তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে ইউরোপমুখী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল শুরু হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে গ্রিস৷ তাই অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে নিজেদের সীমান্ত জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে গ্রিক কর্তৃপক্ষ৷
সিরিয়া ও তুরস্কে ভয়বাবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুচ্যুত মানুষেরা ইউরোপে আসতে পারেন বলে মনে করে দেশটির সরকার৷ বসন্ত শুরু হলে অভিবাসী, শরণার্থীদের ঢল বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা তাদের৷
গ্রিসের টেলিভিশন চ্যানেল ওপেন-এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির অভিবাসনমন্ত্রী নোতিস মিতারাচি বলেন, ‘‘তুরস্কে অনেক সিরীয় নাগরিক এতদিন বিধি-নিষেধের মধ্যে বসবাস করছিলেন৷ কিন্তু ভূমিকম্পের কারণে সেই বিধি-নিষেধ এখন নেই৷ বরং মানুষ এখন ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা থেকে নিরাপদে সরে যাচ্ছেন৷ শুধু সিরীয়রা না, তুর্কি নাগরিকরাও ভূমিকম্পে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন৷ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি বিশেষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে তারা ইউরোপে আসতে চাইবেন৷ এই বিষয়গুলো অবশ্যই আমাদের মাথায় রাখা উচিত৷’’
‘২০২০ সালের মার্চের পুনরাবৃত্তির শঙ্কা’
২০২০ সালের মার্চের ঘটনার পুনরাবৃত্তির শঙ্কা করছেন গ্রিসের অভিবাসনমন্ত্রী৷ ওই সময় হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশীকে গ্রিসের স্থলসীমা পার হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল তুরস্ক৷
তিনি বলেন, ‘‘২০২০ সালের মার্চে এভ্রোসের সীমান্ত উত্তেজনার সময় কিন্তু প্রমাণ করেছি, আমরা আমাদের সীমান্ত রক্ষা করতে পারি৷ তুরস্কে এখন মানবিক সংকট রয়েছে৷ এসব নিয়ে দুই সরকার আবারও কথা বলতে পারে। পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে৷ তার মানে এই নয় যে, আন্তর্জাতিক আইনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের অবস্থানে কোনো প্রকার ছাড় দিব৷ হ্যাঁ, আমরা সংলাপে রাজি৷ কিন্তু নিজেদের অবস্থানেও দৃঢ়।’’
মিতারাচি আরো বলেন, ‘‘আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি৷ কারণ, আমাদের দেশ তার সীমান্ত পাহারা দিবে৷ আর সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে আমাদের ওপর চাপ রয়েছে৷’’
সমুদ্র সুরক্ষায় ৫০টি নৌযান
সাম্প্রতিক সময়ে একের পর জাহাজডুবির ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে গ্রিস৷ এসব ঘটনায় শিশুসহ অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন৷
এসব ঘটনার জেরে উপকূলরক্ষীদের আরো শক্তিশালী করতে চায় গ্রিস৷ এজন্য ১০ কোটি ৫০ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করা হচ্ছে৷ অভিবাসন ও আশ্রয়ণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন ও স্বরাষ্ট্রবিষয়ক তহবিল থেকে এই অর্থের যোগান দেয়া হচ্ছে৷
অভিবাসন মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উপকূল রক্ষায় ৫০টি নতুন জাহাজ কেনার জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘‘এই পদক্ষেপের মাধ্যমে, হেলেনিক কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা বাড়বে৷ ফলে অভিবাসপ্রত্যাশীদের ঢল সামাল দেয়া, সমুদ্রে তাদের জীবনের সুরক্ষা এবং অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার হবে৷’’
যেসব জাহাজ কেনা হচ্ছে
৩০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যে দুটি উপকূলীয় টহল নৌযান ও ১৭.৫ মিটারের বেশি দীর্ঘ পাঁচটি উচ্চ গতির টহল নৌযান কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ পাশাপাশি সাবমেরিন মিশন ইউনিটের টহল উপযোগী দুটি বিশেষ অপারেশন জাহাজ, অসুস্থ এবং আহতদের পরিবহন ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ ১৩ মিটার দীর্ঘ ১১টি উচ্চ গতির টহল নৌযানও কেনা হবে৷ ১৮ মিটার দীর্ঘ ১০টি টহল নৌযান এবং ১৩ মিটার দীর্ঘ ২০টি উচ্চ গতির টহল নৌযানও থাকছে ক্রয় তালিকায়৷
সীমান্ত নজরদারি জোরদার
নাগরিক সুরক্ষামন্ত্রী টাকিস থিওডোরিকাকোসের জানিয়েছেন, এভ্রোসে গ্রিস এবং তুরস্ক সীমান্তে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কাজ শুরু হতে যাচ্ছে৷ এটি শেষ হতে অন্তত ১০ মাস সময় লাগবে বলেও জানান তিনি৷
১৯ ফেব্রুয়ারি গ্রিসের টেলিভিশন চ্যানেল স্কাইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন৷ মন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়েছে৷ অডিট আদালতের অনুমতি পেলেই কাজ শুরু হবে৷’’
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে ১০ কোটি ইউরো খরচ হবে৷
মন্ত্রী বলেন, ‘‘ইউরোপের দেশগুলোর বোঝা উচিত এটি শুধু গ্রিসের সীমান্ত নয়৷ বরং এটি হলো তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপের সীমান্ত৷’’তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পের কারণে সেখানে সাহায্য পাঠানোর কথা জানিয়ে গ্রিসের মন্ত্রী বলেন, ‘‘গ্রিসের জনগণ আশা করে তুরস্ক আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে৷ কিন্তু একইসঙ্গে শঙ্কাও আছে যে, এ ঘটনার জের ধরে অভিবাসন সমস্যা আবারও প্রকট হয়ে উঠতে পারে৷’’
টিএম/এফএস (আনসা)