(ফাইল ছবি) ফরাসি সীমান্ত পুলিশ পিএএফ এর একটি কার্যালয়ে কর্মরত একজন সদস্য। ছবি: মায়েভা পুলে/ইনফোমাইগ্রেন্টস
(ফাইল ছবি) ফরাসি সীমান্ত পুলিশ পিএএফ এর একটি কার্যালয়ে কর্মরত একজন সদস্য। ছবি: মায়েভা পুলে/ইনফোমাইগ্রেন্টস

ফরাসি সীমান্ত পুলিশ (পিএএফ) ঘোষণা করেছে, সেনেগাল, ইটালি, স্পেন, পর্তুগাল এবং বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষের যৌথ আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় ভূমধ্যসাগরের ফরাসি অঞ্চল কর্স বা কর্সিকা দ্বীপে একটি অনিয়মিত অভিবাসন নেটওয়ার্ক ও ভুয়া নথি বিক্রির চক্র ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

কর্স বা কর্সিকা ভূমধ্যসাগরের একটি দ্বীপ এবং ফ্রান্সের শাসনাধীন একটি রেজিওঁ বা অঞ্চল। এটি আয়তনের দিক দিয়ে ভূমধ্যসাগরের চতুর্থ বড় দ্বীপ।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং ডিসেম্বর মাসে দ্বীপে পরপর বেশ কয়েকটি মানবপাচার, শ্রম শোষণ ও জাল নথি বিরোধী গ্রেপ্তার অভিযানে পরিচালনা করেছিল ফরাসি প্রশাসন। 

আরও পড়ুন>>গোপন ঘাঁটিতে মানবপাচার সামগ্রী, ফ্রান্সে ছয়জনের সাজা

ফরাসি সীমান্ত পুলিশ (পিএএফ) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, তিনজন পুরুষ ও একজন নারীকে দ্বীপের আজাক্সিও ও বোরগো অঞ্চল থেকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছে থাকা নগদ ২০ হাজার ইউরো বা ২০ লাখ টাকা এবং কয়েকটি ব্যাংক একাউন্ট থেকে ১৮ হাজার ইউরো বা ১৮ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। 

মূলত এসব গ্রেপ্তার অভিযানের প্রায় এক বছর আগে থেকেই একটি মানবপাচার ও জাল নথি তৈরিতে জড়িত চক্র নিয়ে দীর্ঘ তদন্ত পরিচালনা করছিল ফরাসি সীমান্ত পুলিশ। তদন্তের এক বছর পর একজন প্রধান হোতাকে সনাক্ত ও আটক করতে সম্ভব হয় পুলিশ।

পড়ুন>>ফ্যাক্টচেক: ফ্রান্সে ৪০ শতাংশ বিদেশি কি নিষ্ক্রিয়?

একটি তদন্ত সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, দ্বীপের পোর্তো-ভেচিওতে বসবাসকারী নিজের বোনের সহায়তায় অত্যন্ত সুগঠিত একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করত দক্ষিণ কোর্সে বসবাসকারী উক্ত ব্যক্তি।

একই সূত্র আরও জানায়, তারা উভয়েই দশ বছর আগে ইস্যু হওয়া একটি ফরাসি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং একটি ফরাসি পাসপোর্ট বহন করছিলেন। কিন্তু তদন্তে উঠে এসেছে তারা দুজনই সেনেগালের নাগরিক এবং এই পরিচয় পত্রগুলো জাল। 

আরও পড়ুন>> ফ্রান্স: ধর্মঘটের অধিকার ও নিয়মসমূহ

এই নেটওয়ার্কটি তুরস্কের আইপি ব্যবহার করে বেলজিয়াম, পর্তুগাল, ইটালি ও স্পেনের জাল জাতীয় পরিচয়পত্র ও সোশ্যাল সিকিউরিটি বা স্বাস্থ্য সুবিধার কার্ড বিক্রি করত। 

এছাড়া তারা শেঙেন অঞ্চলের দেশগুলো থেকে চুরি করা বিভিন্ন পাসপোর্টকে জাল করে পুনঃবিক্রয়ে জড়িত ছিল। 

ফরাসি সীমান্ত পুলিশ পিএএফ জানিয়েছে, “নথিগুলোর নকলের গুণমান এবং নথির প্রকারের উপর নির্ভর করে এগুলো প্রতি নথি ২৫০ থেকে এক হাজার ইউরোর মধ্যে বিক্রি হয়েছে।”

পড়ুন>>ফ্রান্স-ইটালি সীমান্তে আটক আট অভিবাসী, পাকড়াও চালক

শ্রম শোষণ

সীমান্ত পুলিশ আরও জানায়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দ্রুত পরিবহন সংস্থা ব্যবহার করে গ্রাহকদের ঠিকানায় নথিগুলি পৌঁছে দিতেন। ২০২০ সাল থেকে এই নেটওয়ার্ক বহু সেনেগালের নাগরিককে অবৈধভাবে উপকৃত করেছে। 

উপকৃত ব্যক্তিরা কর্স দ্বীপের মূল কেন্দ্রে ও দক্ষিণ কর্সে রেস্তোরাঁ এবং হোটেলগুলিতে গ্রীষ্ম মৌসুমে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে আসেন। 

ফরাসি অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা বা ওকিউটিএফ নোটিশ পাওয়া অনিয়মিত পরিস্থিতিতে থাকা বেশ কিছু সেনেগালি কর্মীও এসব ভুয়া নথি ব্যবহার করে মৌসুমী কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। 

আরও পড়ুন>>২০২২ সালে ফ্রান্সে রেকর্ড আশ্রয় আবেদন

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, “এই চক্রের প্রধান সংগঠক দ্বীপের দক্ষিণে তার এক উদ্যোক্তা বন্ধুর মাধ্যমে শ্রম শোষণ ও কর ফাঁকির অপরাধেও জড়িত ছিলেন। তার উদ্যোক্তা বন্ধু নির্মাণ খাতে কোন কাজের চুক্তি ছাড়াই অবৈধ উপায়ে শ্রমিকদের নিয়োগ দিয়েছিলেন।”

এটির মাধ্যমে তারা যৌথভাবে কয়েক লক্ষ ইউরো অবৈধ মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। যার একটি অংশ নেটওয়ার্কের প্রধানের জন্য সেনেগালে একটি বাড়ি নির্মাণের অর্থায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।

ফরাসি পুলিশ ইউরোপীয় দেশগুলোর পুলিশের ঘনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় এসব ভুয়া নথির সুবিধা নেওয়া অনেক সুবিধাভোগীকে সনাক্ত করতে সম্ভব হয়েছে। 

পিএএফ জানিয়েছে, এই সুগঠিত নেটওয়ার্কটির সমস্ত কার্যক্রম ও কাঠামো ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। 


এমএইউ/এআই (এএফপি)





 

অন্যান্য প্রতিবেদন