(ফাইল ছবি) গ্রিসের মিকোনোস দ্বীপে আসা একদল আশ্রয়প্রার্থী। ছবি: পিকচার এলায়েন্স
(ফাইল ছবি) গ্রিসের মিকোনোস দ্বীপে আসা একদল আশ্রয়প্রার্থী। ছবি: পিকচার এলায়েন্স

৪৫ বছর বয়সি এক মিশরীয় জেলেকে মানব পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে গ্রিসের আদালত। অভিযুক্তকে ২৮০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ক্রিতি দ্বীপের আদালত। অভিবাসন সংস্থা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এই রায়ে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে।

মানবপাচারের দায়ে ৪৫ বছর বয়সি এক মিশরীয় অভিবাসনপ্রত্যাশীকে গত সপ্তাহে ২৮০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে গ্রিসের আদালত।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম এইচ. এলফাল্লাহ। আদালতের রায়ে তাকে একজন মানবপাচারকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। 

মিশর থেকে তার ১৫ বছর বয়সি ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর আশায় ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রায় ৫০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী বোঝাই একটি নৌকায় যাত্রা করেছিলেন এইচ. এলফাল্লাহ।।

আরও পড়ুন>>অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ২২ লাখ ইউরো লুট করেছে গ্রিক সীমান্তরক্ষী

গ্রিসে পৌঁছে সেখান থেকে যুক্তরাজ্যে পৌঁছতে চেয়েছিলেন তিনি। যুক্তরাজ্যে তার আরেক ছেলে ইতিমধ্যে আশ্রয় আবেদন করেছেন। 

তিনি জানান, মূলত সমুদ্র পাড়ি দেয়ার অর্থ পরিশোধের উপায় না পেয়ে পাচারকারীদের প্রস্তাবে নৌকা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

ইউরোপে পৌঁছে সম্ভাব্য বিচার এড়াতে কয়েক বছর ধরে মানবপাচারকারীরা সরাসরি অভিবাসী নৌকায় উঠা বন্ধ করে দিয়েছে। এর পরিবর্তে তারা অভিবাসীদের মধ্যে কাউকে নৌকা চালানোর দায়িত্ব দিয়ে থাকে।  

প্রতি যাত্রীর বিপরীতে কারাদণ্ড

সমুদ্র পারাপারের দিন আবহাওয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় এবং জরাজীর্ণ নৌকাটি রুক্ষ সমুদ্রে ভেসে যাওয়ায় গ্রিক কোস্টগার্ডের একটি টহল নৌকা অভিবাসীদের উদ্ধার করেছিল।

পড়ুন>> বাংলাদেশি অভিবাসীকে আঘাত, সাজা কমলো গ্রিক নাগরিকের

সেখান থেকে অভিবাসীদের ক্রিতি দ্বীপের পালিওচোরা বন্দরে নিয়ে যাওয়া। তাদের মধ্যে এইচ এলফাল্লাহসহ সাত যাত্রীকে অভিবাসী পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

২০১৪ সালের গ্রিক আইন অনুযায়ী, মানবপাচারের ঘটনায় জাহাজে থাকা প্রতি যাত্রীর জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু আদালত বিভিন্ন কারণ বিবচেনায় তাকে ২৮০ বছরের সাজা দিয়েছে।

এই ধরনের ঘটনায় গ্রিক বিচার বিভাগ নৌকায় উপস্থিত যাত্রীদের সংখ্যাকে গুণ করে মূল সাজা দেয়। অর্থাৎ প্রতি অভিবাসীকে পাচারের দায়ে সাজা দেয়া হয়।

আরও পড়ুন>> গ্রিসের ক্যাম্পে আগুন: অভিযুক্ত চার আফগানের প্রত্যাশা ‘ন্যায় বিচার’

এই ধরনের ‘অযৌক্তিক রায়’ দেয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে গ্রিসে একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ২০ বছর জেলে রাখার মেয়াদ নির্ধারণ করা আছে।

গ্রিসে অভিবাসী নৌকার চালকদের সরাসরি মানবপাচারকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি নিয়ে পুরো ইউরোপ জুড়ে অধিকার সংস্থা, এনজিও ও অভিবাসন সংগঠনগুলো সরব।

এইচ. এলফাল্লাহর বিরুদ্ধে রায়ের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গ্রিসে সক্রিয় একাধিক মানবাধিকার গোষ্ঠী। 

অধিকারকর্মীদের মতে, “সমুদ্র পাড়ি দেয়ার সময় মিশরীয় জেলে এইচ. এলফাল্লাহ খারাপ আবহাওয়ার কারণে তার নৌ চালানোর দক্ষতা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিল।”

পড়ুন>>গ্রিসের কড়া নীতি নৌকাডুবিতে ভূমিকা রাখতে পারে: ইটালির মন্ত্রী

অভিবাসীদের সমর্থনকারী এনজিও বর্ডারলাইন ইউরোপের একজন মুখপাত্র ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, “আমরা মানুষের এ ধরনের পদক্ষেপের জঘন্য অপরাধীকরণের তীব্র নিন্দা করছি। ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ কীভাবে বিশ্বাস করে যে, একজন চালক ছাড়াই মানুষ নৌকায় যাত্রা করতে পারে?”

সাজাপ্রাপ্ত প্রায় দুই হাজার অভিবাসী

এইচ. এলফাল্লাহর ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হজার আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসী পাচারের দায়ে গ্রিসের কারাগারে বন্দি আছেন। তারা যে নৌকায় ছিলেন সেটি পরিচালনার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে সবাই দীর্ঘ সাজা পেয়েছিলেন।

মানবপাচারের ঘটনার পাচারকারীর ভূমিকায় অভিযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি, আদালত তাদের মধ্যে কয়েকজনকে সমুদ্র পারাপারের সময় অভিবাসী মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছে।

এই কারণে দণ্ডিত অভিবাসীরা গ্রিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দিদের প্রতিনিধিত্ব করে।

আরও পড়ুন>> তুরস্ক-ইটালি রুটে দ্বিগুণ হয়েছে অভিবাসীপ্রত্যাশী

গ্রিক কাউন্সিল ফর রিফিউজি এর সদস্য লেফটেরিস পাপাগিয়ানাকিসকে গত বছর ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেছিলেন, “আশ্রয়প্রার্থীদের এই অপরাধীকরণের উদ্দেশ্য হল দীর্ঘ শাস্তি আরোপ করে ভয় তৈরি করা। যাতে তারা গ্রিক দ্বীপগুলোতে আসতে প্রলুব্ধ না হয়।”


এমএইউ/টিএম



 

অন্যান্য প্রতিবেদন