২০২২ সালের শেষ দিকে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইটালির নতুন ডানপন্থি সরকারের অভিবাসন নীতি নিয়ে ইউরোপজুড়ে চলছে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা। ক্ষমতায় আসার ১০০ দিন পার করেছেন জর্জা মেলোনি। রোম থেকে ইনফোমাইগ্রেন্টসের বিশেষ প্রতিবেদন।
রোম থেকে ইনফোমাইগ্রেন্টসের বিশেষ সংবাদদাতা মোহাম্মাদ আরিফ উল্লাহ, খোসরাও মানি ও শরিফ বিবি।
কট্টর অভিবাসন বিরোধী হিসেবে গত অক্টোবরে ক্ষমতায় এসে ইউরোপ জুড়ে এক প্রকার শঙ্কা তৈরি করেছে জর্জা মেলোনির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। ওশান ভাইকিং জাহাজকে ইটালির বন্দরে ভিড়তে না দিয়ে ক্ষমতায় আসার শুরুতেই ফরাসি সরকারের সাথে কূটনৈতিক বিবাদে জড়ায় জর্জা মেলোনি।
আরও পড়ুন>>>ইটালিতে অভিবাসীদের শোষণের অভিযোগ বাংলাদেশি মধ্যস্থতাকারীর বিরুদ্ধে
কিন্তু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতি ছাড়াও রাজধানী রোমে অবস্থানরত অভিবাসীরা কী ভাবছেন অভিবাসীরা সেটি জানার চেষ্টা করেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস।
অভিবাসন নীতি ইতিমধ্যে ‘বিপর্যস্ত’
অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে প্রথমে সুইডেনে এসেছিলেন আফগান শরণার্থী আরাশ।
সুইডেন থেকে ইটালিতে এসে অপ্রাপ্তবয়স্ক স্বীকৃতি পান তিনি।ইটালির নিয়ম অনুযায়ী ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর সরকারি পরিষেবা ত্যাগ করতে হয় এই তরুণকে।
তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টস্কে বলেন,
“ইটালির সার্বিক আশ্রয় ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই বিপর্যস্ত ও অপরিকল্পিত। নতুন সরকার আবার অভিবাসন নীতিতে কী করবে আমি জানিনা। এখানে নতুন করে আর কিছুই করার নেই।”
পাচঁ বছর ধরে ইটালিতে বাস করা এই তরুণ বর্তমানে একটি ইটালীয় রেস্তোরাঁর শেফ হিসেবে রোমের উপকণ্ঠে বাস করেন।
পড়ুন>>সীমান্ত সুরক্ষার নামে মানব পাচারকারীদের ‘উপহার’ দিতে যাচ্ছে ইইউ: ইটালির এনজিও
তার মতে, “আমি নাবালক হিসেবে বৈধতা পাওয়ার পর পাঁচ বছর মেয়াদি রেসিডেন্স পারমিট পেয়েছিলাম। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। প্রতিবার এটি নবায়ন করতে নানা জটিলতা ও শর্ত পূরণ করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত চাকরি ও বেতনের শর্ত মেনে বারবার কার্ড নবায়ন করতে হয়।”
নাবালক হিসেবে আসার পর ১১ মাস শরণার্থী শিবিরে ছিলেন আরাশ। সেখানে পড়ালেখা ও ইটালীয় ভাষা শেখার সুযোগ পেলেও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর আর সেই সুযোগ পাননি তিনি।
“নতুন সরকারের পদক্ষেপ চোখে পড়েনি”
বাংলাদেশি অভিবাসী সিরাজ পঞ্চায়েত ২০০৮ সালে ইটালিতে আসেন। বর্তমানে রোমের উপকন্ঠে একটি ‘মানি ট্রান্সফার’ বা অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।
নতুন সরকার আসার পরে নতুন কোন অভিবাসী বিরোধী পদক্ষেপ নিতে গেছে কিনা সেটি জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে।
আরও পড়ুন>>লিবিয়াকে টহল বোট দিল ইটালি
উত্তরে তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন,
“গত অক্টোবরে নতুন সরকার আসার শুরু থেকেই সবাই বিভিন্ন আতঙ্ক ও পরিবর্তনের কথা বলে আসছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি এখনও তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। অনিয়মিত অভিবাসীদের গণহারে আটকের মতো কোন ঘটনা রোমে আমি দেখিনি।”
তিনি আরো বলেন, “হয়ত নির্বাচনে জেতার জন্য জোট রাজনীতিতে অনেক কথা প্রচারণায় বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আসলে এখানে আদালত এবং আইন এত দ্রুত পরিবর্তন হওয়ার কথা না। সম্প্রতি নতুন সরকার ঘোষিত সিজনাল ও নন সিজনাল ভিসার ডিক্রিতে অভিবাসী কোটা ও সেক্টরের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।”
পড়ুন>>ইটালি: ২০২৩ সালে মৌসুমি ও স্পনসর ভিসার ডিক্রি ঘোষণা
“অভিবাসীদের জন্য কোন সুবিধা নেই”
২৮ বছর বয়সি ফেরেশতা নিজামি ইটালিতে আছেন ছয় বছর ধরে। রোমের একটি রেস্তোঁরার সহ পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন এই নারী উদ্যোক্তা।
তিনি বলেন,
“ইটালিতে অনেক আগে থেকেই শরণার্থী মর্যাদা প্রাপ্ত ও অভিবাসীদের জন্য তেমন কোন আর্থিক সুবিধা নেই। শিক্ষা লাভেরও তেমন সুযোগ নেই। নতুন সরকার এসে বন্ধ করে দেবে তেমন কোন খাত আছে বলে আমি মনে করিনা।”
এই আফগান নারী জানান, “আমার রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে। নবায়ন করতে দিলেও এখনও নতুন কার্ড হাতে পায়নি। আগামী মার্চে আমাকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলে আমি অর্থের বিনিময়ে তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছি।”
আরও পড়ুন>>জলে ভাসা নারীকে উদ্ধার
ইটালির আর্থ সামাজিক বাস্তবতায় এখানে একটি বাসা ভাড়া করা শরণার্থীদের পক্ষে বেশ কঠিন বলেও জানান ফেরেশতা নিজামি।
“অনিয়মিতদের জন্য নেই কোনো সুবিধা”
বাংলাদেশি অভিবাসী তারেক ইটালিতে আছেন ২০১৭ সাল থেকে। ৩১ বছর বয়সি এই ব্যক্তি এখনও একজন অনিয়মিত অভিবাসী।
তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন,
“এখানে অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য উল্লেখ করার মতো কোন সুযোগ ও সুবিধা বিদ্যমান নেই। তাই আমি মনে করিনা নতুন সরকারের হাতে বড় কোনো পরিবর্তনের সুযোগ আছে।”
তার মতে, “অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য কোনো সহায়তা না থাকলেও দিনশেষে বাসা ভাড়া ও খাবারের টাকা আপনাকে জোগাড় করতেই হবে। কাজ করেই মাস শেষে আপনাকে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। নতুন সরকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে এটা ঠিক, তবে আমি এখনো নতুন কিছু দেখিনি।”
রোমের অভিবাসীরা নতুন সরকার নিয়ে আপাত দৃষ্টিতে বড় কোনো পরিবর্তন না দেখার কথা বললেও ইটালির অভিবাসন সংস্থা, এনজিও ও শ্রমিক সংগঠনগুলো বর্তমান সরকারের নানা নীতির সমালোচনা করে আসছে।
বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিতদের নিয়মিত না করা, উদ্ধার জাহাজগুলোর উপর কড়াকড়ি আরোপ এবং রাজনীতিতে অভিবাসী বিরোধী মনোভাবকে স্থায়ী করার পরিকল্পনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।
এমএইউ/আরকেসি