ইটালির দক্ষিণ উপকূলে মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে ফেরা অভিবাসীদের কাছ থেকে অপরিশোধিত অর্থ আদায়ে চাপ দিচ্ছে মানবপাচারকারীরা। ছবি: রয়টার্স/রেমো ক্যাসিলি
ইটালির দক্ষিণ উপকূলে মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে ফেরা অভিবাসীদের কাছ থেকে অপরিশোধিত অর্থ আদায়ে চাপ দিচ্ছে মানবপাচারকারীরা। ছবি: রয়টার্স/রেমো ক্যাসিলি

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ইটালির দক্ষিণ উপকূলে ডুবে যায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি নৌকা। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮৮ জন। সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় যারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে অপরিশোধিত অর্থ আদায়ে চাপ দিচ্ছে মানবপাচারকারীরা।

চলতি সপ্তাহে ওই দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের একজন আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে প্রাথমিক তদন্ত বিষয়ক বিচারকের কাছে এসব কথা বলেছেন।

আরকে নামের ওই ব্যক্তি ২১ মার্চ দক্ষিণ ইটালির একটি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। শুনানির সময় তিনি বলেন, তুরস্কের ইজমির থেকে ইটালি পৌঁছাতে যারা ওই নৌকাটির ব্যবস্থা করেছিল, তারা এখন তাদের পাওনা অর্থ আদায়ের জন্য আমাদের উপর চাপ দিচ্ছে। ওই ঘটনায় কে মারা গিয়েছে, কারা স্বজন হারিয়েছে এসব নিয়ে তারা ভাবতে চায় না। পাচারকারীদের দাবি, অপরিশোধিত অর্থ মিটিয়ে দিতে হবে। 

আরো পড়ুন: ইটালি: জাহাজডুবির পর মৃতের সংখ্যা বাড়ছে

আদালতকে তিনি আরো বলেন, নৌকা পারাপারের জন্য তার কাছে ৮,৩০০ ইউরো দাবি করা হয়েছে।

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সাহায্য চাইতে দেয়নি পাচারকারীরা

আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে নৌকাডুবির আগে এবং দুর্ঘটনার সময় কী ঘটেছিল, তার একটি বর্ণনা দিয়েছেন আরকে।

তিনি বলেন, নিরাপত্তাবাহিনীর চোখ এড়াতে রাতের বেলা নৌকাটি নিয়ে ইটালি পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছিল পাচারকারীরা। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আপত্তির পরেও ২৫ ফেব্রুয়ারি মাঝ সমুদ্রে এসে নৌকাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ তাদের লক্ষ্য ছিল সমুদ্রে অন্ধকার নামলেই তারা আবার রওনা হবে।

আরকে আদালতের কাছে আরো বলেন, নৌকায় উঠার পর সব যাত্রীদের কাছে থাকা ফোন নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় পাচারকারীরা। তবে তীরে পৌঁছানোর সময় হয়ে এলে তা আবার তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়।

আরো পড়ুন: দক্ষিণ ইটালিতে অভিবাসী নৌকাডুবি: গ্রেপ্তার ৪

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে তাদের নিজস্ব মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দেওয়া হলেও নৌকায় একটি স্ক্র্যাম্বলার (কম্পাঙ্ক দিয়ে ফোনালাপ বিঘ্নিত করার যন্ত্র) চালু করা ছিল বলে জানান আরকে। ফলে দুর্ঘটনার সময় সাহায্য চেয়েও কোনো বার্তা দেওয়া সম্ভব ছিল না তাদের পক্ষে। 

এমনকি নৌকাটি উপকূলের কাছাকাছি চলে আসার পর যাত্রীদের জোরাজুরি পরেও পাচারকারীরা কর্তৃপক্ষকে কোনো সতর্ক বার্তা পাঠাতে রাজি হয়নি বলেও দাবি করেন এই সাক্ষী।

তিনি দাবি করেন, উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে কিছু আলো দেখতে পেয়ে ভয় পান পাচারকারীরা। উপকূলরক্ষীদের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে দ্রুত নৌকার দিক বদলে ফেলেন তারা। তখনই নৌকাটি ঢেউয়ের কবলে পড়ে এবং একপাশে হেলে পড়ে। তারপর ডুবে যায়।

আরো পড়ুন: ইটালি: নৌকাডুবি থেকে বেঁচে ফেরাদের পাশে ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন

সাক্ষ্য দেয়ার সময় আরকে আরো বলেন, ২০ থেকে ৩০ মিনিট সাঁতার কেটে প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি।

১৭ বছর বয়সি অপ্রাপ্তবয়স্ক এক সন্দেহভাজন পাচারকারীর বিরুদ্ধে এই প্রাক-বিচার শুনানি শুরু হয়েছে৷ এটি চলবে আরো কয়েকদিন। আর ক্রোটোনে শুরু হতে পারে দলের অন্যান্য সন্দেহভাজন পাচারকারীদের প্রাক-বিচার শুনানি। 

ইটালির উপকূলে থেমে নেই নৌ দুর্ঘটনা

২৬ ফেব্রুয়ারির এই নৌকাডুবিকে সাম্প্রতিক সময়ে ইটালীয় উপকূলের কাছে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও, নিঁখোজ রয়েছেন আরো অনেক যাত্রী। এখন পর্যন্ত ৮৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সবশেষ গত ২১ মার্চ ৩০ বছর বয়সি এক ব্যক্তির মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: ইটালিতে নৌকাডুবি: স্মৃতিচিহ্ন খুঁজছেন নিহতের স্বজনরা

দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে ৩০টিরও বেশি শিশু। পাকিস্তানি ক্রীড়াবিদ এক মা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানের চিকিৎসার কারণে পাড়ি জমান ওই নৌকায়৷ মারা গিয়েছেন তিনিও। এছাড়াও মৃতদের মধ্যে রয়েছেন এক আফগান নারী সাংবাদিক৷ তালেবান শাসন থেকে বাঁচতে পরিবারের সঙ্গে পালিয়ে আসছিলেন তিনি।

টিএম/আরকেসি (আনসা)

 

অন্যান্য প্রতিবেদন