মাল্টার বিরুদ্ধে ফের অ্যালার্ম বা সতর্কতা উপেক্ষা করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। লিবিয়ার উপকূলে সবশেষ নৌকাডুবির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে অধিকারকর্মীরা।
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সমুদ্র থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারে যে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে, তা প্রত্যাখ্যানের আরেকটি নজির স্থাপন করলো মাল্টা। দেশটির অ্যাডিটাস মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের পরিচালক নিল ফালজন বলেন, “অভিবাসন ইস্যুতে এটি মাল্টার নতুন কৌশল, যা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য সদস্য রাষ্ট্রের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়।”
আরো পড়ুন: তুরস্কের উপকূলে অভিবাসী নৌকাডুবি: নিহত অন্তত চার
বছরের পর বছর ধরে অভিবাসন নীতি কঠোর করার পাশাপাশি উদ্ধার অভিযানকে সীমিত করে এনেছে ইউরোপের ক্ষুদ্রতম এই দেশটি । অনিয়মিত এবং নথি বর্হির্ভুত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর অবস্থানে রয়েছে মাল্টা, তেমনি খুবই কমসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে দ্বীপে নামার সুযোগ দেয় দেশটি।
উদ্ধার অভিযানে মাল্টার সক্ষমতা
সিসিলি থেকে ক্রিট দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত এসএআর অঞ্চলে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানের দায়িত্ব নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীর (এএফএম) হাতে দিয়েছে মাল্টা সরকার। দেশটির জনসংখ্যা বর্তমানে আনুমানিক পাঁচ লাখ ২০ হাজার। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য চিহ্নিত অঞ্চলটি বেশ বড়। ফলে পুরো অঞ্চলে সামাল দেয়া কিছুটা কঠিন তাদের জন্য।
সম্প্রতি হেলিকপ্টার অবতরণের সুবিধাসহ ইটালি থেকে একটি মাল্টিরোল টহল জাহাজ কিনেছে মাল্টা। তবে ওই টহল জাহাজ পরিচালনায় নিযুক্ত নাবিকদের এখনও প্রশিক্ষণ শেষ হয়নি। আর অন্য দিকে এএফএম-এর কাছে মাত্র তিনটি হেলিকপ্টার আছে।
মাল্টার অসহযোগিতায় জাতিসংঘের নিন্দা
সমুদ্রে বিপদসঙ্কুল মানুষের জীবন বাঁচাতে মাল্টার কাছে বার বার সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ অধিকার সংস্থাগুলোর। তাদের দাবি, এসব ঘটনা বছরের পর বছর ধরে ঘটছে। এমনকি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য যেটুকু করা দরকার, তার কিছুও করছে না মাল্টা।
গত অক্টোবরে এমএসএফ, রেস্কিউ এমইডি, সিওয়াচের সঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল অ্যালার্ম ফোন। এতে বলা হয়েছে: “২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মাল্টার এসএআর অঞ্চল থেকে ২৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে পানামার পতাকাবাহী শিমানামি কুইন নামের একটি জাহাজ। ওই ২৩ অভিবাসনপ্রত্যাশী ছোট্ট একটি নৌকায় সমুদ্রের প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে চারদিন ধরে ভাসছিলেন।
আরো পড়ুন: মাল্টার জলসীমানায় ৮ অভিবাসীর দেহ উদ্ধার ইটালির রক্ষীবাহিনীর
“তাদের কাছে খুব বেশি খাবার-দাবারও ছিল না। কিন্তু উদ্ধারের পর তাদের মাল্টা গ্রহণ করেনি। বরং দেশটির রেস্কিউ কো-অর্ডিনেশন সেন্টার তাদের মিশরে ফেরত যেতে বাধ্য করেছিল।”
গত ২৭ মে প্রকাশ্যে পুশব্যাক বা জোর করে ফেরত পাঠানোর চর্চা, অভিবাসী আটক কেন্দ্রগুলো মানবেতর জীবনযাপন এবং তাদের আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে মাল্টার সমালোচনা করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট।
মাল্টার অ্যাডিটাস মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের পরিচালক নিল ফালজন বলেন, “মানুষের জীবনকে রাজনৈতিক গুটি বানানোর যে অনুশীলন মাল্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা মেনে নেয়া যায় না।”
আরো পড়ুন: অভিবাসীদের মরদেহ শনাক্ত কেন কঠিন, করণীয় কী?
তিনি বলেন, “এত কিছুর পরেও কিছুই হয়নি ভাব নিয়ে থাকা মাল্টার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর হওয়ার সময় এসেছে। আমরা চাই, মাল্টা তার আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলুক।”
মানবপাচার বন্ধে লিবিয়ার সঙ্গে কাজ করতে ইইউকে মাল্টার তাগিদ
লিবিয়ার উপকূলে সবশেষ নৌকাডুবির প্রসঙ্গে মঙ্গলবার মাল্টিজ সরকারের মুখপাত্র এডওয়ার্ড মন্টেবেলো আনসাকে বলেন, এই ধরনের অপরাধ বন্ধ করতে ইউরোপের উচিত লিবিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা।
তিনি আরো বলেন, “এসব মৃত্যুর জন্য দায়ী অপরাধী নেটওয়ার্ক ও মানবপাচারকারীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”
টিএম/আরকেসি (আনসা)