৩২০ জনেরও বেশি অনিয়মিত অভিবাসীকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পর্তুগাল থেকে বেলজিয়ামে পাচারের অভিযোগে দুই ভারতীয় পাচারকারীকে দশ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ফ্রান্সের একটি আদালত। তাদেরকে পাঁচ বছরের জন্য ফ্রান্সে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
১৩ জন অনিয়মিত অভিবাসী নিয়ে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে পাঁচটায় ফরাসি-স্প্যানিশ সীমান্তের বিরিয়াতো টোলবুথে ফরাসি পুলিশের জেন্ডারমেরি শাখার একটি দলের আটক করে অভিযুক্ত দুই ভারতীয় পাচারকারীকে।
একটি কাভার্ড ভ্যানসহ সে সময় তাদের আটক করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন>>ফ্রান্সে আটক আফগান, ভারতীয়, পাকিস্তানি-সহ ৩৩ অভিবাসী
২৬ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার, ফ্রান্সের বায়োন অঞ্চলের আদালত মানবপাচারের অভিযোগে এই দুই অভিযুক্তকে দশ মাসের কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে৷ সাজা শেষের পর পাঁচ বছরের জন্য ফরাসি ভূখণ্ডে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা সাধারনত শেঙেন জোনের জন্যেও প্রযোজ্য হবে।
এক লাখ ইউরো অবৈধ মুনাফা
ফরাসি পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, এই দুই ব্যক্তি স্পেন এবং ফ্রান্সের মধ্যে কম নিয়ন্ত্রিত পর্বত অঞ্চলের একটি গিরিপথ দিয়ে নিয়মিত সীমান্ত অতিক্রম করে অভিবাসীদের পাচার করেছে।
পড়ুন>>যুক্তরাজ্য: আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের কুখ্যাত নেতা আটক
অভিযুক্তদের বিভিন্ন টেলিফোন আলাপের তদন্ত করে পুলিশ জানতে পেরেদছে, তারা কমপক্ষে ৪৭টি পাচারের কাজ সংগঠিত করেছে এবং প্রতি পাচারের জন্য জনপ্রতি ৩০০ ইউরো বা ৩০ হাজার টাকা সমমানের অর্থ নিয়েছেন। এই দুই অভিযুক্ত সবগুলো পাচার মিলিয়ে সর্বমোট ১ লাখ ইউরো বা এক কোটি টাকা সমমানের অবৈধ মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে।
আরও পড়ুন>>ফেরিতে অভিবাসী পাচারের দায়ে ফ্রান্সে চার ব্যক্তির সাজা
দুই অভিযুক্তের একজন ৩১ বছর বয়সি এবং আরেকজনের বয়স ২৪ বছর। আটকের সময় ৩১ বছর বয়সি ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি সরাসরি কোনো অর্থ পাননি। যাত্রীরা আগেই অন্য একজনকে অর্থ দিয়েছে।
তার দাবি, “ওই ব্যক্তি আমাকে আসা-যাওয়া বাবদ প্রতি ভ্রমণের জন্য ৫০০ ইউরো দিয়েছেন৷”
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, এই ব্যক্তি মাদকাসক্ত৷
অপরদিকে তার সহযোগী ২৪ বছর বয়সি ব্যক্তি দাবি করেন, “পর্তুগালের থাকা পাচার দলের ব্যক্তিটি আমাদের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে।”
পড়ুন>>ফ্রান্স: মানবপাচারের দায়ে ১৪ শ্রীলঙ্কান অভিবাসীর সাজা
রায়ের আগে প্রসিকিউশন দল এই মামলার আদালতের কাছে এক বছরের কারাদণ্ডের অনুরোধ করে৷ তাদের দাবি ছিল এই ব্যক্তিরা মানবপাচারের চক্র তৈরি করে এটি স্পষ্টভাবে সংগঠিত করেছিল।
অপরদিকে, আসামীদের আইনজীবী বলেন, আমরা নিশ্চিত নয় যে চালক সরাসরি মুনাফা পেয়েছেন নাকি একটি অংশ পেয়েছেন। এই দুই ব্যক্তির চক্রের একটি অংশ হতে পারে কিন্তু কোনোভাবেই মূলচক্রী নন।
নিয়মিত সাজা পাচ্ছে পাচারকারীরা
ফ্রান্স স্পেন সীমান্তের এই অঞ্চল পর্তুগাল থেকে অভিবাসীদের ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে পাচারে সম্প্রতি বেশ সক্রিয় একটি অভিবাসন রুট হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলে সক্রিয় অন্য মানবপাচারকারীদেরও গত বছর থেকে নিয়মিত সাজা দিয়ে আসছে ফরাসি আদালত।
আরও পড়ুন>>চ্যানেলে ঝুঁকিতে পড়া নৌকা উদ্ধার নিয়ে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের বাদানুবাদ
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর, ১৮ মাসের দীর্ঘ তদন্ত শেষে একটি ভারত-পাকিস্তান নেটওয়ার্কের ১১ জন সদস্যকে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল।
অবৈধ অভিবাসনে সহায়তার দায়ে ফ্রান্সে বোর্দো শহরের আদালত এই রায় দিয়েছিল। অভিযুক্তরা মূলত পর্তুগাল এবং ফ্রান্সের মধ্যে অভিবাসী পাচারে যুক্ত ছিল।
এর আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর, অন্য তিনজন ভারতীয়কে পর্তুগাল থেকে অনিয়মিত অভিবাসীদের পরিবহনের দায়ে তাদের আট মাসের কারাদণ্ড এবং ফরাসি অঞ্চলে প্রবেশে ১০ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল।
এমএইউ/আরকেসি (এএফপি)