রোমানিয়া সরকার দেশটি থেকে অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচারচক্র ভেঙে দিতে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানের আওতায় রাজধানী বুখারেস্ট এবং ইলফভ কাউন্টির ৩৪টি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এই অভিযানে প্রায় ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। এসব ব্যক্তিদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে সংগঠিত অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক অধিদপ্তরের সদর দপ্তর অর্থাত্ সিবিউ টেরিটোরিয়াল অফিসে আনা হচ্ছে।
১৩ ফেব্রুয়ারি, সোমবার, প্রকাশিত এক বিবৃতিতে রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশ জানিয়েছে, অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড টেররিজম অধিদপ্তরের প্রসিকিউটররা বুখারেস্ট, টেলিওরম্যান, ভ্যালসিয়া, ওল্ট, ডাম্বোভিস, গালাসি, ভ্রান্সা এবং আরাদ অঞ্চলের ৩৪টি বাড়িতে সংঘবদ্ধ পাচারকারীদের সন্ধানে অভিযান চালিয়েছে।
আরও পড়ুন>>ওয়ার্ক পারমিট ভিসার অপব্যবহার, বাংলাদেশিদের প্রতি ক্ষোভ রোমানিয়ার
অবৈধ অভিবাসন এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসাবে এই অভিযানটি স্থানীয় সিবিউ টেরিটোরিয়াল অফিস, রোমানিয়ান পুলিশের জেনারেল ইনস্পেক্টরেট এবং সীমান্ত পুলিশের যৌথ সমন্বয়ে পরিচালিত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে রোমানীয় নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি সংগঠিত অপরাধী চক্র গঠন করা হয়েছিল। এই চক্রের উদ্দেশ্য ছিল বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অভিবাসীদের পাচারে সহায়তা করা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই গ্রুপটি এখনো সক্রিয় রয়েছে।
পড়ুন>>২০২২: রোমানিয়ায় ১৩০০-এর বেশি বাংলাদেশির আশ্রয়-আবেদন
পুলিশ জানিয়েছে, মানবপাচার চক্রটি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা থেকে আসা অনিয়মিত ও নিয়মিত অভিবাসীদের আশ্রয় দেয় এবং সীমান্তে পাচার করে।
অভিবাসীদের নানা জায়গায় নিয়ে যায় সংগঠিত অপরাধচক্রটি৷ সদস্যদের মালিকানাধীন লরি, ট্রেলার এবং ভ্যানের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থার গাড়ি ব্যবহার করে তারা।
আরও পড়ুন>>বাংলাদেশ থেকে রোমানিয়া: ১৩ হাজারে আছেন তিন হাজার
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে পণ্য সরবরাহের অজুহাতে বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়িতে প্রতারণামূলক পদ্ধতিতে পশ্চিম রোমানিয়া সীমান্ত অতিক্রম করতে বেশ কয়েকটি পাচার করেছে এই নেটওয়ার্কটি।
তদন্তের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, সীমান্ত পুলিশের জেনারেল ইনস্পেক্টরেটের সহায়তায় সাম্প্রতিক সময়ে এই চক্রের মাধ্যমে পাঁচটি চালান নথিভুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দলের সদস্যরা প্রায় ১২০ জন অভিবাসীকে রোমানিয়ার বাইরে পাচার করার চেষ্টা করেছিল।
পড়ুন>>‘২০ হজার অভিবাসী রোমানিয়া হয়ে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করেছে’
পুলিশ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিরা আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন দেশটির ফৌজদারি কার্যবিধির প্রদত্ত পদ্ধতিগত অধিকার ও অন্যান্য আইনি সুরক্ষার সুবিধা ও ন্যায়বিচার আদায়ের সুযোগ পাবেন।
২০২২ সালে রোমানিয়ায় ১২ হাজার ৩০০টিরও বেশি আশ্রয় আবেদন নিবন্ধিত হয়েছে। ইউক্রেনীয়দের পর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি আশ্রয় আবেদন করেছেন যথাক্রমে ভারত, বাংলাদেশ, সিরিয়া ও পাকিস্তানের নাগরিকেরা। সর্বমোট এক হাজার ৩৬৪ জন বাংলাদেশি ২০২২ সালে রোমানিয়ার আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন।
গত বছরের শুরু থেকেই যেসব অভিবাসীরা রোমানিয়াকে ব্যবহার করে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করতে চাইছেন এমন ব্যক্তিদের গণহারে গ্রেপ্তার করছে বুখারেস্ট। ২০২২ সালের প্রথম আট মাসে সীমান্তে ১০ হাজার ৯১৬ জনকে অনিয়মিত অবস্থায় আটকের তথ্য দিয়েছিল রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশ৷
পড়ুন>>বৈধ পথে এসেও রোমানিয়ায় প্রতারণার শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকেরা
শেঙেন জোনে প্রবেশে করতে মরিয়া রোমানিয়া৷ তাই সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা বজায় রেখে ইইউর দেশগুলোর সম্মতি পেতে চেষ্টা করছে বলে দাবি জানিয়েছে এনজি ও অভিবাসন সংস্থাগুলি।
এমএইউ/আরকেসি