কোনো চুক্তি বা বিমা ছাড়া অনথিভুক্ত অভিবাসীদের শোষণের অভিযোগে মরক্কোর একজন ব্যবসায়ী নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে স্প্যানিশ পুলিশ। অনেকটা আধুনিক দাসপ্রথার মতো এই ব্যবসায়ী অভিবাসীদের ৮০ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে বাধ্য করতেন বলে জানা গিয়েছে।
স্পেনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে আলিকান্তের কাছে অবস্থিত একটি গুদামে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের শোষণকারী এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে স্প্যানিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ২৭ জানুয়ারি, শুক্রবার প্রকাশিত সংবাদে স্প্যানিশ গণমাধ্যমগুলো এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অভিযুক্ত সন্দেহভাজন একজন ৪৫ বছর বয়সি ব্যবসায়ী। তিনি মরোক্কোর নাগরিক। তিনি কোনো প্রকার কাজের চুক্তি বা বিমা ছাড়াই তার কোম্পানিতে পাঁচজন অনিয়মিত অভিবাসীকে নিয়োগ করেন।
পড়ুন>> স্পেন: ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা অবৈধ তামাক কারখানায় শোষণের ‘শিকার’
তিনি এসব অভিবাসীদের কোনো যান্ত্রিক সহায়তা ছাড়াই মালবাহী ট্রাক খালি করতে ৮০ কেজি পর্যন্ত ব্যবহৃত পোশাকের বান্ডিল পিঠে বহন করতে বাধ্য করতেন।
এমন অমানবিক কাজের কারণে এসব ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছিল। কাজের মাঝখানে কোনও বিরতি ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগীরা এসব কাজ করছিলেন। বিনিময়ে তাদেরকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০০ ইউরো বেতন দেয়া হত। যা স্পেনের ন্যূনতম আইনি বেতন কাঠামোর চেয়েও কম।
পিঠে ও হাঁটুতে ব্যথা
পুলিশ জানিয়েছে, টানা এসব কাজে যুক্ত থাকার ফলে অভিবাসীর পিঠে এবং হাঁটুতে ব্যাথার অভিযোগ করেছেন।
অভিবাসীরা জানায়, অসুস্থতার কারণে তারা কাজে অনুপস্থিত থাকলে সেক্ষেত্রে তাদের অনুপস্থিতিতে বেতন দেয়া হয় না। যার কারণে এসব নথিভুক্ত কর্মচারীরা ব্যথা সত্ত্বেও ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে কাজে যোগাদান করেছিলেন।
আরও পড়ুন>> স্পেন: অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে রাজনীতিবিদ গ্রেপ্তার
স্প্যানিশ পুলিশের মতে, এই ব্যবসায়ী পেশাদার ঝুঁকির ক্ষেত্রে সবচেয়ে মৌলিক নিয়মগুলিকে সম্মান না করে অভিবাসীদের শোষণ করেছেন। তিনি তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অপব্যবহার করেছেন। কারণ এসব ব্যক্তিরা স্প্যানিশ ভাষা না জানার কারণে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচতেন ছিলেন না।
ওই ব্যবসায়ীকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের পর শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই তাকে শ্রমশোষণের দায়ে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্পেনে অনিয়মিত অভিবাসীদের শোষণের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। দেশটি ভূমধ্যসাগর থেকে ইউরোপে যাওয়ার অন্যতম প্রধান প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত।
পড়ুন>>স্পেনে বিমান থেকে পালানো ২২ অভিবাসীর মুক্তি না প্রত্যাবর্তন?
২০২৩ সালের জানুয়ারির শুরুতে স্প্যানিশ পুলিশ অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণে জড়িত একটি নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়ার দাবি করেছে। বরাবরের ন্যায় অমানবিক অবস্থায় থাকা এই ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগ মরক্কোর নাগরিক।
এই নেটওয়ার্ক অভিবাসীদের তীব্র গরমে দৈনিক ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দক্ষিণ স্পেনের বিভিন্ন খামারে কাজে কাজ করতে বাধ্য করেছে।
এমএইউ/আরকেসি