পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চার লাখ ৫৬ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। ফাইল ফটো। আরাফাতুল ইসলাম।
পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চার লাখ ৫৬ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। ফাইল ফটো। আরাফাতুল ইসলাম।

ইউরোপের দেশ পর্তুগালে থাকেন বাংলাদেশের জুবের আহমেদ। প্রায় আট বছর ধরে পুর্তগালে আছেন তিনি। এরইমধ্যে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটিতে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন জুবের।

ইউরোপের এই দেশটিতে থাকা বাংলাদেশের সংখ্যা কম নয়। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা বলছে, পর্তুগালে বসবাসরত বাংলাদেশির মোট সংখ্যা এক হাজার ৬০০ জন। সেখানে কেমন আছেন বাংলাদেশিরা?

ইউএন নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জুবের জানান, পুর্তগালের অবস্থা অনেকটাই সুবিধাজনক। তবে ইউরোপের সব দেশে পরিস্থিতি এমন নয়।

শত শত শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও পরিবার

তিনি বলেন, "আমি পর্তুগালের বেরিরো শহরে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে গড়া অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। ২০১৫ সাল থেকে আমি এখানে আছি। এখানে আমি উবার চালাই। যখন প্রথম এখানে আসি তখন কাজ পাওয়া একটু কঠিন ছিল কারণ আমি ভাষা জানতাম না। তাই মানুষের সাথে যোগাযোগ করা অনেক কঠিন ছিল। এখন পরিস্থিতি একটু ভাল। চাকরি পাওয়া কঠিন, তারপরও আমি পর্তুগালকে ভালবাসি কারণ এখানকার মানুষ বন্ধুবৎসল।" 

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার শ্রমিক মধ্য়প্রাচ্যের দেশগুলোতে পাড়ি জমান। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এই অভিবাসীরা নতুন দেশে গিয়ে নতুন পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হতে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। শোষণের শিকারও হন।

ইটালি: ২০২৩ সালে মৌসুমি ও স্পনসর ভিসার ডিক্রি ঘোষণা

এদিকে প্রতিবছর শত শত শিক্ষার্থী শ্রমিক এবং পরিবার ইউরোপের দেশ পর্তুগালে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন। অনেকেই আবার ইউরোপের অন্যান্য দেশেও পাড়ি জমাতে চান। জাতিসংঘ বলছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মোট চার লাখ ৫৬ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। 

অভিবাসন প্রক্রিয়া

জাতিসংঘের অভিবাসীদের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ফেলিপ গঞ্জালেজ মোরালেস গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করেছেন।

এসময় তিনি শোষণ এবং র্নিযাতন বন্ধে বাংলাদেশকে সরকারকে অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, "বাংলাদশে থেকে চাকরি নিয়ে বিদেশে আসার খরচ অনেক বেশি। এর ফলে অভিবাসীরা ঋণের জালে আটকা পড়ে যায়। তিনি এসময় মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কথা উল্লেখ করেন।"

জাতিসংঘের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকারকে অভিবাসনের সকল পর্যায়ে অর্থাৎ বিদেশে যাত্রা করা আগে, বিদেশে কাজ করার সময় এবং দেশে ফেরার পর অভিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় পদক্ষেপ করার আহ্বান জানান। 

রোমানিয়ায় ১৩০০-এর বেশি বাংলাদেশির আশ্রয়-আবেদন

অধিকার সুরক্ষায় সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন ফেলিপ জি মোরালেস। পাশাপাশি তিনি অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় অভিবাসন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ এবং উন্নত করার উপর গুরুত্ব প্রদান করেন। তার মতে, কম দক্ষ শ্রমিকেরা প্রায়ই শোষণের শিকার হযে থাকে।

শোষণ বন্ধে যে পদক্ষেপ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে এই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো যেতে পারে। যেমন শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা, বিদেশে যাত্রার পূর্বে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য প্রদান এবং একটি সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন। অভিবাসন বিষয়ে একটি ডাটাবেস তৈরির মাধ্যমে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো যেতে পারে।

সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগর পাড়িতে বাংলাদেশিরা তৃতীয়

ফেলিপ গঞ্জালেজ মোরালেস অবশ্য পরিস্থিতি পরির্বতনে যেই দেশে অভিবাসীরা যাচ্ছে সেই দেশের দায়িত্বের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষায় তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

সেইসঙ্গে নারী অভিবাসীরা যেন কোনো ধরনের শোষণের শিকার না হন, তাই বিশেষ মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তাছাড়া বাংলাদেশি অভিবাসীদের শোষণের সঙ্গে জড়িত ঘটনাগুলোর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন এই প্রতিনিধি।

আরআর/আরকেসি (ইউএন নিউজ)

 

অন্যান্য প্রতিবেদন