উন্নত জীবনের খোঁজে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ পৌঁছানের পথে গত চার বছরে অন্তত আট হাজার ৪৬৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন৷
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে৷
সংস্থাটি বলছে, ২০১৯ সাল থেকে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসার চেষ্টা করেছে৷ তাদের মধ্যে প্রায় আট হাজার ৪৬৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ভূমধ্যসাগরে মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছে৷
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের এমন মৃত্যুর আংশিক দায় ইউরোপীয় সরকারদের ঘাড়ে চাপিয়েছে সংস্থাটি৷
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে করে সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, ‘‘অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে ইউরোপীয় দেশগুলোর বল প্রয়োগ, সীমান্ত কঠোর করা এবং যারা কোনোমতে চলে আসেন তাদের ফেরত পাঠানোর কারণেই এতো ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিতে হচ্ছে তাদের৷’’
৪০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় সীমান্তে পুশব্যাক বা ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলার কথা বলা হলেও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সহিংস আচরণ করা হচ্ছে৷
ফেরত পাঠানোর সময় যারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন তাদের অনেকে মরক্কো থেকে স্পেনে, তুরস্ক থেকে গ্রিসে এবং লিবিয়া ও তিউনিসিয়া থেকে ইতালিতে যেতে চেয়েছিলেন৷
আন্তর্জাতিক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীদের জোর করে ফেরত পাঠানো নিয়ম বর্হিভূত আচরণ বলেও উল্লেখ করেছে এনজিওটি৷
‘কারো কারো জন্য নিরাপদ’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকানদের এবং গত বছর ইউক্রেন ছেড়ে আসা নাগরিকদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপ ‘দ্বৈত নীতি’ অনুসরণ করেছে বলেও অভিযোগ তুলেছে সেভ দ্য চিলড্রেন৷
সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ শুরু করলে দেশটির ৪০ লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে ইউরোপ৷ যাদের ৪০ শতাংশ শিশু৷
দারিদ্র্য ও যুদ্ধ থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের খোঁজে আফ্রিকা ও এশিয়ার হাজারো মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসতে চায়৷ সেখানে অভিবাসীদের জন্য একটি প্রধান ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে উঠেছে লিবিয়া৷ গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়ার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এ অবস্থা তৈরি করেছে মানবপাচারকারীরা৷ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে অভিবাসীদের তারা তুলে দেয় ঝুঁকিপূর্ণ রাবারের নৌকায়৷
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বাধা দিতে লিবিয়া কর্তৃপক্ষ এবং উপকূলরক্ষীদের চাপ দিয়ে আসছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ৷ জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, গত চার বছরে ২৪ হাজার ৬৮০ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে লিবিয়া ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷
জাতিসংঘের তদন্তে উঠে এসেছে, আটক রাখার সময় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করাসহ মারধর, ধর্ষণ এবং নির্যাতন করা হয়েছে৷
টিএম/আরআর (এপি)