দীর্ঘ আট বছর পর গ্রিসের লেসবস দ্বীপের মানুষ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ সামলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছেন বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির অভিবাসনমন্ত্রী নোতিস মিতারাচি৷
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ২০১৫ সালে বিপুল অভিবাসনপ্রত্যাশীর চাপ সামাল দিতে হয় ইউরোপকে৷ তখন গ্রিসের লেসবস দ্বীপেও বাড়তে থাকে আশ্রয়প্রার্থীদের ভিড়৷ ফলে স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবনও ব্যহত হয়৷
৯ ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্ব এজিয়ান দ্বীপ সফরে গিয়ে অভিবাসন মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি বলেন, ‘‘সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে এ দ্বীপের মানুষেরা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছে৷ শরণার্থী ইস্যুতে যে সংকট ছিল সেগুলো নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে৷’’
তুরস্কের উপকূলবর্তী হওয়ায় ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের সময় লেসবস দ্বীপ গ্রিসের ‘‘মাইগ্রেশন হটস্পট’’ হয়ে ওঠে৷ তারপর থেকে দ্বীপ জুড়ে অস্থিরতা, সামাজিক সংকট শুরু হয়৷ যা গত আট বছর ধরে সহ্য করছেন দ্বীপটির স্থানীয় বাসিন্দারা৷
মিতারাচি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘অভিবাসন এখন আর বড় সমস্যা নয়, যা দ্বীপের বাসিন্দাদের উদ্বিগ্ন করবে৷ আমি মনে করি, শরণার্থীদের সংখ্যা কমে যাওয়ার সুফল স্থানীয়রা উপলব্ধি করতে পারছে৷ লেসবস এখন স্পষ্টতই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে৷’’
লেসবসের মেয়র স্ট্র্যাটিস কাইটেলিস বলেন, ‘‘আমাদের দ্বীপ এখন স্বাভাবিকতার একটি পর্যায়ে এসেছে৷ আমাদের এখানে উন্নয়ন হচ্ছে৷ স্থানীয়রা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছে৷ তারা ও আমরা যাতে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারি৷’’
অভিবাসন পরিচালনায় অবদান রাখায় স্থানীয়দের উন্নয়নে দুই কোটি ২২ লাখ ইউরো অনুদান পেয়েছে লেসবস পৌরসভা৷ এর মধ্যে সলিডারিটি ফান্ডের ব্যবস্থাপনায় ১০ কোটি ৪০ লাখ ইউরো অর্থায়নে ২০টি অবকাঠামো প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে৷
অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ইতিবাচক বার্তা দেয়া হলেও আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন এখনও থেমে নেই৷ গত সপ্তাহেই সেখানে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে৷ প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন৷
গ্রিসের উপকূলরক্ষীরা জানিয়েছে, ৭ ফেব্রুয়ারির নৌকাডুবির পর সমুদ্রে থাকা আরও সাতজন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে৷ জীবিতদের বরাত দিয়ে উপকূলরক্ষীরা জানিয়েছেন, তুরস্ক থেকে ছেড়ে আসা রাবারের তৈরি নৌকায় মোট ৪১ জন আরোহী ছিলেন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল ইআরটি জানিয়েছে, অভিবাসনপ্রত্যাশীরা সোমালিয়া, ইয়েমেন এবং সিরিয়ার নাগরিক৷
হিমশীতল ঠাণ্ডার মধ্যেও ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির পরিসংখ্যান বলছে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপ যাত্রা থেমে নেই৷
অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চোরাচালান চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে৷ ডিসেম্বরে দুই হাজার ৮০০ জন এবং জানুয়ারিতে দুই হাজার ৬০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী গ্রিসে এসেছেন৷ যাদের মধ্যে এক হাজার ৩০০জন এই দ্বীপে আসেন৷ এখন দ্বীপটির অভিবাসী অভ্যর্থনা ও শনাক্তকরণ কেন্দ্রে ৪ হাজার ৬০০ আশ্রয়প্রার্থী রয়েছেন৷
টিএম/এআই