকের পাচারকারীদের সহজ শিকারে পরিণত করে।”

দুই কোটিরও বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত

শুধুমাত্র ২০২১ সালে জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের কারণে ২ কোটি ৩৭ লাখ লোক অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে অনেককে পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে চলে যেতে হয়েছে।

ইউএনওডিসি রিপোর্টে, জলবায়ুগত বিপর্যয়ের কারণে জনসংখ্যার স্থানচ্যুতির উদাহরণ হিসেবে ফিলিপাইন বা বাংলাদেশে আঘাতকারী বিধ্বংসী টাইফুনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং ঝড়ের সংস্পর্শে তৈরি হওয়া এসব শক্তিশালী দুর্যোগের ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঘরছাড়া হয়। 

পড়ুন>> ইটালিতে অভিবাসী আগমন বৃদ্ধির কারণ জলবায়ু পরিবর্তন: গবেষণা প্রতিবেদন

টাইফুন হাইয়ানে ফিলিপাইন্সে ২০১৩ সালে প্রায় ছয় হাজার ৩০০ জন মানুষ জন মারা যায় এবং ৪৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, “ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র টাইফুন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় ৬৭০টি মানব পাচারের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।”

এছাড়া আরেকটি প্রাথমিক সরকারি ও এনজিও সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগের পরে এই ঘটনাগুলি বৃদ্ধি পেয়েছে।

একইভাবে বাংলাদেশে “বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সংলগ্ন সুন্দরবন অঞ্চলেও মানবপাচারের ঘটনা সনাক্ত করা হয়েছে।”

ভারত ও বাংলাদেশের এই সীমান্ত অঞ্চলটি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। .

আরও পড়ুন>>ছবিঘর: সিসিলিতে বাংলাদেশি কৃষকদের বেতন ভালো, জীবন কঠিন

এছাড়া, আফ্রিকার দেশ ঘানায় বারবার বন্যা এবং খরার কারণে গ্রামীণ জনসংখ্যা শহরের দিকে স্থায়ী হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 


এমএইউ/এআই (ইউএনডিসি প্রতিবেদন)


 

অন্যান্য প্রতিবেদন