১০ মার্চ, শুক্রবার, ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাসভবন 'এলিজে' প্রাসাদে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ। ছবি: রয়টার্স
১০ মার্চ, শুক্রবার, ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাসভবন 'এলিজে' প্রাসাদে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ। ছবি: রয়টার্স

অনিয়মিত অভিবাসীদের অবৈধ চ্যানেল পারাপার বন্ধে একটি চুক্তিতে সই করেছে লন্ডন এবং প্যারিস। শুক্রবার সই হওয়া এই চুক্তির আলোকে দুই দেশের সামুদ্রিক সীমান্তকে আরও সামরিকীকরণ করতে ফ্রান্সকে চার বছরের মধ্যে ৫৪ কোটি ইউরোর বেশি অর্থ সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ।

অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে লন্ডন এবং প্যারিস শুক্রবার (১০ মার্চ) নতুন করে এই চুক্তি সই করেছে। অভিবাসন ইস্যু নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। 

বিশেষ করে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইংলিশ চ্যানেলে অভিবাসন বিষয়ে ফ্রান্স অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে বলে সমালোচনা করে আসছিলেন। 

আরও পড়ুন>>ফ্রান্সের কালেতে তুষার, উপেক্ষিত আশ্রয়প্রার্থীরা

নতুন চুক্তির পর ইংলিশ চ্যানেলের তীরের দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা অনেকটাই কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চুক্তি সইয়ের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ২০১৮ সালের পর এটি দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের প্রথম যৌথ সংবাদ সম্মেলন। 


ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ বলেন, “এটি পুনর্মিলন, পুনঃসংযোগ এবং নতুন যাত্রার একটি মুহূর্ত। এটি একটি নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষার শীর্ষ সম্মেলন।”

নতুন চুক্তির মধ্য দিয়ে ইংলিশ চ্যানেলে অবৈধ পারাপার বন্ধে দুই দেশ কী ব্যব্যস্থা নিতে যাচ্ছে তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। 

পড়ুন>>ফ্রান্সে মানবপাচারকারীর তিন বছরের কারাদণ্ড ও স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

লন্ডন কর্তৃপক্ষ একটি যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আগামী তিন বছরের জন্য যুক্তরাজ্য ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৪ কোটি ১০ লাখ ইউরো, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১৯ কোটি ১০ লাখ ইউরো এবং ২০২৫-২৬ সালে ২০ কোটি ৯০ লাখ মিলিয়ন ইউরো ফরাসি কর্তৃপক্ষকে অর্থ সহায়তা দেবে।”

অর্থাৎ উত্তর ফ্রান্স উপকূলে নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চার বছরের জন্য সর্বমোট ৫৪ কোটি ১০ লাখ ইউরো অর্থ সহায়তা দেবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। 

ডানকের্কে নতুন ‘আটক কেন্দ্র’?

লন্ডন জানিয়েছে উত্তর ফ্রান্সের ডানকের্ক অঞ্চলে একটি নতুন অভিবাসী আটক কেন্দ্র চালু করা হবে।

তবে ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এই বিষয়ে জানিয়েছে, এটি মূলত একটি প্রশাসনিক আটক কেন্দ্র বা সিআরএ হবে। যার লক্ষ্য হবে, ফরাসি ভূখণ্ড ত্যাগের ওকিউটিএফ নোটিশ পাওয়া অনিয়মিত অভিবাসীদের নিজ দেশে ডিপোর্টের আগে আইনি প্রক্রিয়ায় আটক রাখা। 

আরও পড়ুন>>যুক্তরাজ্যে নতুন আইন, অভিবাসনপ্রত্যাশীরা হবেন ‘অপরাধী’

পাশাপাশি ফরাসি উপকূলে অতিরিক্ত ৫০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে লন্ডন এবং প্যারিস। এছাড়া স্থল বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য আরও ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে। 

ইংলিশ চ্যানেলে অভিবাসী পারাপারের বিষয়টি যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে সবচেয়ে বিস্ফোরক ইস্যু। 

বেশ কয়েক বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা রক্ষণশীলদের বিভিন্ন মহল থেকে এই বিষয়টি নিয়ে আরও পদক্ষেপ নিতে নিয়মিত চাপ দেওয়া হয়। 

অপরদিকে এমানুয়েল ম্যাক্রঁ জোর দিয়ে বলেন, “লন্ডন এবং প্যারিস মানুষের সমস্যা এবং এ বিষয়গুলির চরম সংবেদনশীলতা সম্পর্কে সচেতন থেকে অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে একযোগে এগিয়ে যেতে চায়।”

পড়ুন>> আসবাবপত্রে লুকিয়ে অভিবাসী পাচার: ব্রিটিশ দম্পতির সাজা

তিনি বলেন, “২০২২ সালে এক হাজার ৩০০টিরও বেশি অস্থায়ী নৌকা পারাপার প্রতিরোধ এবং ৫৫টি সংগঠিত অপরাধ নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া হয়েছে। “

এটির পেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ফ্রাঙ্কো-ব্রিটিশ গোয়েন্দা সেল। যদিও গত বছর প্রায় ৪৬ হাজার অনিয়মিত অভিবাসী চ্যানলে অতিক্রম করে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্যারিস এবং লন্ডন ব্রিটিশ উপকূলে অভিবাসীদের আগমন প্রতিরোধে উত্তর ফ্রান্সে কালে, গ্রন্দ সান্থ, ডানকের্কসহ বিভিন্ন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত (সীমান্ত বেড়া, ড্রোন, থার্মাল ক্যামেরা ইত্যাদি) এবং টহল জোরদার করছে। 

আরও পড়ুন>>১২ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর সাক্ষাৎকার না নেওয়ার ঘোষণা যুক্তরাজ্যের

এর আগে ২০২২ সালের নভেম্বরে, চ্যানেলে অবৈধ পারাপার রোধ করার চেষ্টায় দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছিল।

সেই সময় চুক্তির আলোকে ২০২২-২০২২৩ অর্থ বছরের জন্য সাত কোটি ২২ লাখ ইউরোর অর্থ সহায়তায় সম্মত হয়েছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্স। বিনিময়ে, উপকূলে নিরাপত্তা বাহিনীর ১০০ জন সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল প্যারিস।

দুই দেশের অভিবাসন সংস্থা ও এনজিওগুলোর ফ্রাঙ্কো-ব্রিটিশ চুক্তিগুলোর সমালোচনা ও বিরোধিতা করে আসছে। তাদের মতে, “শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা মানবপাচারকারীদের ব্যবসাকে উপকৃত করে।”


টিএম/এমএইউ





 

অন্যান্য প্রতিবেদন