গত বছর লাটভিয়ান সীমান্তে অনেক আশ্রয়প্রার্থীদের আটক করা হয়েছে। তারা সীমান্ত পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। সীমান্তের বড় একটি অংশে এনজিওদের উপস্থিতি না থাকায় ভুক্তভোগীরা তাদের সমস্যার কথাও জানাতে পারেন না।
লাটভিয়ান সীমান্ত বরাবর ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাওয়া অভিবাসীদের সংখ্যা গত কয়েক মাস ধরে বেড়েছে। এই এলাকায় তাপমাত্রা প্রায়শই হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়।
লাটভিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এক হাজার ৩০০ জনেরও বেশি লোককে সীমান্ত অতিক্রম করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল।
গত বছরের নভেম্বর থেকে তীব্র বৃদ্ধি দেখছে লাটভিয়া সীমান্ত। সেই সময় ৪২৯ জনকে সীমান্ত থেকে আটক করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন>>যেকোনো ধরনের পুশব্যাক অবৈধ: ইইউ স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার
লাটভিয়া কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের আগস্টে থেকে সীমান্তে টহল জোরদার করে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছিল যা লোকেদের আশ্রয় চাইতে বাধা দেয় এবং সীমান্ত পুলিশকে অভিবাসীদের বেলারুশের সাথে থাকা প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেয়।
ঘোষিত জরুরি অবস্থার মেয়াদ বহুবার বাড়ানো হয়েছে যা ১০ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

পূর্ব ইউরোপে অভিবাসনের অন্যান্য রুটগুলোর চেয়ে লাটভিয়া-বেলারুশ রুটের চিত্র ভিন্ন। অন্যান্য সীমান্তের বিপরীতে এই রুটে বিরল এনজিও নজরদারি রয়েছে। যার অর্থ পরিস্থিতি একেবারে প্রতিকূলে চলে গেলে শুধুমাত্র সামান্য খাদ্য ও জরুরী সাহায্যের জন্য এনজিওগুলোকে অনুমতি দেয়া হয়। এর বাইরে সীমান্তে এনজিওগুলোর উপস্থিতির অনুমতি নেই।
পড়ুন>>ভাইরাল এজিয়ান সাগরে ৩৫ অভিবাসীকে পুশব্যাকের ভিডিও
লাটভিয়ার অভিবাসন বিষয়ক গবেষক টমস অ্যানসাইটিস ইউরোনিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “গত বছর লাটভিয়া সীমান্তে কতজন মানুষ মারা গিয়েছিল তাও আমরা জানি না।”
গোপন আটক, নির্যাতন, এবং অপব্যবহার
শরণার্থী এবং অভিবাসী যারা সীমান্ত অতিক্রম করতে সক্ষম হয় তাদের নির্বিচারে জঙ্গলের বিচ্ছিন্ন এলাকায় অজ্ঞাত স্থানে বিভিন্ন তাঁবুতে আটকে রাখা হয় বা আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
লাটভিয়া সরকার দাবি করেছে, তাঁবুগুলি মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হয়।
আন্তজার্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই তাঁবুগুলোকে শরণার্থী এবং অভিবাসীদের নির্বিচারে আটকে রাখা এবং অবৈধ প্রত্যাবর্তনের ফাঁড়ি হিসাবে নথিভুক্ত করেছে।
অ্যামনেস্টির মতে, তাঁবুগুলোতে অভিবাসীরা লাটভিয়া নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ভয়ভীতি, মৌখিক এবং শারীরিক সহিংসতার শিকার হওয়ার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
“লাটভিয়া: বাড়ি ফিরুন নইলে কখনও জঙ্গল ছেড়ে যেতে পারবেন না” শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, দেশটির কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে তাদের প্রিয়জন ও বহির্বিশ্বের বাকি অংশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
পড়ুন>>গ্রিস থেকে পুশব্যাক: তুরস্কে অভিবাসীদের মানবেতর জীবন
ভুক্তভোগী অভিবাসীদের পরিবারগুলো অভিযোগ করেছে, লাটভিয়ায় তাদের স্বজনদের সাথে সর্বশেষ পরিচয় হয়েছে এমন লোকেদের সাথেও তারা আর যোগাযোগ করতে পারছেন না।
ইরাকের আদিল নামের এক ব্যক্তিকে তাঁবুতে রাখা হয়নি যদি তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ায় তিনি সীমান্তে আটকে পড়েছিলেন।
আদিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, “আমরা জঙ্গলে বরফের উপর ঘুমাতাম। আমরা গরম পেতে আগুন জ্বালাতাম। সেখানে নেকড়ে ও ভাল্লুক ছিল।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, “অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের অজ্ঞাত স্থানে তাঁবুতে আটকে রাখা বা যোগাযোগের সুযোগ বা নিরাপদ বিকল্প ছাড়াই সীমান্তে আটকে রাখার কারণে গোপন আটক এবং জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।”
এক টুইট বার্তায় লাটভিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রী এডগারস রিঙ্কেভিচস অ্যামনেস্টি প্রতিবেদনেকে প্রত্যাখ্যান করে এটিকে ‘ভুয়া অভিযোগ’ বলে অভিহিত করেছেন।
আরও পড়ুন>>বুলগেরিয়া থেকে ৮৪ অভিবাসীকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় তুরস্কে পুশব্যাকের অভিযোগ
মানবাধিকার সংস্থাগুলি লাটভিয়াকে তার বৈষম্যমূলক সীমান্ত নীতির জন্য নিন্দা করে বলেছে, লাটভিয়া জাতিগত সংখ্যালঘু শরণার্থী এবং অভিবাসীদের প্রবেশে বাধা দিলেও এটি ইউক্রেন থেকে ৩৬ হাজারেরও এরও বেশি শরণার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে।
মানবিক সংস্থাগুলোর জন্য কঠোর বিধিনিষেধ
লাটভিয়ায় প্রবেশের অনুমতিপ্রাপ্তদের অল্প শতাংশকে সাধারণত আটক কেন্দ্রে রাখা হয় যেখানে মানবিক সহায়তার জন্য সীমিত এক্সেস রয়েছে।
গত ডিসেম্বরে ফরাসি দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) দেশটিতে তাদের কার্যক্রম শেষ করে বলেছিল, তাদের আটক কেন্দ্রে থাকা লোকেদের মধ্যে অবাধ প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এমএসএফ জানায়, “আমাদের দলগুলির জন্য নিরপেক্ষ উপায়ে সহায়তা প্রদান করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ চিকিৎসা ক্ষেত্রে গোপনীয়তা মূলত চিকিৎসা নৈতিকতার সাথে সম্মতি নিশ্চিত করে।”
এমএসএফ ২০২২ সালের জুলাই মাসে মুসেনিকি এবং দাউগাভপিলস আটক কেন্দ্রে আটক থাকা আশ্রয়প্রার্থী এবং অভিবাসীদের মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা, খাদ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রী সরবরাহ করা শুরু করেছিল।
লাটভিয়ায় কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর এমএসএফ লাটভিয়ায় অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের নিরাপত্তা এবং কল্যাণের নিয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে।
আরও পড়ুন>> ২০২১ সালে ইইউ দেশের নাগরিক হয়েছেন প্রায় ৯ হাজার বাংলাদেশি
এমএসএফ-এর মতে, “লাটভিয়া সীমান্তরক্ষী পরিষেবা ২০২২ সালে চার হাজারেরও বেশি পুশব্যাক পরিচালনা করেছিল। মানুষকে সীমান্তে বেড়া দিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করা এবং তাদেরকে পর্যাপ্ত খাবার এবং পানীয় জল না দিয়েই অলস অবস্থায় রেখে দেয়া হয়েছিল।
গত ডিসেম্বরে সীমান্তের বেড়ার একটি গর্ত ভেদ করে লাটভিয়ায় প্রবেশকারী একজন আফগান ব্যক্তি হাইপোথার্মিয়ায় মারা যান।
এমএইউ/এআই