ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে “পরিবেশগত অভিবাসীর” সংখ্যা দুই কোটি ৫০ লাখ থেকে একশো কোটি পর্যন্ত হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যান্য প্রতিকূল প্রভাবে তৈরি হবে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট। ফলে প্রাণ বাঁচাতে লাখো মানুষ ইউরোপে আশ্রয় নিতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতদের সুরক্ষা দিতে ইউরোপের এখন থেকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষদের বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকারের আইনি মর্যাদা দেওয়াা উচিত বলে মনে করে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি)।
একইসঙ্গে উদ্বাস্তুদের প্রতি সাধারণ মানুষের মনোভাব যাতে ইতিবাচক হয়, তাদের যেন সমাজে একীভূত করে নেওয়া হয় সেজন্য প্রচারাভিযানের প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করে সংস্থাটি।
আইসিসিসিএডির পরিচালক সলিমুল হক বলেন, “ভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া রাজনৈতিক শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) রয়েছে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা অভিবাসীদের মর্যাদা দেয়, কিন্তু জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য কেউ নেই।”
তিনি বলেন, “প্রতিটি ফোরামে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের স্বীকৃতি ও মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। কিন্তু এখনও এটি শুধুই আলোচনার মধ্যে আটকে আছে, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না।”
নেই আইনি কাঠামো
পরিবেশদবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত শরণার্থীরা “ফাটলের মধ্যে পিছলে যাওয়ার” ঝুঁকিতে থাকেন সবসময়। কারণ তাদের কোনো অধিকার সংরক্ষণ করা হয় না কিংবা নিয়মিত অভিবাসনেরও সুযোগও নেই তাদের।
‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য আদার, পারসেপশনস অব দ্য মাইগ্রেন্টস ইন ফ্রান্স, ১৮৭০-২০২২’ বইয়ে পরিবেশগত অভিবাসীদের সংকটের কথা তুলে ধরেছেন সিএনআরএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ক্যাথরিন উইহটল ডি ওয়েন্ডেন।
তিনি লিখেছেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা কমিয়ে আনতে নিজ দেশের ব্যর্থতার কারণে অনেক পরিবেশগত অভিবাসী অন্য দেশে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করতে পারে। কিন্তু এর ভিত্তিতে কোনো আবেদনকারী কখনও শরণার্থীর মর্যাদা পায়নি।”
২০১৫ সালের পর গেল বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক অনিয়মিত অভিবাসীর আগমন ঘটেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে। ফলে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে অঞ্চলটিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অভিবাসীদেরকে আপন করে নিতে সরকারের উচিত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের পাশে নেওয়া। জাতিসংঘের একজন পরামর্শক ইব্রাহিম ওজদেমির লিখেছেন, উদ্বাস্তুদের বরণ করে নিতে সমাজের মূল্যবোধ ও মানবিকতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নৈতিক দায়িত্ব
পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক গায়া ভিন্স লিখেছেন, “আমরা একটি নির্দিষ্ট ভূমির এবং সেটি আমাদের—এই ধারণা থেকে বের হতে পারাটা একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এই ধারণা থেকে বের হতে হবে। বিশ্বের বৈচিত্র্যময় সমাজের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে, নতুন মেরুতে, নতুন শহরে আমাদের বসবাস মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।”
তবে ইউরোপীয়দের এই ধারণাটি গ্রহণ করতে বললে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে এই মহাদেশে জাতীয়তাবাদ এবং উগ্র ডানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যা বাড়ছে।
গ্লোবাল সাউথ যদি জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি ভোগ করে, তবে “জলবায়ু ন্যায়বিচার” প্রতিষ্ঠায় গ্লোবাল নর্থের কী দক্ষিণের উদ্বাস্তুদের সহযোগিতায় নৈতিক দায় রয়েছে?
আইসিসিসিএডির পরিচালক সলিমুল হক বলেন “অবশ্যই দায় রয়েছে”
তিনি বলেন, “এটা দায়িত্ব, যদিও তারা মেনে নিতে চায় না।”
এসময় গত নভেম্বরে মিশরের শার্ম এল শেখে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৭ প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। সেলিমুল হক বলেন, ওই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর সহযোগিতায় ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ক একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে।
নিরাশার মাঝেও তহবিলটিকে ‘অগ্রগতির চিহ্ন’ হিসেবে অভিহিত করেন আইসিসিসিএডির পরিচালক।
টিএম/এমএইউ