গ্রিসের লেরোস দ্বীপের সমুদ্র উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় চার শিশু ও এক নারীসহ মোট পাঁচ অভিবাসনপ্রত্যাশী নিহত হয়েছেন।
গ্রিসের কোস্টগার্ড জানিয়েছে, সাগরে একটি নৌকা ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে এক ব্যক্তি কোস্ট গার্ডকে খবর দেয়। খবর পেয়ে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা উদ্ধারকারী জাহাজ ও হেলিকপ্টার নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এসময় কোস্টগার্ডের সদস্যরা এক নারীর দেহ এবং একটি শিশুকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। সেইসাথে নৌকাটিতে থাকে আরো ৩৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকেও উদ্ধার করা হয়।
কোস্টগার্ডের তথ্যমতে, অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা শিশুটি রোববার হাসপাতালে মারা যায়। তাছাড়া নৌকায় থাকে আরো তিনটি শিশুর পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।
এদিকে উদ্ধার করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে তিন অপ্রাপ্তবয়স্কসহ মোট পাঁচ জনের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। উদ্ধার হওয়া বাকি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোস্টগার্ডের সদস্যরা সাগরে প্রায় ডুবে যাওয়া অবস্থায় একটি নৌকা উদ্ধার করে।
গ্রিসে দ্বীপের নীতিনির্ধারণ (শিপিং অ্যান্ড আইল্যান্ড পলিসি) মন্ত্রী আইওনিস প্লাকিওতাকিস উদ্ধারকাজের প্রশংসা করেছেন। তবে তিনি এই ঘটনার জন্য মানবপাচারকারীদের দায়ী করেন। তার দাবি, "তুরস্কের মানবপাচারকারীরা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে যা তুরস্ক সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে।"
গ্রিসের এই দ্বীপটি তুরস্ক উপকুলের নিকটবর্তী। অভিবাসনপ্রত্যাশীরা প্রায়ই ছোট ছোট ডিঙিতে চড়ে সাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিসে পৌঁছানোর চেষ্টা করে থাকেন। ঝুঁকিপুর্ণ এই যাত্রাপথে প্রায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে।
পশ্চিম ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু বাড়ছে
এদিকে পশ্চিম ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিস ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে আসা বিদেশির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে৷ ঝূঁকিপূর্ণ এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়েন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, তুরস্ক ও অন্যান্য দেশ থেকে পশ্চিম ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপের দেশ গ্রিসে পৌঁছাতে গিয়ে ২০২২ সালে ৩২৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী নিহত অথবা নিখোঁজ হয়েছেন৷
২০২২ সালে নিহত ও নিখোঁজ হওয়ার এই সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় অন্তত তিনগুণ বেড়েছে বলে জানায় জাতিসংঘ৷ ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১১৫৷
এদিকে সাগর ও স্থল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অভিবাসীদের গ্রিসে আগমনের সংখ্যাও বেড়েছে৷ জাতিসংঘের পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০২২ সালে ১২ হাজার ৭৫৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী সাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিসে পোঁছেছেন৷ সেবছর ছয় হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী তুরস্ক সীমান্তের এভ্রোস নদী পার হয়ে গ্রিসে পৌঁছান৷
তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে এই দুই পথ পাড়ি দিয়ে গ্রিসে পৌঁছানো অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ছিল নয় হাজার ২০০ জন৷
পূর্ব ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে শুধুমাত্র তুরস্ক থেকেই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা আসছেন না, সাইপ্রাস এবং বুলগেরিয়া থেকেও অনেকে এই পথ পাড়ি দিয়ে গ্রিসে পৌঁছানোর চেষ্টা করে থাকেন৷
আরআর/আরকেসি (এপি, ডিপিএ)