(ফাইল ছবি) ফ্রান্সে ধর্মঘটের সমর্থনে আয়োজিত একটি বিক্ষোভের ছবি। ফটো ক্রেডিট:রয়টার্স
(ফাইল ছবি) ফ্রান্সে ধর্মঘটের সমর্থনে আয়োজিত একটি বিক্ষোভের ছবি। ফটো ক্রেডিট:রয়টার্স

ইউরোপ তথা ফ্রান্সে আসা অভিবাসীরা প্রায়শই নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ধর্মঘট প্রত্যক্ষ করে থাকেন। ফ্রান্সে ধর্মঘট করা সংবিধান স্বীকৃত একটি অধিকার। ধর্মঘট পালনের আদ্যপান্ত নিয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টসের বিশেষ প্রতিবেদন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্সসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ইয়েলো ভেস্ট বা হলুদ জ্যাকেট আন্দোলন, জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা রাজনৈতিক কারণে ধর্মঘটের তীব্রতা দেখা গেছে৷ 

২০২৩ সালের শুরু থেকে ‘পেনশন আইনের সংস্কার’ নিয়ে নতুন করে ধর্মঘট দেখছে ফ্রান্সে অবস্থানরত অভিবাসীরা ও দেশটির নাগরিকেরা। সর্বশেষ মঙ্গলবার ধর্মঘটের প্রভাবে সমগ্র ফ্রান্সের গণপরিবহণ এবং সরকারি পরিষেবাগুলো এক প্রকার ব্যহত হয়েছে। 

প্রায়ই বলা হয় যে ফ্রান্স সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে ধর্মঘট ডাকার দিক থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। যদিও সাইপ্রাস ও ডেনমার্কে এই তালিকায় ফ্রান্সের আগে অবস্থান করছে। 

আরও পড়ুন>>২০২২ সালে ফ্রান্সে রেকর্ড আশ্রয় আবেদন

কিন্তু এসব হরতাল বা ধর্মঘটের আইনি ভিত্তি কি? ধর্মঘট কেন ডাকা হয়? কিংবা যোগদানের বাধা নিষেধ আছে কীনা সেটি নিয়ে অভিবাসীদের পরিষ্কার ধারনা থাকে না। ইনফোমাইগ্রেন্টসের পাঠকদের জন্য নীচে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো:

ধর্মঘট বা হরতাল কী?

ধর্মঘট বা হরতালকে একটি সম্মিলিত প্রতিবাদের অংশ বা আন্দোলন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। নির্দিষ্ট দাবি আদায়ে ধর্মঘটকারী সম্পূর্ণভাবে কাজে যোগদান কিংবা সেবা প্রদান বন্ধ করে দিয়ে থাকে। এটি রাষ্ট্রীয়, প্রাতিষ্ঠানিক বা সমাজে ঘটতে পারে। যেমন সরকারকে দাবি আদায়ে চাপ প্রয়োগে কিংবা কোন আইন বাস্তবায়ন থেকে সরে আসতে। 

আবার একটি কোম্পানিতে কর্মরতরা বেতন, কাজের অবস্থা কিংবা অন্যান্য সুযোগ সুবিধার দাবিতে মালিকের বিরুদ্ধেও ধর্মঘট পালন করতে দেখা যায়। 

উনবিংশ শতক পর্যন্ত ফ্রান্সে ধর্মঘট নিষিদ্ধ ছিল এবং এটি একটি ফৌজদারি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো। ১৮৬৪ সালে শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞাগুলি বিলুপ্ত করা হয়। 

পড়ুন>>ফ্রান্স: অভিবাসী পাচারের দায়ে দুই ভারতীয় নাগরিকের কারাদণ্ড

কিন্তু পুরোদমে ধর্মঘট করার সুযোগ পেতে ফরাসিদের অপেক্ষা করতে হয় ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ধর্মঘটের অধিকার স্বীকৃত হয়েছিল।

১৯৪৬ সালের ২৭ অক্টোবর এবং ১৯৫৮ সালের ফ্রান্সের সংবিধান প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, “প্রচলিত আইনি কাঠামোর মধ্যে ধর্মঘট করার অধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হবে।”

কারা ধর্মঘট করার অধিকার রাখেন?

ফ্রান্সে ধর্মঘট করার অধিকার আইন স্বীকৃত ব্যক্তি স্বাধীনতা হিসেবে বিবেচিত হয়। পুলিশ, সেনা সদস্য, জেল প্রহরী এবং ম্যাজিস্ট্রেটরা ছাড়াও যেকোন কর্মচারী বেশ কিছু শর্তে ধর্মঘট করার অধিকার রাখেন। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিকে কোন নির্দিষ্ট ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। 

আরও পড়ুন>>ফ্রান্স: নতুন ফরাসি অভিবাসন বিলের খসড়া চূড়ান্ত 

শর্তসমূহ: 

  • ধর্মঘট ব্যক্তিগত হতে পারে না। একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত কাজের জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
  • অবশ্যই একটি যৌথ আন্দোলনে ধর্মঘটে যোগ দিতে হবে। উদাহরণস্বরুপ একটি জাতীয় ধর্মঘটের ক্ষেত্রে একটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত দুইজন ব্যক্তিকে নৈতিক সমর্থন ও যোগ দিতে হবে।
  • ধর্মঘটে যোগদানের আগে অবশ্যই একজন ব্যক্তিকে সামষ্টিক ও ব্যক্তিগতভাবে তার নিয়োগকর্তাকে অবহিত করতে হবে।
  • ধর্মঘট পালন করার ঘোষণা দেয়া কর্মচারীকে অবশ্যই কাজ বন্ধ করে এটি পালন করতে হবে।
  • ধর্মঘটের অবশ্যই একটি পেশাদার ও অধিকার সংশ্লিষ্ট কারণ থাকতে হবে।
  • ধর্মঘটের কোনো আইনি মেয়াদ নেই, এটি একদিন, কয়েক সপ্তাহ কিংবা মাসব্যাপী স্থায়ী হতে পারে।

পড়ুন>> ফ্রান্সে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আশ্রয় আবেদন বাংলাদেশিদের

কোনো নিয়োগকর্তা কোনো কর্মচারীকে ধর্মঘটে যেতে বাধা দিতে পারবেন না। ধর্মঘটের অধিকার ব্যবহার করার জন্য অনুমোদন নিতে হবে না। নিয়োগকর্তাকে শুধুমাত্র নোটিশ দিয়ে অবহিত করতে হবে। 

তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, একজন ব্যক্তি যদি ধর্মঘট পালন করে কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকেন সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দিনের বেতন কেটে রাখার অধিকার নিয়োগকর্তার রয়েছে। তবে এটি নিয়ে কোন প্রকার হয়রানি কিংবা কাজ থেকে বের করে দেয়ার আইনি সুযোগ নেই। 


এমএইউ/এআই





 

অন্যান্য প্রতিবেদন