ভূমধ্যসাগরে একটি নৌকা থেকে বিপদগ্রস্ত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারে বাধা দিতে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা ফাঁকা গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে উদ্ধারকারী জাহাজ ওশ্যান ভাইকিং৷ তারা বলেছে, সমুদ্রে উদ্ধার কাজের সময় তাদের কাজ বন্ধ করতে হুমকি দিয়েছে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা৷ এ ঘটনায় ত্রিপোলির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ভূমধ্যসাগরে একটি নৌকা থেকে বিপদগ্রস্ত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারে বাধা দিতে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা ফাঁকা গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে উদ্ধারকারী জাহাজ ওশ্যান ভাইকিং৷ তারা বলেছে, সমুদ্রে উদ্ধার কাজের সময় তাদের কাজ বন্ধ করতে হুমকি দিয়েছে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা৷ এ ঘটনায় ত্রিপোলির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এ ঘটনার জেরে ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূল ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে। দক্ষিণ ফ্রান্সের মার্সেই ভিত্তিক এই ইউরোপীয় এনজিওটি শনিবার লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি এনেছে।
সংস্থাটি দাবি করেছে, সমুদ্রে ঝুঁকিতে পড়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিষয়ে প্ল্যাটফর্ম অ্যালার্ম ফোন বার্তা পাঠালে, তাদের উদ্ধারে নৌকার দিকে এগোতে থাকে ওশ্যান ভাইকিং। এ সময় উদ্ধারকারী জাহাজটিকে হুমকি দেয় লিবিয়ার কোস্টগার্ড।
আরও পড়ুন>> ভূমধ্যসাগরে মানবপাচারে রুশ ‘ওয়াগনার’ গ্রুপের প্রভাব নেই
ওশান ভাইকিং জানিয়েছে, “ভিএইচএফ-এর মাধ্যমে লিবিয়ার কোস্টগার্ডের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের সবরকম চেষ্টা করা হয়৷ কিন্তু তাদের সাড়া মেলেনি৷ উল্টো ঘটনাস্থলে উপস্থিত লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করেন৷ তারা এক পর্যায়ে বেশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি চালায়।”
এসওএস মেডিটারানের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা একটি ভিডিও যাচাই করেও গুলির ছোঁড়ার সত্যতা পাওয়া গেছে৷
এ সময় উদ্ধারকারী জাহাজটির একজন সদস্য লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের উদ্দেশ করে বলেন, “ওশ্যান ভাইকিং এই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে, আমাদের গুলি করবেন না। আমরা আন্তর্জাতিক জলসীমায় আছি, আপনারা আমাদের গুলি করতে পারন না।”
এক পর্যায়ে ওশ্যান ভাইকিং তার পূর্ণ গতিতে ওই স্থান ছেড়ে চলে যায়। তখনও লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা গুলি চালাতে থাকে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় এনজিওটি।
এনজিওটি আরও জনায়, একটি নড়বড়ে নৌকায় থাকা ৮০ জন অভিবাসীকে লিবিয়া কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে উপকূলে ফেরত পাঠায়৷
পড়ুন>> লিবিয়ার আটককেন্দ্রে পাঁচ হাজারের বেশি অভিবাসী: আইওএম
ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকালেও ওশ্যান ভাইকিংকে ফের তাড়া করে লিবিয়া কর্তৃপক্ষ। দেশটির উপকূলরক্ষীদের কয়েকটি স্পিডবোট জাহাজটিকে কয়েক ঘন্টা ধরে দ্রুত গতিতে তাড়া করে, আরও উত্তর দিকে যেতে বাধ্য করে।
এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে সমুদ্রে বিপদগ্রস্ত অভিবাসীদের উদ্ধার করতে বেগ পেতে হচ্ছে ওশ্যান ভাইকিংসহ অন্যসব উদ্ধারকারী জাহাজকে৷
ইইউর প্রতিক্রিয়া
ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷ সোমবার ইইউর কূটনৈতিক প্রধান জোসেপ বোরেলের মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো ইইউ কমিশনের ব্রিফিং করেন৷
তিনি বলেন, “কী ঘটেছে এবং কেন এটি ঘটেছে, সে সম্পর্কে আমরা লিবিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত একটি স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইব।”
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের ব্যবহার করা জাহাজটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে কেনা হয়েছিল কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ কারণ বেশ কয়েক বছর ধরে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের কারিগরি সহায়তা, সরঞ্জাম এবং জাহাজ সরবরাহ করে সহযোগিতা করে আসছে ইইউ৷
ইইউ সদর দপ্তর ব্রাসেলস বলছে, এই চুক্তির লক্ষ্য ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের জীবন বাঁচানো৷ কিন্তু এনজিও এবং জাতিসংঘ লিবিয়া ও ইইউর এই সহযোগিতা চুক্তির নিন্দা জানিয়ে আসছে।
পড়ুন>> ৪ বছরে ভূমধ্যসাগরে ৮ হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু
তাদের মতে, অভিবাসীদের জোর করে ফিরিয়ে নিয়ে চরম নির্যাতনের মুখোমুখি করে লিবিয়া৷
লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের বিরুদ্ধে অধিকার কর্মী এবং অভিবাসীদের হুমকি ও বাধা দেওয়ার অভিযোগ এটিই প্রথম নয়।
মেলোনির প্রতি আহ্বান
লিবিয়ার সঙ্গে সমস্যা তো আছেই৷ কিন্তু ভূমধ্যসাগর হয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রধান গন্তব্যস্থল ইটালির সঙ্গেও চলছে এনজিওগুলোর সাপে নেউলে সম্পর্ক।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারে কাজ করা জাহাজগুলোকে একসঙ্গে একাধিক অভিযান পরিচালনা করতে পারবে না জানিয়ে ডিক্রি জারি করেছে ইটালি৷ এ নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছেন ইটালির কট্টর ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি।
উদ্ধার সংস্থা এসওএস মেডিটারানে সোমবার এক বিবৃতিতে জর্জা মেলোনি এবং প্রেসিডেন্ট সার্জিও ম্যাটারেলার প্রতি ‘এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধের’ আহ্বান জানিয়েছে৷
গত রোববার থেকে সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর টানা অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে রোমের প্রতি এই আবেদন জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন>> ছয় লাখের বেশি অনিয়মিত অভিবাসী লিবিয়ায়, অঙ্গ পাচারের অভিযোগ
ইটালি সরকারের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে আরো জানানো হয়েছে, “আসুন আমরা সমুদ্রে যতটা সম্ভব প্রাণ বাঁচাতে সহযোগিতা করি। আসুন আমরা জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে একটি যৌথ সহযোগিতা পরিকল্পনা তৈরি করি। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে প্ররোচিত করতে পারে। এই ইস্যুতে একটি সমন্বিত উদ্ধার কার্যক্রম স্থাপন করা জরুরি৷ সামনের গ্রীষ্মে সমুেদ্রর পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷’’
এমএইউ/টিএম (ইনফোমাইগ্রেন্টস, আনসা)