অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে ও মরক্কোতে স্প্যানিশ বিনিয়োগ বাড়াতে আলাদা চুক্তি সই করেছে স্পেন ও মরক্কো সরকার৷ বৃহস্পতিবার মরক্কোর রাজধানী রাবাতে পশ্চিম সাহারার সঙ্গে চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে চুক্তিগুলো সই হয়৷
সহিংস সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পশ্চিমা শক্তির মিত্র হিসেবে মরক্কো পরিচিত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নেও সহায়ক এই দেশটি৷ ফলে রাবাতে সই হওয়া এই চুক্তিকে পারস্পরিক বিশ্বাস নির্মাণের একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ৷
অভিবাসন নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগ চুক্তি অনুযায়ী মরক্কোতে ৮৭৩ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করবে স্প্যানিশ সংস্থাগুলো৷ শিক্ষা ও কর্ম প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত চুক্তিতেও সই করেছেন তারা৷
আরও পড়ুন>>স্পেন: অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের আশ্রয় প্রক্রিয়ার বিস্তারিত
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে স্পেনের অন্তত ১১ মন্ত্রী এবং মরোক্কোর ১৩ মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন৷ উত্তর আফ্রিকায় স্পেনের ছিটমহল সেউটা এবং মেলিলায় সীমান্ত পারাপারে শুল্ক অফিস খোলার বিষয়েও সম্মত হয়েছে দেশ দুটি৷

যদিও ছিটমহল দুটিকে ইউরোপীয় অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ মরোক্কো। তবে শুল্ক অফিস কবে খোলা হবে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করা হয়নি৷ তবে এর মধ্য দিয়ে সীমান্তের দুই পাশের স্থানীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে বলে আশা করা যাচ্ছে৷
বছরখানেক আগে ২৩ আফ্রিকান পুরুষের মৃত্যুর জের ধরে স্পেন এবং মরক্কোর সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে দুই দেশের পুলিশ৷ সীমান্তে নিহতদের সবাই সুদানের শরণার্থী ছিল বলে জানা গেছে৷
পড়ুন>>স্পেনে অভিবাসী শিবিরে আগুন, উচ্ছেদের অভিযোগ
অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কয়েক মিলিয়ন ইউরো পেয়েছে মরক্কো৷ মরক্কো সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢুকেছে স্পেনে৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬৪ হাজার৷ তবে মরক্কোকে অনুদান দেয়ার পর ইউরোপে অবৈধ অনুপ্রবেশ কমে হয়েছ ৩১ হাজার৷ এজন্য দেশটিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ইউরোপের কর্মকর্তারা৷
নৌকায় চেপে ২০২২ সালে প্রায় ২৯ হাজার অভিবাসী স্পেনের মূল ভূখণ্ডে এবং ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছায়৷ এ ছাড়াও হাজারও মানুষ মারা গেছে বা সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছে। এই অভিবাসীদের মধ্যে মরক্কোর তরুণারও ছিল৷
৮০ হাজার বাসিন্দা নিয়ে স্পেনের একক বৃহত্তম বিদেশি সম্প্রদায় তৈরি করেছে মরক্কো৷ মরক্কোর সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশও স্পেন৷ অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও মরক্কো সরকারকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে স্পেনীয়রা৷
পড়ুন>>স্পেনে বিমান থেকে পালানো ২২ অভিবাসীর মুক্তি না প্রত্যাবর্তন?
মরক্কোর প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখানউচ অবশ্য চুক্তিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ তিনি এই চুক্তিকে ’সম্পর্কের নতুন গতিশীলতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷ এমনকি পশ্চিম সাহারার প্রস্তাবে সমর্থন দেয়ায় স্পেনকে ধন্যবাদও জানাতে ভোলেননি তিনি৷
২০২১ সালে পশ্চিম সাহারা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের একটি স্প্যানিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দিয়ে মরক্কোর বিরাগভাজন হয় স্পেন৷ ফলে সেউটার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সহজ করে দেয় রাবাত৷ তাতে ছোট্ট শহরটিতে প্রবেশ করে হাজার হাজার মানুষ৷
আরও পড়ুন>>২০২২ সালে স্পেনে আসার পথে প্রায় ২৪০০ অভিবাসীর প্রাণহানি
তবে বৃহস্পতিবারের এই চুক্তির পর সব উত্তেজনা প্রশমনের স্বপ্ন দেখছে দেশ দুটি৷ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সানচেজ বলেন, " পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য স্পেন এবং মরক্কোর মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করছি৷’’
কাস্টিলা-লা মাঞ্চা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি এবং ইসলামিক শিক্ষার অধ্যাপক মিগেল আর্নান্দো দে লাররামেন্দি বিশ্বাস করেন, পশ্চিম সাহারা প্রশ্নে মরক্কোর দিকে ঝুঁকেছে স্পেন সরকার৷ তিনি বলেন, ’চরমপন্থা এবং অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মরক্কোর সঙ্গে সম্পর্ক থাকাটা জরুরি৷‘
২০১৫ সালের পর এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো৷
আরও পড়ুন>>২০২২: স্পেনে অনিয়মিত অভিবাসনে ব্যাপক হ্রাস
স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী সানচেজ এএফপিকে বলেন, ‘'আমরা মরক্কো এবং স্পেনের মধ্যে সম্পর্কের একটি নতুন পর্যায়কে একীভূত করছি৷'' দুটি দেশের মধ্যে অনেক অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি৷
অন্যদিকে, আখানউচ এএফপিকে বলেন, ‘'মরক্কো-স্পেন সম্পর্ক কখনই সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের এই স্তরে পৌঁছায়নি৷‘'
টিএম/আরকেসি (এপি, এএফপি)