২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে অভিবাসী এবং শরণার্থীদের সমর্থনে একটি বিক্ষোভ| ছবি:ইপিএ/মার্শাল ট্রেত্জিনি
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে অভিবাসী এবং শরণার্থীদের সমর্থনে একটি বিক্ষোভ| ছবি:ইপিএ/মার্শাল ট্রেত্জিনি

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোট এক হাজার ৬৮১টি আশ্রয় আবেদন নিবন্ধন করেছে বলে জানিয়েছে সুইজারল্যান্ড৷ সংখ্যাটি এ বছরের জানুয়ারির তুলনায় কম হলেও, গত বছরের এই সময়ের চেয়ে বেশি।

সুইজারল্যান্ডের স্টেট সেক্রেটারিয়েট ফর মাইগ্রেশন (এসইএম) জানিয়েছে, দেশটিতে ২০২৩ সালের জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে ৮৪২টি আশ্রয়ের আবেদন কম নিবন্ধিত হয়েছে। অর্থাৎ ৩৩.৪ শতাংশ কম আবেদন জমা পড়েছে। 

শেঙেন ভিসা ইনফো ডট কম জানিয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায়, আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে ৩৭৭টি৷

এসইএম-এর তথ্য বলছে, গত কয়েক মাসের মতোই, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সর্বাধিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন তুরস্ক, আফগানিস্তান, মরক্কো, আলজেরিয়া এবং ইরিত্রিয়ার নাগরিকরা৷

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কের ৩১০ জন নাগরিকের আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে সুইজারল্যান্ডে ৷ ২৯৫ জন আফগান নাগরিক, ১৭৯ জন মরক্কোর নাগরিক, ১৫৯ জন আলজেরীয় নাগরিক, ১৫৬ জন ইরিত্রীয় নাগরিকও আশ্রয় আবেদন করেছেন৷

এসইএম জানিয়েছে, মোট আবেদনের মধ্যে প্রাথমিক আবেদন ছিল এক হাজার ৩৫০টি৷ প্রাথমিক আবেদনের মূল দেশগুলো হলো আফগানিস্তান (২৭৭ জন), তুরস্ক (২৩৬ জন), মরক্কো (১৭৯ জন), আলজেরিয়া (১৫৮ জন) এবং সিরিয়া (৫১ জন)।

এসইএমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই হাজার ১৭৭টি আবেদনের প্রক্রিয়া করা হয়েছে। মোট আবেদনের মধ্যে ৭৪০টি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে৷ ৪৫২টি আবেদন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মানে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, মোট ৪৫২ জনকে সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

প্রথমবারের মতো দ্রুত আশ্রয় আবেদন নিষ্পত্তির অংশ হিসাবে আরো ৬৭৫ জনকে অস্থায়ীভাবে দেশটিতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ এই নিয়ে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১২ হাজার ৩০৩।

এসইএমের পরিসংখ্যান বলছে, ফেব্রুয়ারিতে ৮৭৮ জন ব্যক্তিকে অভিবাসনের কঠোর পদ্ধতি মেনে তাদের মূল দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

এসইএম অফিস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, “সুইজারল্যান্ড অন্য কয়েকটি ডাবলিন দেশকে ৯৪৯ জনকে নিতে বলেছিল৷ একই সময়ে দায়বদ্ধতা রয়েছে এমন ডাবলিন দেশে স্থানান্তর করা হয়েছে ১৬১ জনকে। পাশাপাশি, অন্যান্য ডাবলিন দেশগুলো সুইজারল্যান্ডকে ৩৯৮ জনকে আশ্রয় দিতে বলেছিল৷ ৪১ জনকে সুইজারল্যান্ডে স্থানান্তরিত করা হয়৷’’

ডাবলিন চুক্তি কী?

ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করা অভিবাসী ও শরণার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন দেশে আশ্রয় আবেদন করা থেকে বিরত রাখতে ২০১৩ সালে ডাবলিন চুক্তি করে দেশগুলো৷ চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থীরা প্রথম যে দেশে পৌঁছান সেখানে আবেদন করবেন৷

নিয়ম অনুয়ায়ী কোনো আশ্রয়প্রার্থীর তথ্য জানার তিন মাসের মধ্যেই তাকে ফেরত নিতে সংশ্লিষ্ট দেশের কাছে আবেদন করতে পারে সদস্য দেশগুলো৷ এই সময়ের মধ্যে আবেদন করা না হলে অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থী তার অবস্থান করা দেশে নতুন আবেদন করার সুযোগ পাবেন৷ যদি ইইউ সদস্যভুক্ত কোনো দেশে আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যাত হয় এবং বসবাসের অনুমতি ছাড়া তিনি অন্য দেশে অবস্থান করেন তাহলে সেই দেশের কর্তৃপক্ষ প্রথম দেশকে ফেরত নেয়া ও বহিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে৷ 

এর জবাব দিতে অনুরোধপ্রাপ্ত দেশ দুই মাস সময় পাবে৷ এরপর ছয় মাসের মধ্যে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে৷ নয়ত অনুরোধ জানানো দেশের উপরই তার দায়ভার বর্তাবে৷ তবে আইনগত জটিলতার ক্ষেত্রে এই সময়সীমা এক বছর থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব৷

রুশ আগ্রাসনের প্রভাব

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসনের ফলে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয়দের সাময়িক সুরক্ষা প্রদান অব্যাহত রেখেছে সুইস কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোট দুই হাজার ৪০ জন সুইজারল্যান্ডের আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে অস্থায়ী সুরক্ষার জন্য আবেদন করেন৷ একই মাসে, দেশটি এক হাজার ৮৭৪ ইউক্রেনীয়কে সুরক্ষা দিয়েছে৷ পরবর্তীতে মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের মধ্যে ৭৮ জনের সুরক্ষা নাকচ করেছে সুইজারল্যান্ড৷ 


আরকেসি/টিএম (শেঙেন ভিসা ইনফো ডট কম)

 

অন্যান্য প্রতিবেদন