অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে ইউরোপের সীমান্ত নজরদারি বাড়ানোর বিরোধিতা করে আঁকা গ্রাফিতি। ফাইল ছবি: মার্কো আলপৎসি/পিকচার অ্যালায়েন্স/এপি
অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে ইউরোপের সীমান্ত নজরদারি বাড়ানোর বিরোধিতা করে আঁকা গ্রাফিতি। ফাইল ছবি: মার্কো আলপৎসি/পিকচার অ্যালায়েন্স/এপি

অভিবাসন ও মানবাধিকার ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব দ্বৈত নীতি গ্রহণ করেছে বলে মনে করছে অধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মঙ্গলবার ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। সেখানে তারা বলেছে, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর এই দ্বৈত নীতি আরো স্পষ্ট হয়েছে।

ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপের অবস্থানের প্রশংসা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা বলেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের এক সপ্তাত না পেরোতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর ইউক্রেনে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। একইসঙ্গে, অন্যান্য দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জোর করে ফেরত পাঠানো, সীমান্তের নির্যাতনের সমালোচনাও করেছে অধিকার সংস্থাটি।

আরো পড়ুন: আশ্রয়ে ‘দ্বৈতনীতি’: ইইউর সমালোচনায় সেভ দ্য চিলড্রেন

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গণমাধ্যম কর্মকর্তা অ্যালিসন আব্রাহামস ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “আমাদের বার্ষিক প্রতিবেদনের মূল বার্তা হলো, সার্বজনীন মানবাধিকার কেমন হওয়া উচিত, বিশেষ করে শরণার্থীদের ক্ষেত্রে তা তুলে ধরা।”

ইউক্রেনের পাশে ইউরোপ

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পরই দেশটির নাগরিকদের অস্থায়ী সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত হয়ে ওঠে ইউরোপ। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ৮০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় নাগরিককে অস্থায়ী সুরক্ষা দিয়েছে ইউরোপ। আর গেল বছর থেকে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় অন্তত ৬৩ কোটি ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ ছাড়াও ইউক্রেনের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে নরওয়ে, তুরস্ক, উত্তর মেসিডোনিয়া, আইসল্যান্ড এবং সার্বিয়া।

আরো পড়ুন: ‘বৈষম্য’, ইউক্রেনীয়দের আশ্রয়কেন্দ্র দখল করে প্যারিসে বিক্ষোভ অভিবাসীদের

আব্রাহামস বলেন, “ইউক্রেনের ধ্বংসাত্মক আক্রমণের পর, দেশটি থেকে আসা শরণার্থীদের নিরাপত্তায় বাসস্থান, সামাজিক সহায়তা নিশ্চিত করেছে ইউরোপের দেশগুলো। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়।”

তিনি আরো বলেন, “একই সময়ে অন্যদিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, ইইউ সীমান্তে জোরপূর্বক পুশব্যাক, সহিংসতা, নির্বিচারে আটক চলছে। যা বৈষম্যকে স্পষ্ট করে।”

বন্ধ করতে হবে বায়োমেট্রিক নজরদারি

ইউরোপীয় সীমান্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই পরিচালিত বায়োমেট্রিক নজরদারি এবং ফেসিয়াল রিকগনিশনের মতো প্রযুক্তি বন্ধ করার জোর দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি। এই সরঞ্জামগুলোর মধ্য দিয়ে মানুষকে জাতিগত বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে বলেও মনে করে তারা।

আরো পড়ুন: উপেক্ষিত অ্যালার্ম, অভিবাসীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে মাল্টা

ইইউর অভিবাসন নীতিতে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আব্রাহামস বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ফেস রিকগনিশন টুলের মাধ্যমে ইরান এবং রাশিয়ার মতো দেশে ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং ট্র্যাক করা সম্ভব। এমনকি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, দেশ ছেড়ে আসা ইরানিদের ছবি অনলাইনে বিলি করা হয়েছিল। ফলে তাদের ফেরত পাঠানো মানে আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলা।”

তিনি বলেন, “সবার আশ্রয় চাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু জাতীয়তার ভিত্তিতে ফেরত পাঠানো গ্রহণযোগ্য নয়। আশ্রয়প্রার্থীদের সবার প্রতি আমাদের মানবিক আচরণ করা প্রয়োজন। কারণ, আশ্রয় চাওয়া বেআইনি কিছু নয়।”

টিএম/এমএইউ

 

অন্যান্য প্রতিবেদন