লিবিয়ায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। এসব অপরাধের জন্য দেশটির নিরাপত্তা ও সশস্ত্রবাহিনীকে দায়ী করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিবাসীদের টার্গেট করে যেসব অপরাধ করা হয়েছে, তার দায় এড়াতে পারে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের তদন্তকারীরা বলেছেন, “অভিবাসীদের পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, যার অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।”
সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশটিতে যৌন দাসত্বের প্রমাণ রয়েছে তাদের কাছে।
আরো পড়ুন: ভূমধ্যসাগরে উদ্ধারকারী জাহাজ লক্ষ্য করে লিবিয়ার গুলি, ব্যাখ্যা চাইবে ইইউ
তদন্তকারী দলের নেতৃত্বে থাকা মোহাম্মদ আউজার বলেন, “এসব ঘটনায় অবশ্যই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।”
ইইউ সহযোগিতা উসকে দিয়েছে উপকূলরক্ষীদের
তদন্তকারীরা বলেছেন, “লিবিয়া জুড়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা নির্বিচারে আটক, গুম, দাসপ্রথা, যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়েছেন। এবস অভিযোগ বিশ্বাস করার যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।”
আর এসব অপরাধ সংগঠনের ক্ষেত্রে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের দিকেই মূলত ইঙ্গিত করেছেন তদন্ত দল।
তদন্তকারী দলের এক সদস্য চালোকা বেয়ানি বলেন, “অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পুল-ব্যাক, পুশব্যাক এবং বাধা দিতে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের দেওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা ও সমর্থন তাদেরকে মানবাধিকার লংঘনের মতো অপরাধের দিকে উৎসাহিত করেছে।”
আরো পড়ুন: লিবিয়ায় অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা
তিনি আরো বলেন, “আপনি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনিরাপদ এলাকায় ঠেলে দিতে পারেন না। আর আপনাদের অবশ্যই জানা আছে, লিবিয়ার জলসীমা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।”
এমনকি লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের সঙ্গে মানবপাচারকারী চক্রের “ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ” রয়েছে বলেও উঠে এসেছে জাতিসংঘ সমর্থিত তদন্ত প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, অনিয়মিত অভিবাসীদের ওপর নির্যাতন, নানা কৌশলে অর্থ আদায় উপকূলরক্ষীদের ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘনে উৎসাহ যুগিয়েছে।
বেয়ানি আরো বলেন, লিবিয়ায় সংগঠিত যুদ্ধাপরাধের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন দায়ী নয়, তবে তাদের দেওয়া সমর্থন অপরাধের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করেছে।
আরো পড়ুন: ছয় লাখের বেশি অনিয়মিত অভিবাসী লিবিয়ায়, অঙ্গ পাচারের অভিযোগ
ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো অবশ্য তদন্ত দলের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “লিবিয়ার উপকূলরক্ষী বা দেশটির অন্য কোনো সত্তাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অর্থায়ন করেনি।”
পিটার স্ট্যানো বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তার উদ্দেশ্য ছিল দেশটির উপকূলরক্ষীদের কর্মদক্ষতার উন্নয়ন।
অপরাধের অকাট্য প্রমাণ
বছর তিনেক আগে ‘ইউএন ইনডিপেনডেন্ট ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন অন লিবিয়া’ নামে তদন্ত দলটি গঠন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে মানবাধিকার লংঘনের প্রকৃত চিত্র তুলে আনা।
তদন্ত দল জানিয়েছেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি অভিবাসনপ্রত্যাশী ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ শতাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে তৈরি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: লিবিয়ার আটককেন্দ্রে পাঁচ হাজারের বেশি অভিবাসী: আইওএম
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও অভিবাসীরা ছিলেন প্রধান লক্ষ্যবস্তু, কিন্তু সাধারণ লিবীয় নাগরিকদেরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অত্যাচার, নির্যাতন সইতে হয়েছে। কারণ, নাগরিক সমাজের ভিন্নমত দমনের চেষ্টা করেছিল লিবিয়া কর্তৃপক্ষ।
তদন্তকারীরা বলেছেন, তাদের তদন্তে উঠে আসা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো হবে।
টিএম/এমএইউ