২০২২ সালে বলকান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয়টি দেশে তিন লাখের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী পা রেখেছেন৷ তাদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষে আছেন বাংলাদেশিরা৷ ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে৷
গ্রিস, ইটালি, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্ৎসেগোভিনা ও মন্টেনেগ্রো–এই ছয়টি দেশে গত বছর তিন লাখ ২১ হাজার নতুন অভিবাসনপ্রত্যাশী পৌঁছান৷ ২০২১ সালের তুলনায় যা ৮৬ শতাংশ বা প্রায় দ্বিগুণ বেশি৷ আগতদের বেশিরভাগ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সিরিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক৷
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেছে৷ সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২২ সালে যত অভিবাসনপ্রত্যাশী এই দেশগুলোতে এসেছেন বছরের শেষ পর্যন্ত তাদের অনেকেই সেখানে ছিলেন না৷
কোন দেশে থেকে কোন দেশে
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইটালিতে সমুদ্রপথে এক লাখ পাঁচ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশী পৌঁছান৷ তাদের মধ্যে অভিভাবকের সঙ্গে ছয় হাজার ১৫১ শিশু এবং অভিভাবকহীন ছিল ১২ হাজার ৬৮৭ শিশু ৷ তারা মূলত মিশর, টিউনিসিয়া, বাংলাদেশ, সিরিয়া আফগানিস্তানের বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
এছাড়াও পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মতো কিছু দেশ থেকে স্থলপথে ১৩ হাজার ৫০০ অভিবাসী, শরণার্থী ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশটিতে পৌঁছান৷ সব মিলিয়ে গত বছর অনিয়মিত উপায়ে ইটালিতে আগতদের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ৬৪০ জন, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৭৭ শতাংশ বেশি৷ বছর শেষে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিলেন এক লাখ সাত হাজারের কিছু বেশি৷
২০২২ সালে বুলগেরিয়াতে প্রায় ২০ হাজার অভিবাসী, শরণার্থী আশ্রয়ের আবেদন করেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ৷ আগতদের বেশিরভাগের দেশ সিরিয়া, আফগানিস্তান ও মরক্কো৷
দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপের দেশ সার্বিয়ায় গত বছর পা রেখেছেন এক লাখ ২৯ হাজার ৬৭৯ জন৷ এই সংখ্যা ২০২১ সালে তুলনায় দুইগুণেরও বেশি৷ তবে তাদের মধ্যে বছরের শেষ পর্যন্ত অবশিষ্ট ছিলেন মাত্র চার হাজার ৮৫৩ জন৷ কেননা, বলকান হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে প্রবেশের অন্যতম ট্রানজিট হিসেবে দেশটিকে ব্যবহার করেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷
একই পরিস্থিতি সার্বিয়ার প্রতিবেশী বসনিয়া অ্যান্ড হ্যার্ৎসেগোভিনারও৷ ২০২২ সালে সেখানে আগত মোট ২৭ হাজার ৪২৯ জনের খোঁজ পেয়েছে ইউনিসেফ৷ এর মধ্যে বছরের শেষ পর্যন্ত অবস্থান করছিলেন মাত্র ১৪০০ থেকে ১৬০০ জন৷ দেশটিতে আগতদের বেশিরভাগই ছিলেন আফগানিস্তান, মরক্কো ও পাকিস্তানের৷
গত জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বলকান রুটের আরেক দেশ মন্টেনেগ্রোতে নিবন্ধন করেছেন আট হাজার ২৯৮ জন৷ এই সংখ্যা ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি৷ এই অভিবাসীদের বেশিরভাগ ছিলেন আফগানিস্তান, ইরান ও বাংলাদেশের৷
ছয়টি দেশে আগত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ৩৩ হাজার ১৭৩ শিশুর কাছে সুরক্ষা সেবা পৌঁছাতে পেরেছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ৷ এছাড়া ২৫ হাজার শিশুকে শিক্ষার সুযোগ, প্রায় পাঁচ হাজার মা ও শিশুকে পুষ্টি সেবা দিয়েছে তারা৷ মোট দুই লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৮ অভিবাসনপ্রত্যাশী বিভিন্ন তথ্যসেবা দিয়েও সহায়তা করেছে৷
এফএস/টিএম