সেন্ট্রাল ভমধ্যসাগরের ইটালি উপকূলে সক্রিয়  ফরাসি এনজিও এমএসএফ এর একটি উদ্ধার জাহাজ। ছবি: এমএসএফ
সেন্ট্রাল ভমধ্যসাগরের ইটালি উপকূলে সক্রিয় ফরাসি এনজিও এমএসএফ এর একটি উদ্ধার জাহাজ। ছবি: এমএসএফ

প্রতি বছর ভূমধ্যসাগর ও বলকান রুট পাড়ি দিয়ে ইটালিতে আসেন আশ্রয়প্রার্থীরা। ইটালিতে আসা অভিবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশ ও আবেদন জমাদানে বেশ কিছু ভিন্নতা রয়েছে। এক্ষেত্রে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে উপকূলে আসা ব্যক্তিরা এবং বলকান রুট অথবা বিমানযোগে আসা অভিবাসীদের জন্য রয়েছে আলাদা পদ্ধতি। ইনফোমাইগ্রেন্টসের বিশেষ প্রতিবেদন।

রোম থেকে ইনফোমাইগ্রেন্টসের বিশেষ সংবাদদাতা মোহাম্মাদ আরিফ উল্লাহ, খোসরাও মানি ও শরিফ বিবি।

বলকান সীমান্তের কাছাকাছি এবং ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত হওয়ায় প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী সংঘাত, যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে বাচঁতে ইটালিতে প্রবেশ করেন।

কিন্তু এসব আশ্রয়প্রার্থীরা কি সহজেই আশ্রয় ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারেন? মানবপাচার চক্র, দালাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভুল সংবাদের ফলে ইটালির উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে অনেকেই এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানেন না। 

আরও পড়ুন>>ইটালিতে অভিবাসীদের শোষণের অভিযোগ বাংলাদেশি মধ্যস্থতাকারীর বিরুদ্ধে

ইটালিতে মোটাদাগে দুটি সীমান্তে সবচেয়ে বেশি আশ্রয়প্রার্থী প্রবেশ করেন। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা উপকূল থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আসেন হাজারো আশ্রয়প্রার্থী। 

অপরদিকে, বলকান অঞ্চল ও স্লোভেনিয়া পেরিয়েও আসেন বড় একটি অংশ। এছাড়া বিভিন্ন ফ্লাইট ও বিমানযোগেও অনেকেই আসেন। 

জীবন ঝুঁকি নিয়ে আসা এসব আশ্রয়প্রার্থীদের অন্যতম লক্ষ্য থাকে ইটালির আশ্রয়কেন্দ্রে প্রাথমিকভাবে জায়গা পাওয়া। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশে রয়েছে নানা শর্ত ও আইনি জটিলতা। ইনফোমাইগ্রেন্টসের পাঠকদের জন্য এই পদ্ধতিগুলো ব্যাখ্যা করা হলো। 

‘ঠিকানা’ জটিলতায় বলকান রুটে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা

ছয় মাস আগে ঢাকা থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রোমানিয়া এসেছিলেন বাংলাদেশি অভিবাসী আবদুল হালিম। ২৬ বছর বয়সি এই যুবক বুখারেস্টে এসে দেখেন তাকে যেই কোম্পানিতে আনা হয়েছে সেখানে কাজ নেই। 

পড়ুন>> ইটালি সরকারের পদক্ষেপ রোধে লড়াই চলবে: এনজিও জোট

এজেন্সি তাকে প্রস্তাব দেয় অন্য কোথাও চাকরি করতে, যদিও এটি বেআইনি। উপায় না দেখে অন্য অনেকের মতো বলকান রুট হয়ে ইটালির রাজধানী রোমে এসে পৌঁছান আবদুল হালিম। 

আসার আগে শুনেছিলেন ইটালির আশ্রয় প্রক্রিয়া সহজ। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ মাস রোমে অবস্থান করার পর এখনও আশ্রয় আবেদন জমা করতে পারেননি তিনি।

রোমের অদূরে ইনফোমাইগ্রেন্টস বাংলার সাথে কথা বলছেন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী আবদুল হালিম। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস
রোমের অদূরে ইনফোমাইগ্রেন্টস বাংলার সাথে কথা বলছেন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী আবদুল হালিম। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস


আব্দুল হালিমের সাথে ইনফোমাইগ্রেন্টসের দেখা হয় রোমের বাংলাদেশি অভিবাসী অধ্যুষিত এলাকায়। তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন,

“বিগত পাঁচ মাস ধরে রোমে একটি বাসার ঠিকানার জন্য ঘুরছি। ইটালিতে ইমিগ্রেশন কার্যালয়ে আশ্রয় আবেদন করার আগে একটি নির্দিষ্ট বাসার ঠিকানা দিতে হয়। কিন্তু আমার পরিচিত কেউ না থাকায় এখনও এটি যোগাড় করেতে পারিনি।”

তিনি যোগ করেন, “আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমার পূর্ব নির্ধারিত এপয়েন্টমেন্ট আছে। যদি এর মধ্যে ঠিকানা যোগাড় করতে না পারি সেক্ষেত্রে আবারও নতুন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।”

আশ্রয় আবেদনে ঠিকানা জটিলতা নিয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টস কথা বলে ইটালির সর্ববৃহৎ অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তা গায়া পিয়েত্রাভালের সাথে। তিনি ইউএনএইচসিআর আর আরচির যৌথ আশ্রয় হটলাইনের সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন। 

গায়া পিয়েত্রাভালে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন,

“ইটালিতে ভূমধ্যসাগর হয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আশ্রয় ব্যবস্থায় প্রবেশ অনেকটাই সহজ। কারণ সমুদ্র থেকে আসার পর তাদেরকে ইমার্জেন্সি জোন থেকে পরবর্তীতে সরাসরি সরকারি পরিষবেয়ায় পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে ঠিকানা জটিলতার বিষয়টি তেমন সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায় না।”


তিনি আরও বলেন, “কিন্তু ফ্লাইটে ও স্থলপথে বলকান রুটে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আশ্রয় ব্যবস্থায় প্রবেশ বেশ জটিল। কারণ স্থানীয় ইমিগ্রেশন দপ্তর ও প্রশাসনের কাছে একজন আশ্রয়প্রার্থীকে একটি বাসার ঠিকানা জমা দিতে হয়। যার ফলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত অনেক আশ্রয়প্রার্থীকে রাস্তায়, অস্থায়ী ক্যাম্পে কিংবা কোন এনজিওর সহায়তায় রাত্রি যাপন করতে হয়।”

আরও পড়ুন>>সীমান্ত সুরক্ষার নামে মানব পাচারকারীদের ‘উপহার’ দিতে যাচ্ছে ইইউ: ইটালির এনজিও 


রোমের ইমিগ্রেশন কার্যালয়। ছবি: মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ/ইনফোমাইগ্রেন্টস
রোমের ইমিগ্রেশন কার্যালয়। ছবি: মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ/ইনফোমাইগ্রেন্টস


ঠিকানা প্রমাণের ব্যবস্থার কারণে বেআইনি ও ভুয়া ঠিকানা ব্যবসাও জমে উঠেছে বলে মনে করেন গায়া পিয়েত্রাভালে। তার মতে, “দীর্ঘ অপেক্ষা করতে অনেকেই ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেকেই কথিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি ঠিকানা কিনে আশ্রয় আবেদন জমা দিচ্ছেন।”

হটলাইন

ইটালিতে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদন, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য দিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ইউএনএইচসিআর এর সহায়তায় একটি হটলাইন চালু করেছে অভিবাসন সংস্থা আরচি (ARCI)। 

হটলাইনের নাম্বারটিতে ইটালিয়ান, ইংরেজি, আরবি ও বাংলাসহ ৩৬টি ভাষায় আশ্রয়প্রার্থীদের তথ্য ও সেবা প্রদান করা হয়। 

এই 📞 +39 800 905 570 নাম্বারে ইটালির যেকোন স্থান থেকে কল দিয়ে সহায়তা চাওয়া যাবে। 

তবে কোন আশ্রয়প্রার্থীর স্থায়ী নাম্বার না থাকলে সেক্ষেত্রে বিনামূল্যে লাইকা অথবা যেকোন অস্থায়ী সিমকার্ড থেকে এই 📞 +39 3511376335 নাম্বারে ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপেও যোগাযোগ করা যাবে। 

পড়ুন>> ইটালিতে শরণার্থী শিশুদের নিয়ে ফরাসি শিল্পীর প্রদর্শনী

ইমেইলেও আরচি অথবা ইউএনএইচসিআররে সাথে যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে। ইমেইল: numeroverderifugiati@arci.it

এছাড়া ইটালির আশ্রয় আবেদন নিয়ে বিস্তারিত জানতে ইউএনএইচসিআর ইটালির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আশ্রয়প্রার্থীদের তথ্য জানার সুযোগ রয়েছে।  

ওয়েবসাইট: https://help.unhcr.org/italy/asylum-italy



এমএইউ/এডিকে


 




 

অন্যান্য প্রতিবেদন