ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে শরণার্থী কাউন্সিল দাবি করেছে, “গত বছর ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের দশজনের মধ্যে অন্তত ছয় জন (৬০%) আশ্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরণার্থী হিসাবে স্বীকৃতি পাবেন।” সংস্থাটি আরও দাবি করেছে, যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় আসা লোকের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমেছে।
২০২২ সালে চ্যানেল পেরিয়ে আসা ৪৫ হাজার ৭৪৬ জন জন পুরুষ, নারী এবং শিশুর কথা উল্লেখ রয়েছে তথ্যে। দেখা গিয়েছে, ২৫ হাজার ১১৯ জনকে শরণার্থী হিসাবে যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেওয়া হবেশরণার্থী কাউন্সিলের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, “ফ্যামিলি রিইউনিয়ন বা পরিবার পুনর্মিলনের মতো পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাজ্যে নতুনভাবে জীবন শুরু করার লোকের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমেছে। দেখা যাচ্ছে বিপজ্জনক পথে চ্যানেল পেরিয়ে আসা মানুষেরা শরণার্থী মর্যাদা চেয়ে সবচেয়ে বেশি আবেদন করছে।
কম নিরাপদ
শরণার্থী কাউন্সিল বলছে, সার্বিক পুনর্বাসনের সংখ্যা ২০১৯ সালে পুনর্বাসন ৭৫ শতাংশ কম হয়েছে। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকে ৩৬ শতাংশ কম ভিসা ইস্যু করছে যুক্তরাজ্য।
শরণার্থী কাউন্সিল উল্লেখ করেছে, ২০২২ সালে কয়েক হাজার ইরানি নাগরিক চ্যানেল পেরিয়ে আসেন। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুনর্বাসনের মাধ্যমে শুধুমাত্র নয়জন ইরানিকে যুক্তরাজ্যে নিরাপদ পথে আসার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
যারা ছোট নৌকায় চ্যানেল পেরিয়ে আসেন, তাদের মধ্যে অনেকেই যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক সমস্যার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। যুক্তরাজ্যে তুলনামূলকভাবে আশ্রয় মঞ্জুর হওয়ার হার বেশি। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশরণার্থী কাউন্সিলের মতে, “২০২২ সালে ছোট নৌকায় চ্যানেল পেরিয়ে আসা ব্যক্তিদের ৪০ শতাংশ এসেছেন নির্দিষ্ট পাঁচটি দেশ থেকে। দেশগুলি হলো, আফগানিস্তান, ইরান, সিরিয়া, ইরিত্রিয়া এবং সুদান। এই দেশগুলিতে সংকট এবং নিপীড়নের সমস্যা রয়েছে। এই দেশগুলি থেকে আসা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আশ্রয় দানের হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বা তারও বেশি।”
নতুন নীতি: ‘অমানবিক ও অন্যায়’
ব্রিটিশ সরকার ছোট নৌকায় চ্যানেল পার হওয়া ব্যক্তিদের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া আরো কঠোর করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
শরণার্থী কাউন্সিল আশঙ্কা করছে, “যদি সরকারি প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয় তাহলে যারা চ্যানেল অতিক্রম করেছে তারা আর আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারবে না। তারা যে পদ্ধতিতে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছেন, সেটি আইনি নয়। সেক্ষেত্রে ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীনতার ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারেন। দীর্ঘদিন আটক থাকার ঝুঁকিও রয়েছে।”
শরণার্থী কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন বলেছেন, যারা চ্যানেল পার হন তাদের জরুরী সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। এর অন্য কোনো বিকল্প নেই। কোনো নিরাপদ পথ নেই যার মাধ্যমে তারা নিরাপত্তা পেতে পারেন। কোনো শরণার্থী ভিসাও নেই।”
২০২২ সালে চ্যানেল পেরিয়ে আসা ৪৫ হাজার ৭৪৬ জন জন পুরুষ, নারী এবং শিশুর কথা উল্লেখ রয়েছে তথ্যে। দেখা গিয়েছে, ২৫ হাজার ১১৯ জনকে শরণার্থী হিসাবে যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে।
শরণার্থী কাউন্সিলের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, "ফ্যামিলি রিইউনিয়নের মতো পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাজ্যে নতুনভাবে জীবন শুরু করার লোকের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমেছে। দেখা যাচ্ছে বিপজ্জনক পথে চ্যানেল পেরিয়ে আসা মানুষেরা শরণার্থী মর্যাদা চেয়ে সবচেয়ে বেশি দাবি করছেন। "
শরণার্থী কাউন্সিল বলছে, সার্বিক পুনর্বাসনের সংখ্যা ২০১৯ সালে পুনর্বাসন ৭৫% কম হয়েছে। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকে ৩৬% কম ভিসা ইস্যু করছে।
শরণার্থী কাউন্সিল উল্লেখ করেছে, ২০২২ সালে কয়েক হাজার ইরানি নাগরিক চ্যানেল পেরিয়ে আসেন। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুনর্বাসনের মাধ্যমে শুধুমাত্র নয়জন ইরানিকে যুক্তরাজ্যে নিরাপদ পথে আসার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
যারা ছোট নৌকায় চ্যানেল পেরিয়ে আসেন, তাদের মধ্যে অনেকেই যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক সমস্যার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। যুক্তরাজ্যে তুলনামূলকভাবে আশ্রয় মঞ্জুর হওয়ার হার বেশি। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ।
শরণার্থী কাউন্সিলের মতে "২০২২ সালে ছোট নৌকায় চ্যানেল পেরিয়ে আসা ব্যক্তিদের ৪০% এসেছেন নির্দিষ্ট পাঁচটি দেশ থেকে। দেশগুলি হলো, আফগানিস্তান, ইরান, সিরিয়া, ইরিত্রিয়া এবং সুদান। এই দেশগুলিতে সংকট এবং নিপীড়নের সমস্যা রয়েছে। এই দেশগুলি থেকে আসা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আশ্রয় দানের হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বা তারও বেশি।"
নতুন নীতি: 'অমানবিক ও অন্যায়'
ব্রিটিশ সরকার ছোট নৌকায় চ্যানেল পার হওয়া ব্যক্তিদের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া আরো কঠোর করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। শরণার্থী কাউন্সিল আশঙ্কা করছে, যদি সরকারি প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয় তাহলে যারা চ্যানেল অতিক্রম করেছে তারা আর আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারবে না। তারা যে পদ্ধতিতে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছেন, সেটি আইনি নয়। সেক্ষেত্রে ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীনতার ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারেন। দীর্ঘদিন আটক থাকার ঝুঁকিও রয়েছে।"
রিফিউজি কাউন্সিল বলছে, ব্রিটিশ করদাতাকে "প্রতি বছর ১১ লাখ ৪০ হাজার ইউরো" খরচ হতে পারে। শরণার্থী কাউন্সিলের সিইও এনভার সলোমন বলেছেন, যারা চ্যানেল পার হন তাদের "সাহায্যে জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। এর অন্য কোনো বিকল্প নেই। কোনো নিরাপদ পথ নেই যার মাধ্যমে তারা নিরাপত্তা পেতে পারেন। কোনো শরণার্থী ভিসা নেই।"

সরকারের নতুন প্রস্তাবগুলিকে “অমানবিক” এবং “অন্যায়” বলে উল্লেখ করেছেন সলোমন। তিনি আরো বলেন, “নিরাপত্তা চাওয়া কোনো অপরাধ নয়। কোনো অভিভাবকই সঙ্গত কারণ ছাড়াই কোনো শিশুকে ভয়ানক বিপজ্জনক যাত্রায় ঠেলে দিতে চান না।”
সরকার কী বলেছে
সোমবার, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান জাতীয়তা এবং সীমান্ত বিল নিয়ে নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছেন। তিনি বলেছেন যে আধুনিক দাসত্বের শিকার হয়েছেন বলে যারা দাবি করছে তাদের সনাক্ত করা যাবে। কারণ এগুলি মিথ্যা বলেই মনে করেন তিনি।ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি অনুসারে, একজন দোষী সাব্যস্ত ধর্ষককে ব্রিটেন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু তিনি নিজেকে ‘মানবপাচারে জড়িত অপরাধী চক্রের শিকার’ বলে দাবি করে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আপিল মুলতুবি থাকা ব্যক্তিটিকে জামিন দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ করা হয়েছে যে তিনি আরেকটি ধর্ষণ করেছেন এবং এখনও যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।
একটি বিবৃতিতে, ব্র্যাভারম্যান বলেছিলেন, “আধুনিক দাসপ্রথার শিকার হওয়া প্রকৃত ব্যক্তিরা সিস্টেমের অপব্যবহারের ফলে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন।'”তার কথায়, “যুক্তরাজ্যে যে পরিবর্তনগুলি প্রয়োগ করা হবে তার অর্থ হ'ল যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধী প্রমাণিত হয় তবে সরকার তার সুরক্ষা প্রত্যাখ্যান করার এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।”
আধুনিক দাসত্ব আইনের অপব্যবহার?
এএফপি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ জাতীয় অভিযোগ আনলে সেক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে সাহায্যকারী সংস্থার কোনো ব্যক্তি বা পুলিশের বক্তব্য লাগবে।
এখন পর্যন্ত, ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম (এনআরএম) আধুনিক দাসপ্রথার শিকার হওয়ার দাবি করে এবং একাধিক সরকারি ও সামাজিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত এমন কাউকে সেবা দিতে শুরু করেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি নভেম্বরে জানায়, “আলবেনীয় অপরাধ গোষ্ঠীগুলি এনআরএমকে নিয়ে কারসাজি করছে।এনসিএ বলেছে, কয়েকটি অপরাধ গোষ্ঠী এমন লোকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল,যারা তাদের জন্য গাঁজা খামারে কাজ করে,মাদক বিক্রি বা পতিতাবৃত্তির কাজ করে। তারা দাবি করে, আধুনিক দাসপ্রথার শিকার তারা। তাদের কোনো অপরাধ নেই।
ব্র্যাভারম্যান নিজেই ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর পার্লামেন্টে সতর্ক করেছিলেন, '”আধুনিক দাসপ্রথার শিকার বলে দাবি করা মানুষের সংখ্যা এ দেশে বাড়ছে। তারা অবৈধভাবে আশ্রয় দাবি করে। তারা কার্যকরভাবে অর্থনৈতিক অভিবাসী। তারা মানবিক উদ্দেশে এখানে আসছে না।” এই যুক্তি দিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যের আইন আরো কঠোর করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতিকে সম্মান জানাব। এটি সামগ্রিক অভিবাসনের পরিসংখ্যানকে কমিয়ে আনতে এবং অবৈধ অভিবাসনের ক্ষতিকে দমন করবে।”
যুক্তরাজ্যে কার্যকর হওয়া নতুন পদক্ষেপগুলিকে "বিপজ্জনক" বলে বর্ণনা করেছে অ্যান্টি-স্লেভারি ইন্টারন্যাশনাল।
অ্যান্টি-স্লেভারি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এই ব্যবস্থাগুলি আধুনিক দাসপ্রথার হাত থেকে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সুরক্ষা দিতে অস্বীকার করতে পারে।
সংস্থাটি যোগ করেছে, “বিলটিতে একটি কঠোর 'ট্রমা ডেডলাইন' রয়েছে। বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে, যা পরে অনেক সময় মিথ্যা বলে ধরে নেওয়া হয় এবং তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
‘পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ৪৯%-কে অপরাধ করতে বাধ্য করা হয়’অ্যান্টি-স্লেভারি ইন্টারন্যাশনাল আরও বলেছে, ২০২২ সালে সম্ভাব্য পাচারের শিকারদের ৪৯ শতাংশকে অপরাধ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যে যারা অপরাধ করেছে বিলটি এলে তাদের সহায়তা বন্ধ হতে পারে এবং পাচারকারীর খপ্পরে পড়া ব্যক্তিদের অপরাধী বলে গণ্য করা হতে পারে।
আরেকটি দাতব্য সংস্থা আনসিন ইউকে যুক্তরাজ্যে পাচার এবং আধুনিক দাসপ্রথার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পাশে থাকে। এনসিএ ও ব্র্যাভ্যারম্যানের দাবির জবাবে তারা বলেছে, অপরাধী গোষ্ঠীগুলি এনআরএমের সঙ্গে কারসাজি করেছে।
তারা বলেছে, আধুনিক দাসব্যবস্থার শিকার বলে দাবি করা বেশিরভাগ লোকই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০২১ সালে হার ছিল ৯১ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৯৭ শতাংশ । প্রতিটি ক্ষেত্রে সবগুলো আবেদন যাচাই করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ তিন শতাংশ আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। এর মানে এই নয় যে তারা সিস্টেমের অপব্যবহার করেছে।
ওপেন ডেমোক্র্যাসিও ২০২২ সালের অক্টোবরে রিপোর্ট করেছে। ক্যানারি ওয়ার্কার্স জানিয়েছে, “সরকার ‘গুরুতর' অপরাধীদের সংখ্যার পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আধুনিক দাসব্যবস্থার শিকার হিসাবে দাবি করা যেসব ব্যক্তিদের সরকার অপরাধী বলে মনে করেছিল, তাদের নিয়ে কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই।ক্যানারি ওয়ার্কার্স বলেছে,”মিথ্যা দাবির পরিমাণ খুব কম। অনিবার্যভাবে, নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় দেশের সবচেয়ে দুর্বল কিছু মানুষের উপর এই আইনের প্রভাব পড়বে।'”
এমা ওয়ালিস/আরকেসি