অভিবাসনের উদ্দেশ্যে ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার পথে পুলিশ বা সীমান্তরক্ষীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন অভিবাসীরা৷ দ্য কাউন্সিল অব ইউরোপ’স কমিটি ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড টর্চারের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে৷
সোমবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপের বহিঃসীমান্তের দেশগুলোর পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীরা সীমান্ত পাড়ি দিতে চাওয়া অভিবাসীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে থাকে৷ চড়, ঘুষির মতো শারীরিক নির্যাতন করে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয় বলে জানায় প্রতিবেদনটি৷
‘অমানবিক আচরণ করা হয়’
ঠিক কতগুলো এমন ঘটনা ঘটেছে কিংবা সীমান্তের ঠিক কোনো অঞ্চলগুলোতে এসকল ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত প্রকাশ করেনি সংস্থাটি৷ তবে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা অভিবাসীদের প্রতি এমন অনেক আচরণের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পেয়েছে৷
ঘটনার তদন্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পৌঁছানোর বহুল ব্যবহৃত পথগুলোতে হওয়া পুশব্যাকের ঘটনায় নজর রেখেছে সংস্থাটি৷ এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত, বলকান রুট এবং ভূমধ্যসাগর৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পুশব্যাকের সময় তাদেরকে চড় মারা, লাঠি দিয়ে আঘাত করার মতো অমানবিক আচরণ করছে সীমান্ত পুলিশ৷ তাছাড়া মাটিতে বসে থাকা অবস্থায় তাদের শরীরের পাশে গুলি করা কিংবা ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও পাওয়া গেছে৷ নদীতে ফেলে দেওয়ার সময় কখনো কখনো হাত বাধা থাকে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়৷
পড়ুন: অভিবাসন নিয়ে ইউরোপের দ্বৈত নীতি, অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন
তাছাড়া সীমান্তের কর্মকর্তারা অভিবাসীদের কাপড় ও জুতো খুলে ফেলতে জোর করা, খালি পায়ে হাঁটতে বাধ্য করা, শুধু অন্তর্বাস পড়ে সীমান্তে হাঁটানো এবং কখনো কখনো খালি গায়ে সীমান্তে হাঁটানোর মতো ঘটনার কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়৷ তাছাড়া অভিবাসীদের গায়ে কুকুরের কামড়ের চিহ্নও পেয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি৷
মূলত লগবুক, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ছবি পর্যালোচনা- এসব প্রমাণাদি সংগ্রহ করে সংস্থাটি৷
‘অবশ্যই পুশব্যাক বন্ধ করতে হবে’
দ্য কাউন্সিল অব ইউরোপ’স কমিটি ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড টর্চারের প্রধান অ্যালান মিচেল বলেন, ‘‘ইউরোপের অনেক দেশকেই তাদের সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিষয়ে জটিল পরিস্থিতি সামলাতে হয়৷ তবে তার মানে এই নয় যে, তারা মানবাধিকারের বিষয়টি উপেক্ষা করবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘পুশব্যাক করা বেআইনি, অপ্রাত্যাশিত এবং অবশ্যই এটি বন্ধ করতে হবে৷’’
কমিটির পক্ষ থেকে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদেরকে চিকিৎসার সুযোগ, তাদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা যাচাই করার এবং তারা যেন আশ্রয়ের আবেদন করতে পারে- তা নিশ্চিত কারার আহ্বান জানানো হয়৷
পড়ুন: লাটভিয়া সীমান্তে নির্যাতনের শিকার অভিবাসীরা
একই সাথে আটকের পর অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যেন অসদাচরণের শিকার না হন এবং তারা যেন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়৷ তাছাড়া আটকের সংখ্যার সঠিক হিসেব রাখারও আহ্বান জানানো হয়৷
গত কয়েরক বছর ধরে ইউরোপে আসা শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন বাড়ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স জানায়, ২০২২ সালে তিন লাখ ৩০ হাজার আশ্রয়প্রার্থী ইউরোপে বিভিন্ন দেশে এসেছেন৷ এই সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় দুইগুণ বেশি৷
আরআর/এসিবি (এএফপি)