টিউনিশিয়ায় চলমান অস্থিরতার কারণে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ বাড়তে পারে বলে শঙ্কা করছে ইইউ৷ ফাইল ছবি: রয়টার্স/জিহেদ আবিদেল্লাওই
টিউনিশিয়ায় চলমান অস্থিরতার কারণে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ বাড়তে পারে বলে শঙ্কা করছে ইইউ৷ ফাইল ছবি: রয়টার্স/জিহেদ আবিদেল্লাওই

টিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্টের অভিবাসন বিরোধী বক্তব্যের পর দেশটিতে শুরু হয়েছে অস্থিরতা৷ বাধ্য হয়ে অনেক অভিবাসী ফিরেও গেছেন নিজ দেশে৷ কিন্তু এই অস্থিরতার কারণে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷ তাই টিউনিশিয়ার চলমান রাজৈনতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ রেখেছেন তারা৷

বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইইউ মন্ত্রীপর্যায়ের এক বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, ‘‘টিউনিশিয়ার পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক৷ এটি অর্থনৈতিক বা সামাজিকভাবে যদি ভেঙে পড়ে তবে অভিবাসীদের নতুন ঢল ইউরোপে আসবে। আমাদের এই পরিস্থিতি এড়াতে হবে৷’’

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় বেলজিয়াম ও পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের শিগগিরই টিউনিশিয়া সফরের প্রস্তাব দিয়েছে ইইউ৷ 

আরো পড়ুন: সরকারের ‘দমনপীড়ন’, টিউনিশিয়া ছাড়ছেন অভিবাসীরা

গত সপ্তাহে টিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের অভিবাসন বিরোধী ও বর্ণবাদী বক্তব্যের সমালোচনা করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টও৷ দেশটির গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের কথা না ভেবে প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যের নিন্দাও জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট৷ ২০২১ সালের জুলাইয়ে টিউনিশিয়ার সংসদ ভেঙে দিয়ে ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ৷

স্বাধীন হলেও সুরক্ষিত নয় টিউনিশিয়া

সমালোচনায় খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না টিউনিশিয়ান প্রেসিডেন্ট৷ মঙ্গলবার এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, তার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারো হস্তক্ষেপ চায় না তার দেশ৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, টিউনিশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও সুরক্ষিত নয়৷ তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এ তথ্য জানিয়েছে৷

প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘‘আমরা কারো কাছে আমাদের স্বাধীনতা ছেড়ে দেব না৷ কারণ টিউনিশিয়াকে ফরাসি উপনিবেশ থেকে স্বাধীন ও মুক্ত হতে টিউনিশিয়ার নাগরিকেরা জেল খেটেছেন, স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন৷’’

উল্লেখ্য, ১৯৫৬ সালে ফরাসি উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয় টিউনিশিয়া৷ ২০ মার্চ দেশটি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে৷

আরো পড়ুন: প্রেসিডেন্টের ‘বর্ণবাদী ঘৃণামূলক মন্তব্য’, টিউনিশিয়া ছেড়ে পালাচ্ছেন অভিবাসীরা

দশকেরও বেশি সময় ধরে টিউনিশিয়ার সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে ইটালির৷ এ বছরের ২০ মার্চ টিউনিশিয়াকে ১৯০ কোটি ডলার ঋণ দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে সুপারিশও করেছে ইটালি৷ জর্জা মেলোনি প্রশাসন মনে করছে, তারল্য সংকটের কারণে টিউনিশিয়া আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে৷ ফলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ সামাল দিতে হবে ইটালিকে৷

টিউনিশিয়া ও ইতালি

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইটালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তোনিও তাজানি বলেছেন, ‘‘টিউনিশিয়ার স্থিতিশীলতা ও অর্থৈনিতক প্রবৃদ্ধির জন্য আইএমএফ-এর উচিত তাদের অতিসত্ত্বর আর্থিক সহায়তা দেয়া৷’’

টিউনিশিয়ায় রাজৈনিতক ও অর্থনৈতিক সংকট শুরু হলো, তখন থেকেই অভিবাসীরা দেশটি ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন৷ জানা গেছে, টিউনিশিয়া থেকে অনেক অভিবাসী ইটালি পৌঁছানোর চেষ্টায় আছেন৷ দেশটির উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকা সংখ্যায় লিবিয়ার উপকূলকে ছাড়িয়ে গেছে৷

আরো পড়ুন: অভিবাসী বিরোধী সহিংসতা: টিউনিশিয়ায় বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্ব কাঠামো স্থগিত

এ বছরের শুরু থেকে প্রায় ২০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী সমুদ্রপথে ইটালি পৌঁছেছেন৷ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, এ বছরের ২০ মার্চ পর্যন্ত টিউনিশিয়া থেকে সমুদ্র পথে ইটালি পৌঁছেছেন ১২ হাজার ১৩৪ অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ বিপরীতে লিবিয়া থেকে ইটালি পৌঁছেছেন সাত হাজার ৪৩১ জন৷ আর তুরস্ক থেকে গেছেন ৬৯৩ জন৷

বিশেষায়িত অংশীদার

‘দক্ষিণের অংশীদার’ হিসেবে একমাত্র টিউনিশিয়ার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলগত এবং কাঠামোগত চুক্তি রয়েছে। আর অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করাই সেই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০২২ সালে টিউনিশিয়াকে ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে রূপান্তরে রাজনৈতিক, আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা’ দেওয়া উচিত জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে ইইউ৷ এর আগে ২০১২ সালে নিজেদের মধ্যে ‘বিশেষায়িত অংশীদারত্ব’ ও বিশদ ‘কর্মপরিকল্পনা’ তৈরি করেছে টিউনিশিয়া এবং ইইউ৷

আরো পড়ুন: সাগর পাড়ি দিয়ে ইটালিতে টিউনিশিয়ার ফুটবলার

২০২১ সালের মে মাসে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইমার্জেন্সি ট্রাস্ট ফান্ড ফর আফ্রিকা (ইইউটিএফ) থেকে প্রায় নয় কোটি ১০ লাখ ইউরো অর্থ সহায়তার প্রস্তাব দেয়া হয় টিউনিশিয়াকে৷ এর মধ্য দিয়ে, অভিবাসন সংক্রান্ত জাতীয় কৌশলনীতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নে টিউনিশিয়ার সঙ্গে থাকতে চেয়েছিল ইইউ৷

টিউনিশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার জন্য ইইউর আরো অর্থ

২৩ ও ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে ইউরোপীয় কাউন্সিলের বৈঠক৷ বৈঠকের আগেই ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন জানিয়েছেন, টিউনিশিয়াসহ উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য অতিরিক্ত ১১ কোটি ইউরো দিতে প্রস্তুত ইইউ৷ এর মধ্য দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের যাতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷

টিএম/কেএম

 

অন্যান্য প্রতিবেদন