তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষের জন্য নিজেদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করেছে ইউরোপের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানি৷ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জার্মানিতে থাকা আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নেয়ার সুযোগ করে দিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো এই নতুন পদ্ধতির উদ্দেশ্য হলেও সিরিয়ানদের জন্য বিষয়টি এখনও একটু কঠিন৷
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবক বলেন, ‘‘ফেডারেল সরকার হিসাবে আমরা জার্মানিতে থাকা পরিবাগুলোকে তাদের আত্মীয়স্বজনকে সহযোগিতার সুযোগ দিতে চাই৷ কারণ ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, অনেকের চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন৷’’
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসারও জানিয়েছেন, জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কি এবং সিরিয়ান পরিবারগুলো ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত "ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের" নিয়ে আসতে পারবেন৷ তবে অফিশিয়াল প্রক্রিয়া মানতে হবে৷
জার্মানির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এআরডির বরাত দিয়ে বিল্ড অ্যাম জনটাগ এ তথ্য জানিয়েছে৷
এক ট্যুইটে ন্যান্সি ফেসার উল্লেখ করেছেন, সময়ের প্রয়োজনের সহযোগিতা দিতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ এ প্রক্রিয়ায় ভিসাপ্রার্থীদের তিন মাসের ভিসা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে জার্মান সরকার৷
আবেদন প্রক্রিয়া
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তুরস্কের নাগরিকদের তাদের দেশে থাকা জার্মান মিশনে গিয়ে ভিসার আবেদন করতে হবে৷
একজন ভিসাপ্রার্থী বৈধ পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করলে তাকে ভিসা দিতে বড়জোর পাঁচ কর্মদিবস সময় নেবে মিশন৷ এই সপ্তাহ থেকে তুরস্কে জার্মানির ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো থেকে ভিসা প্রার্থীরা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন৷
ভূমিকম্পের কারণে যারা পাসপোর্ট হারিয়েছেন, তারাও আবেদন করার সুযোগ পাবেন৷ জার্মান সরকার জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে তুরস্কে গঠিত টাস্ক ফোর্স বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে৷
তবে সিরিয়ানদের জন্য প্রক্রিয়াটি জটিল। দামেস্কে জার্মান দূতাবাসটি বন্ধ রয়েছে৷ ফলে দেশটির নাগরিকদের জার্মানি আসতে হলে প্রতিবেশী রাষ্ট্র লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কের জার্মান মিশন থেকে আবেদন করতে হবে৷
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সিরীয়দের জন্য বিষয়টি আরো সহজ করা যায় কিনা তা নিয়ে জানতে চাওয়া হয়৷ জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, সিরিয়ার প্রতিবেশি দেশগুলোতে গিয়ে তারা ভিসার আবেদন করতে পারবেন৷
জার্মানির পরিবারকে বহন করতে হবে সব খরচ
ভিসা পেতে কোনো ফি দিতে হবে না আবেদনকারীদের৷ কিন্তু কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে৷ এআরডির তথ্য অনুযায়ী, ভিসাপ্রত্যাশীর থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, যাতায়াতসহ সব ব্যয় বহনে অঙ্গীকার করতে হবে জার্মানিতে থাকা আত্মীয়দের৷
ভূমিকম্পে যারা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, যারা বাড়িঘর হারিয়েছে, আহত হয়ে চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদেরকেই দেয়া হবে ভিসা৷ আত্মীয়দের মধ্যে বাবা-মা, সন্তান, দাদা-দাদি, নাতি-নাতনি এবং ভাইবোনকে গ্রহণ করা হবে৷
তুর্কি নাগরিকদের স্বাস্থ্য বীমা, একটি বায়োমেট্রিক ছবি, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বসতির প্রমাণ, জার্মানি থাকা পরিবারটির সঙ্গে তার সম্পর্কের প্রমাণ হাজির করতে হবে৷
লাখো মানুষ ঘরহীন
পর পর দুটি ভূমিকম্পে মঙ্গলবার পর্যন্ত তুরস্কে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার৷ আর সিরিয়ায় মৃত্যের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮০০৷ এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন অন্তত ৮৫ হাজার মানুষ৷ ঘর হারিয়েছন কয়েক হাজার মানুষ৷
টিএম/এআই