কাবুলের উপকণ্ঠে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে সন্তানের সঙ্গে আফগান নারী৷ ছবি: রয়টার্স
কাবুলের উপকণ্ঠে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে সন্তানের সঙ্গে আফগান নারী৷ ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তানের সমস্ত নারী শরণার্থী মর্যাদার যোগ্য, এমনটাই জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয় সংস্থা। তবে এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দেয়ার বিষয়টি প্রতিটি দেশের উপর নির্ভর করবে।

ইইউ এজেন্সি ফর অ্যাসাইলাম (ইইউএএ) তার প্রতিবেদনে বলেছে, নারীদের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং তালেবানের কঠোর ধর্মীয় 'শরিয়া' আইন প্রয়োগের অর্থ হলো আফগানিস্তানে নারী ও কিশোরীরা সাধারণভাবে নিপীড়নের ঝুঁকিতে রয়েছে, তাই তাদের শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া উচিত। 

আফগান নারীদের কাজ, শিক্ষা, চলাফেরার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং চুক্তিতে শিক্ষা, মতপ্রকাশ এগুলি মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে তালেবান। সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নারীদের প্রবেশিকা পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।


সুইডেন সব আফগান নারীকে শরণার্থী মর্যাদা দিয়েছে

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলির সহযোগিতায় তৈরি করা হয় ইইউএএ কান্ট্রি গাইডেন্স। তবে ইউরোপীয় দেশগুলিকে আশ্রয়ের আবেদনগুলি মূল্যায়নে ইইউএএ কান্ট্রি গাইডেন্সকে বিবেচনা করতে হবে। আইন অনুসারে সবকিছু অনুসরণ করতে দেশগুলি বাধ্য নয়৷

সুইডেন ইতিমধ্যেই ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সিদ্ধান্ত নেয়, আফগান নারীদের জেনেভা কনভেনশনের অধীনে শরণার্থী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক আইনের ইউরোপীয় জার্নালে মেলটেম ইনেলি-সিগার এবং নিকোলাস ফাইথ টানের যুগ্ম ব্লগ পোস্ট অনুসারে, সুইডিশ মাইগ্রেশন এজেন্সি দেখেছে "বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আইনি, প্রশাসনিক, পুলিশ অথবা বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে আফগান নারীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়। এই ব্যবস্থাগুলি একাধিক নিপীড়নের সমান।" 

২০২১ সালের আগস্ট এবং ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে ৪০২ জন নারী আবেদনকারীকে সুরক্ষা দিয়েছে সুইডেন। মোট ৪৫১ জন নারীর মধ্যে ৮৯% সুরক্ষা পেয়েছেন। আফগানিস্তান থেকে আসা সমস্ত নারী, নাবালিকা, শিশুকন্যাকে শরণার্থী মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুইডিশ অভিবাসন মন্ত্রক। এই সিদ্ধান্তের পর জানানো হয়, যাদের আশ্রয়ের আবেদন খারিজ করা হয়েছে তারা ফের আবেদন করতে পারেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয়ের আবেদন দ্রুত বেড়েছে। ২০২২ সালে আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ (প্রায় নয় লাখ ২৪ হাজার) আবেদন জমা পড়েছে। সিরীয়দের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম আবেদনকারী আফগান নাগরিকেরা।

আফগানিস্তানের কাবুলে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বরের ছবি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের শিক্ষার উপর তালেবানি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন তারা৷ ছবি: পিকচার-অ্যালায়েন্স/এপি/ফাইল
আফগানিস্তানের কাবুলে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বরের ছবি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের শিক্ষার উপর তালেবানি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন তারা৷ ছবি: পিকচার-অ্যালায়েন্স/এপি/ফাইল

বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অগ্রগতি নেই’

তালেবান প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণির পরে কিশোরীদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করে। এরপর গত মাসে বেসরকারি ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। তালেবান-নেতৃত্বাধীন সরকারের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী নিদা মোহাম্মদ নাদিমের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নারী পুরুষ নির্বিশেষে মেলামেশা রুখতে এই নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিছু বিষয় পড়ানো হচ্ছে যেগুলির ফলে ইসলামিক নীতি লঙ্ঘন হচ্ছে। কঠোর পোশাকবিধি সহ নানা কারণ দেখিয়ে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নিষেধকে ন্যায্য বলে দাবি করেছে কট্টর ইসলামপন্থি তালেবান।

নারীদের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি না দিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চিঠি দেয়ার কথা জানান উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জিয়াউল্লাহ হাশমি । শনিবার (২৮ জানুয়ারি) অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) চিঠির একটি অনুলিপি পায়। সেখানে বলা হয়েছে, নারীরা স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরেট স্তরের জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে পারবেন না। যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ অমান্য করে, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

আফগানিস্তানের কয়েকটি প্রদেশে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা শুরু হয়।

আফগান মেয়েদের মাধ্যমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। নারীদের কর্মসংস্থানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়৷ তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে পোশাক পরতে হয়। ছবি: পিকচার-অ্যালায়েন্স/এপি ছবি/ইব্রাহিম নুরুজি
আফগান মেয়েদের মাধ্যমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। নারীদের কর্মসংস্থানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়৷ তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে পোশাক পরতে হয়। ছবি: পিকচার-অ্যালায়েন্স/এপি ছবি/ইব্রাহিম নুরুজি


বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনের এক মুখপাত্র মোহাম্মদ করিম নাসারি বার্তাসংসস্থা এপিকে বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলি এই নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং দুঃখিত। তার কথায়, "আমাদের একটাই আশা ছিল, হয়তো কোনো উন্নতি হতে পারে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ জাতীয় চিঠির পরে, অগ্রগতির কোনো লক্ষণ নেই।"


সাম্প্রতিক সপ্তাহে আফগানিস্তান সফরে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস এবং জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ উভয়েই তালেবান আধিকারিকদেরকে আহ্বান জানান, যাতে নারীদের কাজ করা এবং স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।



মারিও ম্যাকগ্রেগর/আরকেসি

 

অন্যান্য প্রতিবেদন