ভূমধ্যসাগরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারকাজে নিয়োজিত জাহাজগুলোর কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি একটি ডিক্রি জারি করেছিল ইটালি সরকার৷ বৃহস্পতিবার দেশটির সংসদ ডিক্রিটিকে আইনে রুপান্তরিত করেছে৷
ভূমধ্যসাগরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারকাজে নিয়োজিত জাহাজগুলোর কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি একটি ডিক্রি জারি করেছিল ইটালি সরকার৷ বৃহস্পতিবার দেশটির সংসদ ডিক্রিটিকে আইনে রুপান্তরিত করেছে৷
নতুন আইন অনুযায়ী, একটি উদ্ধার অভিযান পরিচালনার পর অবশ্যই উদ্ধার-জাহাজকে ইটালির কোনো বন্দরে ভিড়ার অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে৷ অর্থাৎ, একবার সমুদ্রে যাত্রা করার পর, একাধিক উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে পারবে না জাহাজগুলো৷
তাছাড়া, বন্দরে ভিড়ার অনুমতি চেয়ে তাদের উদ্ধার অভিযানের বিস্তারিত ইটালি সরকারকে জানাতে হবে৷
নিয়ম ভঙ্গ করলে জাহাজের নাবিককে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে৷
উল্লেখ্য উদ্ধারকারী জাহাজগুলো আগে সমুদ্রে যাত্রা করার পর ইটালিতে ফিরে আসার পূর্বে একাধিক অভিযান পরিচালনা করতে পারতো৷
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জর্জা মেলোনির নেতৃত্বাধীন ইটালির ডানপন্থি সরকার বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্ধার অভিযান সীমিত করার উদ্দেশ্যেই এমন আইন প্রণয়ন করেছে৷
১২ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর সাক্ষাৎকার না নেওয়ার ঘোষণা যুক্তরাজ্যের
যদিও মেলোনি সরকারে দাবি, সমুদ্রে জাহাজগুলোর উদ্ধার অভিযান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উৎসাহিত করে থাকে৷
তবে ইটালি সরকারের এমন অভিযোগ অস্বীকার করছে উদ্ধার-জাহাজগুলো৷ তারা বলছে, জাহাজকে দেখে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা সমুদ্রে যাত্রা করে, বিষয়টি এমন নয়৷ বরং তারা নিজেদের মতো করেই সমুদ্রযাত্রা করে থাকে৷
এদিকে আইন পাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্সের জাহাজ জিও ব্যারেন্টসকে আগামী ২০ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ইটালি সরকার৷
তাছাড়া ডক্টর্স উইদাইট বর্ডার্সকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি৷
সংস্থাটির একজন মুখপাত্র জানান, তাদের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে একটি উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে কিছু তথ্য গোপন করা হয়েছে- এমন অভিযোগ আনা হয়৷
সংস্থাটির পক্ষ থেকে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় বলা হয়, ‘‘জীবন বাঁচানোর জন্য কাউকে জরিমানা করার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়৷ সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা কী আইনি পদক্ষেপ নিতে পারি তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে৷’’
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ
এদিকে ইটালি সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো৷ সরকারকে এই আইন বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে সংস্থাগুলো বলছে, জাহাজের উদ্ধারকাজ সীমিত করার ফলে সমুদ্রে নিহতের সংখ্যা বাড়বে৷
ইটালির আশ্রয়পদ্ধতি: আশ্রয়প্রার্থীদের যা জানা উচিৎ
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভোলকার ট্যুর্ক বলেন, ‘‘ইটালি সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভূমধ্যসাগরে মানবাধিকার সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে একটি ভুল পদক্ষেপ৷’’
আর ইটালির রোমান ক্যাথলিক চার্চের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘‘সরকারের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন৷’’
বেসরকারি সংস্থাগুলোর দাবি অনুযায়ী, ইটালি সরকারের নতুন এই পদক্ষেপের ফলে তাদের উদ্ধার অভিযানের খরচ অনেক বেড়েছে৷ সম্প্রতি অল্প কিছু জাহাজই সমুদ্রে উদ্ধারকাজে যেতে পেরেছে৷ কিন্তু এর ফলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন কমেছে- বিষয়টি এমন নয়৷
আরআর/এসিবি (রয়টার্স)