ফাইল ফটো: আলবেনীয়দের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে করা ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ লন্ডনে | ছবি: ইমেগো
ফাইল ফটো: আলবেনীয়দের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে করা ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ লন্ডনে | ছবি: ইমেগো

মনিকা মুলাইয়ের ছেলে আলবেনিয়ার একটি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন৷ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু তারপরই নাটকীয় এক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি৷ পরিবারকে জানালেন ঘর ছেড়ে ব্রিটেনে নতুন ভবিষ্যত গড়তে চান৷

‘‘আমরা তার সব অনুরোধই রাখতাম৷ তার বই, পোশাক, খাবার এবং কিছুটা বিনোদন - সব অনুরোধই,’’ বলেন মুলাই৷ আলবেনিয়ার বাইরাম চুরি শহরে স্কুল শিক্ষিকা তিনি৷ সেদেশের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল এটি৷ 

পাঁচ বছর পর তার সেই সন্তান এখন ব্রিটেনে দুটি কাজ করছেন এবং ঘরে ফেরার চিন্তা আর করছেন না৷ ‘‘আলবেনিয়া পেছনের দিকে ফিরে যাচ্ছে,’’ মায়ের কাছে অভিযোগ করেন তিনি৷ 

তার মতো আরো হাজার হাজার তরুণ আলবেনীয় ছোট্ট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন কাজের খোঁজে৷ আলবেনিয়ার দুর্বল অর্থনীতি তাদেরকে এই কাজে উৎসাহ যুগিয়েছে৷ 

২০১৮ সালে অনিয়মিত পথে মাত্র ৩০০ মানুষ ছোট্ট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে গিয়েছিলেন৷ ২০২২ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজারে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার আলোচনায় থাকা আলবেনিয়ার অনেক নাগরিক এসব যাত্রায় ছিলেন৷  

অন্যান্য অভিবাসীরা এসেছেন আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক এবং সিরিয়ার মতো দেশগুলো থেকে৷ ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের বিবেচনায় আলবেনিয়া একটি নিরাপদ রাষ্ট্র৷ ফলে সেদেশের নাগরিকদের ব্রিটেনে আশ্রয় পাওয়ার অধিকার সীমিত৷ 

আলবেনীয়দের কাছে নিজেদের প্রতিবেশি দেশ গ্রিস বা ইটালির চেয়েও ব্রিটেন বেশি লোভনীয় কারণ সেখানকার অর্থনীতি উন্নত এবং বেতনও বেশি পাওয়া যায়৷ অনেক আলবেনীয়র আবার পরিবারের সদস্যরা ব্রিটেনে থাকেন৷ বিশেষ করে বার্মিংহামে অনেক আলবেনীয় থাকেন৷ 

তবে ব্রিটেনে পৌঁছানো সহজ ব্যাপার নয়৷ অল্প কিছু আলবেনীয় বৈধপথে ভিসা নিয়ে দেশটিতে যেতে পারেন৷ কিন্তু বেশিরভাগই সাধারণত দালালদের পাঁচ থেকে ২০ হাজার ইউরো অবধি দিয়ে বিপজ্জনক অনিয়মিত পথে দেশটিতে যেতে চান৷ 

আলবেনীয়দের এই ব্রিটেনমুখী যাত্রা নিয়ে দুই দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে৷ 

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান গত নভেম্বর জানান যে আলবেনীয় আগমনের হার ব্যাপক আকারে বেড়েছে এবং তারা অবিবাহিত ও বয়সে তরুণ৷ এসব তরুণরা বিভিন্ন সংগঠিত অপরাধী চক্রের সদস্য বা মাদকসংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

ব্র্যাভারম্যান এমন দাবিও করেছেন যে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূল আক্রমণ করেছেন আশ্রয়প্রার্থীরা৷ তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন অনেকে৷ 

জবাবে, ব্রিটেন নিজের অভিবাসন নীতির ব্যর্থতা ঢাকতে আলবেনীয়দের ‘বলির পাঁঠা’ বানাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বলকান দেশটির প্রধানমন্ত্রী এডি রামা৷ তিনি ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এধরনের দায় দেয়াকে ‘‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’’ কাজ এবং ‘‘সহজ বাগাড়ম্বরপূর্ণ উক্তি’’ বলে আখ্যা দিয়েছেন৷  

এআই/আরকেসি (এপি)


 

অন্যান্য প্রতিবেদন